Home Blog Page 3

বৈষম্য নিরসনে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চান সমতলের আদিবাসীরা

ভারতের সীমান্তঘেঁষা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীঅধ্যুষিত জেলা শেরপুর। এখানে গারো পাহাড় এবং তার আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। কিন্তু, সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা তেমন ভালো নয়। চিকিৎসাসেবার জন্য নেই কোনো ক্লিনিক। শত বছরের কৃষি পেশা ছেড়ে এখনো তারা বিকল্প আয়ের কোনো উৎস সৃষ্টি করতে পারেননি। মূলত, উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে পিছিয়ে পড়ার কারণে সবার থেকে পৃথক চলতে পছন্দ করেন তারা। তাই, নিজেদের এগিয়ে নিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতাদের দাবি, আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যেন তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়।

জানা গেছে, ১৩৬৩.৭৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শেরপুর জেলায় প্রায় ১৬ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে কোচ, হাজং, বানাই, হদি ও গারো জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। এদের মধ্যে গারো ২৬ হাজার, বর্মন ২২ হাজার, হদি ৩৫০০, কোচ ৪ হাজার, ঢালু ১৫০০, হাজং ৩ হাজার ও বানাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১৫০ জন মানুষ বসবাস করছেন। যদিও মোট হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ফারাক রয়েছে। ওইসব এলাকায় দাতা সংস্থাগুলোর অর্থায়নে দুই-একটি স্কুল থাকলেও সেটা অপ্রতুল।

সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্ষুদ্র এসব নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও তাদের তৈরি বিখ্যাত কিছু শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। অর্থাভাবে সেগুলো ধরে রাখতে পারছে না তারা। যেমন- কোচদের তৈরি তাঁত শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। গারোদের তৈরি মাছ ধরার চাই, খালই, টেডা, কুলা, চালুন, ঘুটনি, ঝাড় এখন তৈরি কমে যাচ্ছে।

প্রবীণ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতা ডা. সৃতি কুমার বলেন, আমরা সমাজের সব চেয়ে অবহেলিত মানুষ। আমাদের চলাচলের রাস্তার খুবই খারাপ অবস্থা। এতোটাই খারাপ যে, একজন গর্ভবতী নারীকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হলে রাস্তায় তারা বাচ্চা হয়ে যায়। পাহাড়ি জনপদে সমতলের মানুষের ১০ ভাগ সুবিধাও পৌঁছায়নি।

আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প (আইইডি) এর ফেলো সুমন্ত বর্মণ বলেন, আমাদের শেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় বসবাস করে। তারা যেসব এলাকাগুলোতে বসবাস করে সেখানে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বিশেষ করে রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও ক্লিনিক নেই। সেখানকার মানুষরা কয়েক প্রজন্ম থেকে একই পেশা ধরে রেখেছেন। কোনো নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে জীবন যাত্রার মান বাড়েনি।

সমস্যা দূর করতে বিশেষ বরাদ্দ ছাড়া কোনো উপায় নেই। সরকার আমাদের মতো বিশেষ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না। তাই আসন্ন বাজেটে আমাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ চাই।

বাংলাদেশ ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার জাতীয় সংসদে বাজেট পাশ করবেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি সমতল অঞ্চলে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছেন তাদের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেটে কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আমরা মনে করি, এটা বৈষম্যমূলক আচরণ। আমরা সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাবো, সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনমান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হোক।

শেরপুর নাগরিক প্লাটফর্ম জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসলে তাদের (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) দাবি যৌক্তিক। আমাদের দেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু, পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী উন্নয়নের স্রোতে আসতে পারেনি। এরা দিনদিন আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। এদের পিছিয়ে যাওয়ার অন্যমত কারণ রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এদের মূল সমস্যা হচ্ছে শিক্ষা ও কাজের অভাব। এই বিষয়গুলোতে রাষ্ট্রের আলাদাভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। তাদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের আলাদা বাজেট প্রয়োজন। যাতে তারা সামনের দিকে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।

শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য এলাকাগুলোতে আলাদা বরাদ্দ থাকলেও আমাদের এখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগণের জন্য তেমন কোনো বরাদ্দ নেই। সমতলের এই জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে বাজেটে আলাদা বরাদ্দের ব্যাপারে অবশ্যই জাতীয় সংসদে কথা বলবো।

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট সোর্স লিংক।।

হিন্দু-মুসলিম বিবাহ বৈধ নয়: ভারতীয় আদালত

মুসলিম আইনে হিন্দু-মুসলিমের বিয়ে বৈধ নয়। এমনকি ভারতের বিশেষ বিবাহ আইনে সম্পন্ন হলেও এই বিয়ে অবৈধ। ইসলামি আইনে এই ধরনের বিবাহকে বৈধতা দেয়া হয়নি। গত ২৭ মে এমন এক রায় দিয়েছে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের হাইকোর্ট।

ঐ যুগল ১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইনে অন্তর্ধর্মীয় বিবাহের স্বীকৃতি চেয়েছিলেন। তাতে সম্মতি দেয়নি আদালত। আদালতের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া যুগলের আবেদনও খারিজ করে দেয়া হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের বিচারপতি গুরপাল সিংহ আহলুওয়ালিয়ার পর্যবেক্ষণ, বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে কোনো মুসলিম যুবকের সাথে হিন্দু তরুণীর বিয়ে হলেও ইসলামি আইনে ওই বিবাহকে ‘অনিয়মিত’ বলে উল্লেখ করা হবে।

বিচারক বলেন, ‘মোহাম্মদি আইন অনুযায়ী, একজন মুসলিম যুবকের সঙ্গে যদি মূর্তিপূজারী কিংবা অগ্নি উপাসক কোনো নারীর বিয়ে হয় তবে এটি বৈধ নয়। এমনকি এটি দেশের বিশেষ বিবাহ আইনে অনুষ্ঠিত হলেও নয়। এই বিয়েকে তখন অনিয়মিত বা ‘ফাসাদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।’

প্রেমের পর বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া ভারতের মধ্যপ্রদেশের মুসলিম যুবক সাফি খান ও হিন্দু তরুণী সারিকা সেন পুলিশি নিরাপত্তা দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন।

পরে আদালত তাদের বিয়ের আবেদন বাতিল করে দেয়। এমনকি পুলিশি সুরক্ষায় বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের আবেদনও খারিজ করে। ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময় সূত্রে জানা যায়, সাফি খান ও সারিকা সেন একে অপরকে ভালোবেসে ছিলেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিয়ে করার।

কিন্তু, বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের ধর্ম। কেউ নিজের ধর্ম পরিবর্তন করতে চাননি। দুই জন দুই ধর্মে থেকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। হিন্দু যুবতীর পরিবার এই বিয়েতে বেঁকে বসেন। কোনও ভাবেই মুসলিম যুবকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হোক, সেটা কোনও ভাবেই চাননি তারা। পরে তারা আদালতের দাড়স্থ হন।

মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতে জানান, বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে হলে ইসলামি আইন সে ক্ষেত্রে আর প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ব্যক্তিগত আইনে কোনো বিষয়ে নিষেধ থাকলে বিশেষ বিবাহ আইন প্রযুক্ত হতে পারে না।

বিচারক গুরপাল সিংহ আহলুবালিয়া বলেন, ভারতে মুসলিম নাগরিকদের জন্য কিছু বিষয়ে ‘স্বতন্ত্র মুসলিম আইন’ রয়েছে। এই আইনের অধীনে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বিয়ে, উত্তরাধিকার ও দান-অনুদানের ক্ষেত্রে নিজস্ব ধর্মীয় পথ অনুসরণ করেন। এ সব মুসলিম আইন কোনো মুসলিম ব্যক্তির সঙ্গে কোনো অগ্নি উপাসকের বিয়েকে অনুমোদন করে দেয় না।

আদালতের শুনানিতে সাফি এবং সারিকা জানান, তারা ভারতে প্রচলিত বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এই আইনটি আলাদা দুটি ধর্মের মানুষদের মধ্যে বিয়ের স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু দুই পরিবারের হুমকির মুখে শেষ পর্যন্ত এভাবে বিয়ে করতে ব্যর্থ হন তারা। এ অবস্থায় বিয়ে নিবন্ধনের পূর্ব পর্যন্ত আদালতের কাছে নিরাপত্তা দাবির পাশাপাশি দুই পরিবারের দায়ের করা কয়েকটি মামলা থেকে রেহাই পেতে আবেদন করেন সাফি ও সারিকা।

ওই প্রেমিক যুগলের আইনজীবী জানান, আদালতের কাছে ওই প্রেমিক যুগল দাবি করেন, বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিয়ের পর তারা ধর্মান্তরিত হবেন না। সারিকা হিন্দুই থেকে যাবেন, আর সাফি মুসলিম। একে অপরের ধর্মীয় আচারের ওপর তারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবেন না। এ ক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্র মুসলিম আইনকে অমান্য করবেন।

তাদের আইনজীবী আদালতে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের জন্য ম্যারেজ অফিসারদের সামনে পুলিশি সুরক্ষার দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। যদিও তা খারিজ করে দেয় আদালত।

এদিকে বিয়ের আবেদনের বিরোধিতা করে সারিকার পরিবারের দাবি, তাদের কন্যা স্বর্ণ গয়না ও নগদ অর্থ নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। আর দুই ধর্মের মধ্যে এই বিয়ে সম্পন্ন হলে সামাজিকভাবে তারা একঘরে হয়ে পড়বে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ও এই সময়

নওগাঁ ঘোষপাড়া কালী মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা

দৈনিক বিজয় নিউজ নওগাঁ প্রতিনিধিঃ

নওগাঁ সদরের চোয়ারপুর ঘোষপাড়া এলাকায় শ্রী শ্রী কালী মন্দিরের কালী প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দ্রুত প্রতিমা বিসর্জন দিতে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে পুুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রতিমা ভাংচুরের দ্রুত বিচার দাবি জানানোর পাশাপাশি সনাতনীলম্বীদের (হিন্দু) মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসী ও মন্দির কমিটির নেতারা বলেন, সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের চোয়ারপুর মোড়ে চেয়ারপুর সার্বজনীন শ্রী শ্রী কালীমন্দিরে রোববার রাতের আঁধারে কে বা কারা মন্দিরের বাঁশের বেড়ার দরজা সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে কালী প্রতিমা ভাঙচুর করে। দুর্বৃত্তরা কালী প্রতিমার গলার অংশ থেকে মাথা কেটে নিয়ে চলে গেছে। সোমবার সকালে স্থানীয় এক নারী মন্দিরে পূজা দিতে এসে প্রতিমা ভাঙচুর দেখতে পেয়ে মন্দির কমিটির লোকজনকে জানান। পরে মন্দিরে এসে সবাই এ ঘটনা দেখতে পান। তবে কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা শনাক্ত করতে পারেনি কেউ।

চোয়ারপুর কালী মন্দির কমিটির সভাপতি ভবেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা তা জানি না। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার জানার পরপরই সোমবার সকালে বিষয়টি আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশকে জানিয়েছি। ঘটনা জানার পর ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে গতকাল সোমবার সারা দিন এ ব্যাপারে পুলিশকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। পুলিশের কেউ মন্দির পরিদর্শনেও আসেনি।

তবে আজকে ঘটনাটি স্থানীয় কিছু গণমার্ধমকর্মীরা জানার পর প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন দিলে আজ মঙ্গলবার দুপূরে পুলিশের কয়েকজন সদস্য এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার চাপ দিয়েছেন। থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

কীর্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় হিন্দু-মুসলিম ভাই ও বোনেরা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। সেই সম্প্রীতিকে নষ্ট করার অপপ্রয়াসের অংশ হিসেবে প্রতিমা ভাঙচুর করে থাকতে পারে কোনো চক্র। ঘটনা জানার পরপরই আমি থানা পুলিশকে অবহিত করেছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।’

নওগাঁ জেলা পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিভাস মজুমদার জানান, ঘটনাটি কিছুই জানা নেই। ঘটনা জেনে বিস্তারিত বলতে পারবো । নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক চাপ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে সেখানে দুইজন পুলিশ সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে আসামীদের গ্রেপ্তারের অভিযান পরিচালনা করা হবে।

দৈনিক বিজয় নিউজ/ উজ্জ্বল কুমার সরকার

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট সোর্স লিংক।।

বিএনপির অফিসিয়াল পেজের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি

0

সোমবার (২৭ মে) বাংলাদেশ খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মি. নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব মি. হেমন্ত আই কোড়াইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। এর আগে গত ২৭ তারিখে বিএনপির ভেরিফাইড অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ ও ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-বিএনপি’ থেকে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের নামে এক বিবৃতি প্রদান করা হয় যা সঠিক নয় বলে নতুন করে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৩ মে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্বঘোষিত বাংলাদেশ খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মি. এলবার্ট পি কষ্টার বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মনগড়া বলে প্রত্যাখান করেছেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মি. নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব মি. হেমন্ত আই কোড়াইয়া।

মি. এলবার্ট পি কষ্টা প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট মি. এলবার্ট পি’ কষ্টা বিগত সময়েও সমাজের নানা ধরনের বিভক্তি সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এখনও তিনি তা অব্যাহত রেখেছেন।

২০০২ খ্রীষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিল অধিবেশনে কোনও শাখা সংগঠনের কাউন্সিলর হতে না পেরে তিনি স্বঘোষিত খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছিলেন। সমাজের কোনও কাজ তিনি করেন না, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলই তার একমাত্র লক্ষ্য।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, কে আমাদের পক্ষে কাজ করেছেন তা আমাদের জানা আছে। খ্রীষ্টান সম্প্রদায় দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, শহিদ হয়েছেন এবং পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তারা এদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িত চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী এই সম্প্রদায় দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক যে কোনও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অতীতে ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

এর আগে বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ‘বাংলাদেশ খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশন’-এর নাম ব্যবহার করে মি. এলবার্ট পি কষ্টা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি প্রচার করা হয়।

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট সোর্স লিংক।।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ মে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে ‘বাংলাদেশের অংশ নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিষ্টান রাষ্ট্র বানানোর চক্রান্ত চলছে’ বলে যে অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এলবার্ট পি কস্টা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব পরিপন্থী যে ষড়যন্ত্রের কথা প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে সাদা চামড়ার কোন রাষ্ট্র জড়িত, তা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেশ ও জাতির সামনে পরিষ্কারভাবে জানানোর দাবি জানানো হয়েছে।

সোমবার (২৭ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে পরিষ্কার জানাতে চাই, খ্রিষ্টান সমাজ নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রীতির মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রায় ৪৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে। সকল মিশনারি কার্যক্রম বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আমরা নিখাদ দেশপ্রেমের সঙ্গে বিশ্বস্ত। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রায় আড়াই হাজার দেশপ্রেমিক প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন।

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়েছে, খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠনের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী যে তত্ত্ব হাজির করেছেন, তা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের সম্প্রদায়ের দূরত্ব ও অবিশ্বাস তৈরি করবে বলে মনে করি। যা পুরো সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে বলেও মনে করি।

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট সোর্স লিংক।।

আদিবাসী সার্টিফিকেট দিতে গড়িমসি কেন?

মিথুশিলাক মুরমু

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগান থেকে একজন আদিবাসী সার্টিফিকেটপ্রত্যাশী এসএমএস করে জানান, ‘আমাদের এদিকে সাঁওতাল টাইটেল লিখলেও সাঁওতাল বলে গণ্য করা হচ্ছে না। এজন্য অনেক ছাত্রছাত্রী আদিবাসী হিসেবে প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য কী করতে হবে আমাদের পরামর্শ দিলে ভালো হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনমান উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি’র আওতায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি পেতে হলে ডিসির দেয়া সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। আর ডিসি কর্তৃক ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’র প্রত্যায়নপত্র প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে টিএনওর সার্টিফিকেট জমাদান। আর টিএনওর প্রাপ্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও কার্যত আদিবাসী সংগঠন থেকে আদিবাসী হিসেবে একটি প্রত্যায়নপত্র সংযোজন করা হয়ে থাকে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এমন এক সাঁওতাল ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। ঘটনার আদ্যেপান্ত অবহিত হয়ে কিছু বিষয় বোঝা গেল।

প্রথমত, আদিবাসী সাঁওতালদের ১২টি টাইটেল (মুরমু, সরেন, হেমব্রম, হাঁসদা, টুডু, বাস্কে, বেসরা, বেদেয়া, পাউরিয়া, চঁড়ে, কিস্কু ও মারডি) রয়েছে। সাঁওতালরা নামে শেষে পদবি হিসেবে উপরিউক্ত ১২টির যে কোনো একটি ব্যবহার করে থাকে। ১৯ মার্চ ২০১৯ মার্চের প্রজ্ঞাপন ও ২৩ মার্চ প্রকাশিত গেজেটে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ হিসেবে ২৩ নম্বর সিরিয়ালে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। অপরদিকে আদিবাসী উরাঁওদের সিরিয়াল নম্বর হচ্ছে ১ নম্বরে।

আদিবাসী সাঁওতালরা বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ বিশ্বের আরো অন্যান্য দেশে বসবাস করেন। উক্ত দেশগুলোর কোথাও আদিবাসী সাঁওতালরা নামের পদবি হিসেবে ‘সাঁওতাল’ শব্দটি ব্যবহার করে না। তবে এটির ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে বাংলাদেশের সিলেট ও খাগড়াছড়ি জেলাঞ্চলে। বোধকরি, এটি একটি ছোঁয়াছে রোগ; যেমন আদিবাসী ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা নামের শেষাংশে পদবি হিসেবে ত্রিপুরা কিংবা চাকমারা নামের পদবী হিসেবে চাকমা শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। সিলেটাঞ্চলের আদিবাসী মুণ্ডাদের পদবি থাকলেও মুণ্ডা শব্দটি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

একইভাবে বাউরি, তাঁতি, কাহার, নায়েক, কৈরী, হাজং, মাহাতো জনগোষ্ঠী নামের পদবি হিসেবেও সচরাচর ব্যবহার করে থাকেন। আদিবাসী সাঁওতাল কিংবা উরাঁওদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিকে ১২টি পদবির মধ্যেই অন্তর্ভুক্তি হতে হবে। আর উরাঁওদের অর্ধশতাধিক পদবি রয়েছে, যেমন টপ্প্য, কুজুর, কেরকেটা, এক্কা প্রভৃতি।

তবে কেউ যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাঁওতাল পদবি ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে সামাজিক ও গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনযাপনে সুবিধা থেকে অসুবিধাই বেশি হয়। উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ অন্য জেলাগুলোতে বসবাসরত আদিবাসী সাঁওতালদের পদবি ধারণ করে টিএনও ও ডিসির কার্যালয় থেকে সার্টিফিকেটপ্রাপ্তিতে বেগ পেতে হয় না। তাহলে কেন হবিগঞ্জ, মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগান, সুরমা চা বাগান, জগদীশপুর চা বাগান, বৈকণ্ঠপুর চা বাগান ও নোয়াপাড়া চা বাগানে কর্মরত আদিবাসী সাঁওতালদের পদবিতে ‘সাঁওতাল’ শব্দটি ব্যবহার ব্যতিত সার্টিফিকেট প্রদানে ব্যতয় ঘটবে!

দ্বিতীয়ত, উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আদিবাসী সাঁওতাল শিক্ষার্থী কিংবা চাকুরি প্রত্যাশিত সংযুক্তিতে আদিবাসী সার্টিফিকেটপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, গেজেটে নামের শেষে ‘সাঁওতাল’ কিংবা পদবির নাম উল্লেখ থাকা আবশ্যিক। গেজেটে অনুপস্থিত থাকলে কোনোভাবেই সার্টিফিকেট প্রদান করা সম্ভবপর নয়। আশ্চার্যন্বিত হই যে, একজন বিসিএস ক্যাডার যিনি দেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠী, ভাষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য কিংবা আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে সামান্যতমও ওয়াকিবহাল নন। এটি দোষের নয় কিন্তু একটি আদিবাসী বসবাসকারী উপজেলার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বাহ্নে উপজেলার খুঁটিনাটি জানা দরকার। দেশের স্বনামধন্য গবেষক, লেখক, ঐতিহাসিক, ঔপনাস্যিক আদিবাসীদের নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ, প্রামাণাধি নিয়ে জাতিকে উপস্থাপন করেছেন। একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তা হিসেবে এগুলো সংগ্রহ ও অধ্যয়ন করা সময়োপযোগী। কেননা দায়িত্ববান কর্মকর্তার গাফলতিতে অসংখ্য শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ধুলিস্যাৎ হতে পারে; একজন চাকরিপ্রত্যাশীর স্বপ্ন ভেঙে খান খান হতে পারে। আদিবাসী সাঁওতালদের পশ্চাৎপদতার নৈতিক দায়ভারকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

তৃতীয়ত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে সার্টিফিকেটপ্রত্যাশীদের জানান দিচ্ছেন, যেসব আদিবাসী সাঁওতালরা ধর্মান্তরিত হয়েছেন; তাদের সাঁওতাল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। এখানে স্মর্তব্য যে, অত্র অঞ্চলের খ্রিস্টানুসারী সাঁওতালরা ইতোমধ্যেই কয়েক প্রজন্ম ধর্ম হিসেবে ‘খ্রিস্টিয়ান’ অতিক্রান্ত করেছেন। ধর্ম পরিবর্তনে জাতিস্বত্ত্বা পরিবর্তনীয় নয় এরূপ নজির ভারতের হাইকোর্টগুলো থেকে একাধিক রায় রয়েছে। কারমু হাঁসদার মোকাদ্দমায় প্রশ্ন তোলা হয় যে কারমু হাঁসদার পিতৃ পুরুষ প্রায় সত্তর বৎসর পূর্বে খ্রিস্টিয় ধর্ম গ্রহণ করে এবং কারমু হাঁসদা বংশানুক্রমে খ্রিস্টান।

এ কারণে যুক্তি উপস্থাপন করা হলো যে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের সপ্তম ক অধ্যায়ের আইন কারমু হাঁসদাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কোলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, “Change of religion does not change the aboriginal status of Santal and as such transfer by a Santal embracing Christianity is void without permission from the revenue officer “ (Kermoo Hasda vs Phanindra Nath Sarker 4 ICWN 32).

পাটনা হাইকোর্টও এ সংক্রান্ত রায় দিয়েছে। বলা হয়েছে, একজন আদিবাসী সাঁওতাল তার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনও ধর্ম পালন করতে পারেন, তাতে তার আদিবাসীত্বের বা তদানুযায়ী অধিকারসমূহের কোনও হেরফের ঘটে না। অযথা ধর্মকে টেনে এনে নিজেদের মধ্যে বিভ্রান্তি, বিভেদ ও অনৈক্যের কারণে সুযোগ সন্ধানীরা লাভবান হচ্ছে।

চতুর্থত, চা বাগানে কর্মরত ও বসবাসরত আদিবাসী সাঁওতাল, উরাঁও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত কষ্ট করে পড়াশোনা করে থাকে। কখনো কখনো না খেয়ে থেকেও বিদ্যালয়ে গমনা গমন করে থাকে। চা বাগানের আদিবাসী প্রজন্মরা সম্ভুকগতিতে শিক্ষার দিকে ধাবিত হচ্ছে, প্রত্যেকেই পরিবারের প্রথম শিক্ষার্থী। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে যদি প্রতিরোধের শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলে; তাহলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার চেয়ে চায়ের কর্মী হিসেবেই একসময় মনোযোগী হবে। চা বাগানের উপযোগী পরিবেশ, উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও মানসম্মত এবং বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে বাগানের কর্মীকেও শিক্ষিত হতে হবে। আর সেই পথটিও যদি রুদ্ধ হয়, তাহলে দক্ষকর্মী হিসেবে নিজেদেরকেও টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হবে।

২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন বলে ২৭টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীকালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে পঞ্চাশে। অথচ জাতীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত ৩০ সদস্যবিশিষ্ট আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাস কমিটি জাতীয় সংসদে ৭৫টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নাম গেজেটভুক্তির প্রস্তাবনা রাখে। অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ‘সমতল ভূমিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকরা বাদ পড়ে যাওয়ায় এর আগে প্রকাশিত গেজেট সংশোধনের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা বাংলাদেশের নাগরিক, তাই তারা সত্যিকার নাগরিক হিসেবে দেশে বসবাস করবে এবং সব অধিকার ভোগ করবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঘোষিত শিক্ষাবৃত্তির আবেদনের শেষ দিনক্ষণটি ছিল ১৫ মে, ২০২৪ খ্রি.। উপজেলার নির্বাহী অফিসার বিশেষত আদিবাসী সাঁওতাল ও উরাঁও শিক্ষার্থী আদিবাসী সার্টিফিকেট প্রদানে লাল ফিতার বন্ধনে বেঁধে ফেলেছেন। এটিতে কী কোনো দূরভিসন্ধি রয়েছে! প্রশাসনের কেউ কি আদিবাসী/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীবিরোধী! প্রশাসনের কেউ কি আগ্রহী নন আদিবাসীদের শিক্ষান্নোয়নে! এর আগে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আন্তরিকতার সঙ্গে আদিবাসীদের কথা শ্রবণের পর যুক্তিসঙ্গতভাবেই সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। পূর্বের কর্মকর্তাকে অনুসরণ না করে নতুন ধ্যান-ধারণা ও পদ্ধতির অবতারণা করে আদিবাসী সাঁওতাল শিক্ষার্থীদের বঞ্চিতকরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।

[লেখক : কলামিস্ট]

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট সোর্স লিংক।।

রামকৃষ্ণ মিশন নিয়েও রাজনীতি

গৌতম রায়

ভারতের চলতি লোকসভা নির্বাচনপর্ব (২০২৪) প্রায় শেষ হয়ে আসছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এ লোকসভা নির্বাচনপর্ব শেষ হলেই জানতে পারা যাবে ভোটের ফলাফল। ফলাফল যে শাসক বিজেপির অনুকূলে খুব একটা যাবে না, এটা কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কথাবার্তা থেকে খুব পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। আর এইরকম একটা পরিস্থিতিতে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি আর তাদের স্বাভাবিক মিত্র, প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িক শক্তি, তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বাইনারি দিকটি ভীষণভাবে প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

রামকৃষ্ণ মিশনের জলপাইগুড়ি শাখায় সম্প্রতি দুষ্কৃতকারীরা ন্যক্কারজনক আক্রমণ চালিয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন এমন একটি সংগঠন যারা কেবলমাত্র আধ্যাত্মিকতার পরিমণ্ডলে নিজেদের আবদ্ধ রাখে না। আধ্যাত্মিক কর্মকা-ের পাশাপাশি শিক্ষা এবং সমাজসেবার ক্ষেত্রে এই সংগঠনটি কোনোরকম জাতপাত ধর্মের সংকীর্ণতার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ না করে, যেভাবে মানুষের সেবায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আত্মনিবেদিত, তা যেমন সাধারণ মানুষের কাছে পরম আদরনীয়, আবার সমস্ত ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন, দল-মতের লোকেদের কাছেও বিশেষ শ্রদ্ধা সম্মানের জায়গা তৈরি করেছে।

রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের সর্বস্তরের দুর্নীতি এখন একটা এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে দলের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে একেবারে ভূমিস্তরের কর্মী; কারোর ওপরই আর মুখ্যমন্ত্রীর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ নেই। চাকরি দেওয়ার নাম করে, সাধারণ মানুষের থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করবার মতোই, মানুষের জমি দখল করা একটা জ্বর সর্দি কাশির মতো সাধারণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।

এ ধরনের অসুখ মানুষের শরীরে হলে প্রথমেই যদি তাকে নিরাময় না করা হয়, তবে সেই অসুখ যে একদিন প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এটা সাধারণ মানুষ জানলেও, বুঝলেও, রাজ্য সরকারের আর এসব জেনে বুঝে, সত্যি কিছু করবার মতো উপায় নেই। যাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটবেন, তারা প্রত্যেকেই তাদের দুর্নীতির বখরা, স্বজনপোষণের বখরা, জমি দখলের বখরা, কিভাবে খোদ কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন, সেগুলো প্রকাশ্যে নিয়ে এসে, রাজনৈতিকভাবে সামাজিকভাবে মমতাকে আরও বেকায়দায় ফেলবেন।

রামকৃষ্ণ মিশনের জলপাইগুড়ি শাখায় দুষ্কৃতদের ভয়াবহ হামলার পর রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে কেবল গা ঢিলে দেওয়ার ব্যাপারই ঘটছে না। খোদ মুখ্যমন্ত্রী, যিনি কিনা পুলিশ মন্ত্রীও, তিনি প্রকাশ্যে বলছেন ঘটনার বেশ কিছু সময় পরে, ঘটনাবলী সম্পর্কে তিনি কিছু জানতেন না। রামকৃষ্ণ মিশন কোনো পাড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নয়। জাতীয় স্তরে তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও রামকৃষ্ণ মিশনের একটি বিশেষ মর্যাদা, সম্মান রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাটি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে ওয়াকিবহাল করেনি এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করার এক ঘন্টার মধ্যেই রামকৃষ্ণ মিশনের দুজন প্রবীণ সন্ন্যাসীর নামে, জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হলো। যে দুজনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হলো, তাদের মধ্যে একজন ঘটনার সময়কালে সুদূর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মুঠিগঞ্জ এলাকায় রামকৃষ্ণ মিশনের যে শাখা কেন্দ্রটি আছে, তার দায়িত্বে কর্মরত রয়েছেন। দুষ্কৃতরা যখন জলপাইগুড়িতে মিশনের শাখা কেন্দ্রে হামলা চালায় সংশ্লিষ্ট সাধুটি তখন প্রয়াগ রাজি অবস্থান করছেন।

এই যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের সর্বত্যাগী দুজন সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হলো, খুব অবাক লাগে, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন প্রশাসক হিসেবে যে রাজ ধর্ম পালন করা দরকার ছিল মমতার, সে পরিচয় আমরা তার কাছ থেকে পেলাম না।

অপরপক্ষে মমতার এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত অবস্থান রামকৃষ্ণ মিশনকে ঘিরে, স্বভাবসুলভভাবেই এ ঘটনাকে রাজনৈতিক পুঁজি করে ভোট কুড়োতে নেমে পড়ল বিজেপি। আড়ালে চলে গেল রামকৃষ্ণ মিশনের ওপর হামলার ঘটনাটি। আড়ালে চলে গেল রামকৃষ্ণ মিশনের দুজন প্রবীণ সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে দায়ের করা জামিন অযোগ্য ধারায় এফআইআরের প্রসঙ্গটি।

বিজেপি যদি প্রকৃতই রামকৃষ্ণ মিশনের অনুরাগী হতো, তাহলে রামকৃষ্ণ মিশনের এই দুজন প্রবীণ সন্ন্যাসীর উপর যে আইনি হেনস্থার কর্মকা- চলছে, সেখান থেকে তাদের বের করে আনবার ক্ষেত্রে রাজনীতি ব্যতিরেকে, প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করত। তা না করে তারা মমতা কতটা হিন্দুবিরোধী; বলা বাহুল্য এই প্রচারের উপক্রমের মধ্যে দিয়ে বিজেপি বোঝাতে চাইলো। মমতা কতখানি মুসলমানপ্রেমী সেটা প্রমাণ করতে যেন একটা গাজোয়ারির জায়গায় চলে গেল ভারতের শাসক দল বিজেপি।

মমতার রামকৃষ্ণ মিশনকে রাজনৈতিক তকমা দেওয়া ঘিরে যেমন রামকৃষ্ণ মিশনের শিষ্য, অনুরাগী, ভক্ত- প্রত্যেকটি মহলই ক্ষুব্ধ। ঠিক তেমনই যারা আধ্যাত্মিকতার প্রেক্ষিতে রামকৃষ্ণ মিশনকে ঘিরে খুব একটা উৎসাহী নন, কিন্তু মিশন পরিচালিত বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা প্রাক্তনী, যাদের নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে একটা আবেগ আছে, সেই অংশের মানুষ এবং তাদের পরিবার পরিজন, মিশনকে ঘিরে মমতার মূল্যায়ন নিয়ে প্রচন্ড রকম ক্ষুব্ধ। ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঘিরে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা না থাকলেও, রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষার প্রসারে অনবদ্য অবদান, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের অক্লান্ত সেবা, তাছাড়া শারীরিক প্রতিবন্ধী, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসন এবং স্বাবলম্বনতা অর্জনের জন্য তাদের যে সমস্ত কর্মকা-, এগুলো সব ধরনের মানুষকে মুগ্ধ করে।

যদি কোনো মুসলমান শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারার প্রতি অনুরাগী হন, তার সমন্বয়ী চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তবে তিনি তার নিজের জন্মসূত্রে অর্জিত ধর্ম বজায় রেখেই মিশনের কর্মধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। তার নিজস্ব ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে মিশন কখনো, কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করে না।

এসব দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর দিয়ে ধার্মিক, ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক- সব অংশের মানুষের কাছে রামকৃষ্ণ মিশনের যে গ্রহণযোগ্যতা, সেটা ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি পছন্দ করে না। অথচ রামকৃষ্ণ মিশনকে ব্যবহার করবার চেষ্টা তারা করে। যদিও কোনো অবস্থাতেই সাফল্য লাভ করতে পারে না তারা। এই রকম একটা অবস্থায়, বিজেপির পক্ষে ধর্মান্ধ হিন্দু ভোট ধর্মপ্রাণ হিন্দু ভোট, ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দু ভোট- সমস্ত কিছুকে একত্রিত করবার জন্য মমতাই রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতি অসম্মান, অমর্যাদা সূচক, অসত্য কথাগুলো বললেন।

রামকৃষ্ণ মিশনের মতো একটি সংগঠনের সাধুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে, তাতে জামিন অযোগ্যধারা আরোপ করার আগে পুলিশ কেন কোনরকম তদন্ত করবে না? পুলিশ কি জানবার চেষ্টা করবে না অভিযোগটি সত্যতা ঘিরে? মিশনে সাধুদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করছে সেই অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে যে ধারাগুলো পুলিশ মিশনে সাধুদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছে, সেটি তো যারা অভিযোগ করছেন তারা করেনি। আইনগতভাবে এটা তাদের করবার কাজ নয়। এটা করেছে পুলিশ। কেন ধারাগুলি প্রয়োগের আগে ঘটনার যথার্থতা প্রাথমিকভাবে যাচাই না করে, এভাবে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা লাগু করল?

পশ্চিমবঙ্গে চলতি লোকসভা ভোটের গতিপ্রকৃতি যেদিকে পরিচালিত হচ্ছে, তাতে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়ই প্রচন্ড রকমের কোণঠাসা অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বাম-কংগ্রেস জোট যেভাবে সাধারণ মানুষের কাছে রুটি রুজির প্রশ্ন, কর্মসংস্থানের প্রশ্ন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রশ্ন এবং অবশ্যই মোদি-মমতার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তুলে ধরছে, তার দরুন মানুষের মধ্যে সচেতনতা আরো জোরদার হয়েছে। মহম্মদ সেলিমের সিপিআইর (এম) নেতৃত্ব দেওয়ার পর যে সাহস, লড়াকু মানুষিকতা কেবলমাত্র বামপন্থি দলগুলো নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয়, সমস্ত স্তরের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের মানুষের মধ্যে নতুন করে সঞ্চারিত হয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গে মোদি-মমতার সমস্ত রকমের রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ ওলট-পালট করে দিচ্ছে। বাম-কংগ্রেস জোটের রাজনৈতিক সাফল্য আটকাবার উদ্দেশ্যেই রামকৃষ্ণ মিশনকে জনসমক্ষে অমর্যাদার শরিক করে বিজেপির ভোট বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মমতার এই সাম্প্রদায়িক বাইনারি।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

কৃতজ্ঞতা:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট।।সোর্স লিংক।।

হিন্দু আইন সংস্কার, নারীর অধিকার ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

ছোটন সুশীল

সবাই পারে না, শুধু কেউ কেউ পারে -ব্লগার কবি সুনীল সমুদ্রর এই একটা লাইন অনেক কিছুই বুঝিয়ে দেয়। হাজার বছর ধরে চলে আসা কোন ধর্মীয় কুসংস্কার, প্রথা বা সামাজিক বিধি বিধান এর সংস্কার কিংবা আধুনিকরণ এর চিন্তা করা ও সেই চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে চাওয়ার চেষ্টা করা মহাসাগর সাঁতরিয়ে পার হওয়ার মতোই দুঃসাহসের। যখন অনেকের পক্ষে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয়ে উঠে না বৈষম্য জেনেও যার যার সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে, কিংবা যখন কেউ কেউ এতদিন কেউতো করেনি আমি কেন করবো এই মানসিকতা নিয়ে অন্যায়কে নীরবে মেনে নেয়, তখন কেউ কেউ অসম্ভব জেনেও বুক চিতিয়ে বীরের মতো লড়ে যায় ন্যায় প্রতিষ্টায়। দুজন মানুষের মধ্যে ব্যবধান এখানেই। সমাজ এর স্রোতের বিপরীতে এই ন্যায় লড়াইয়ের চিন্তা কিংবা দুঃসাহস খুব গুটি কয়েক মানুষ ই করতে পারে। অন্যরা পারে না তাদের নিজেদের স্বার্থে আঘাতের ভয়ে, প্রভাব প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে। রাজা রাম মোহন রায় কিংবা বিদ্যাসাগর এর সমসাময়িক সময়ে অনেক গুণী পন্ডিত ব্যক্তিরা ও যেখানে এই প্রথাগুলো ভাঙার সাহস করেনি সেই সময়ে এই দুজন স্রোতের বিপরীতে গিয়ে তাদের লক্ষ্য সফল করেছেন তাদের জ্ঞান, সৎ সাহস আর মানসিক দৃঢ়তার উপর নির্ভর করে। প্রভাবশালী ও সংখ্যাগরিষ্ট হয়েও অমানবিক অন্যায় কুপ্রথা, কুসংস্কার কে প্রশ্রয় দেয়ায় শেষ পর্যন্ত মাথা নুয়াতে বাধ্য হয়েছে তখনকার বড় বড় হিন্দু পন্ডিত ও সমাজপতিরা।
শত শত বছর ধরেই বাংলাদেশের হিন্দু নারীদের উপর যে বৈষম্য, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কন্যাকে ভাগ ই না দেয়া, বিধবা স্ত্রীকে জীবনিস্বত্ব নামক শেকলে আটকে রাখা, পরিবারের সদস্য হয়েও জন্মান্ধ, বোবা কিংবা পরিবারের কোনো সন্তান তৃতীয় লিঙ্গের হলে তাদের কে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা, শুধুমাত্র পুরুষ বলেই স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া ইচ্ছে করলে যত খুশি বিয়ে করার উৎসাহ পাওয়া, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক না করে স্ত্রীদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখাসহ আরো অনেক বৈষম্য বুকে চেপে দেবী নামের স্বান্তনা নিয়ে মুখ বুঝে সহ্য করে হিন্দু নারীরা যখন দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে, তখন ওদের এই বৈষম্যের প্রতিবাদ কিংবা কিভাবে এই বৈষম্য বিলুপ্ত করে মা, স্ত্রী বোন কন্যাদের মুক্তি দেয়া যায় সেটা নিয়ে কোনো হিন্দু ধর্মীয় গুরু, নেতা কিংবা কোনো সংঘটনের দৃষ্টিই নাই। মেয়েরা তো মেয়েই, মানুষ তো না যেন এই ভাব পুরুষ শাসিত হিন্দু সমাজের।
যে সময়ে গজিয়ে উঠা শত শত হিন্দু সংঘটন, হাজার হাজার নেতা নিজের ঘরের মা দূর্গা কে বঞ্চিত রেখে বড় বড় পেন্ডেলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক লাইটিং এ মাটির দুর্গার বন্দনায় মত্ত, যারা চিন্তাই করতে পারেনি হিন্দু আইন সংস্কার ও নারীর অধিকার এর বিষয়ে যার যার পদ পদবি প্রভাব হারানোর ভয়ে, সেখানে গুটি কয়েক উন্নত চিন্তার মানুষ অনেকটা দুঃসাহস করেই স্রোতের বিপরীতে সাঁতরিয়ে মহাসাগর পাড়ি দেয়ার মতো নারীদের অধিকার আদায়ে কাজ শুরু করে। এই যে কেউ কেউ পারে এদের দলেই এই সব সাহসী সংস্কারপন্হীরা। বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ এর নেতৃত্বে যে সব দুঃসাহসিক গুণীজনরা আছে কিংবা যে সব সহ যোদ্ধারা সারা দেশে সমর্থন জোগাচ্ছেন মায়েদের বোনেদের কন্যার স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে, তাদের সাহস চিন্তা ভাবনা মানসিকতা কে আমার পক্ষ থেকে জানাই স্যালুট আর শ্রদ্ধা। বিশেষ করে যেসব নারীরা পরিবার সমাজের শৃঙ্খলে বাধা থেকেও সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, অপমানসূচক তির্যক বাক্যবানে বিদ্ধ হয়েও এই সাহস দেখাচ্ছেন সেই সব দিদিরা আরো বেশি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কারণ আমি মনে করি এসব চিন্তা করার সাহস কিংবা মানসিকতা সবার পক্ষে দেখানো সম্ভব হয় না কিংবা সাহস থাকলেও পরিবার সমাজের বাধার কারণে সেটা প্রকাশ করাও সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি ডক্টর ময়না তালুকদার ম্যাডামসহ শীর্ষ সব নেতৃত্বকে এবং সকল সহযোদ্ধাদের সম্মানপূর্বক একজনের কথা না বললেই নয়, শত বিদ্রোপ, উপহাস, গালি হুমকি উপেক্ষা করেও রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর এর মতো স্রোতের বিপরীতে যিনি বুক চিতিয়ে নারী অধিকার প্রতিষ্টায় লড়ে যাচ্ছেন তিনি সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী পুলক ঘটক দাদা। স্রোতের বিপরীতে সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের, অবহেলিত বঞ্চিত হিন্দু মা বোন কন্যার পাশে দাঁড়ানোর মতো এরকম দুঃসাহসী লোক সবাই হয় না সবাই হতেও পারে না। কেউ কেউ পারার মধ্যে সাংবাদিক পুলক ঘটক একজন।
তাই যারাই হিন্দু সমাজের শিক্ষিত, সচেতন মানুষ সব জেনেও কি দরকার এসবের বলে চুপ করে আছেন বা যারা এই ব্রিটিশ প্রণীত হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কার এর বিরোধিতা করছেন, আপোষ করছেন অন্যায়ের সাথে, নিজেদের পরিচিতি পদ পদবি হারানোর ভয়ে, যদি একটু মানবিকতা থাকে মায়ের প্রতি, বোনের প্রতি, কন্যার প্রতি, আপনারা ও এবার সমাজের অর্ধেক শক্তি নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলুন। আদিম যুগের চিন্তা বাদ দিয়ে উন্নত বিশ্বের মতো নারী পুরুষ এক সাথে মিলে সমাজ রাষ্ট্র কে এগিয়ে নেয়ার চিন্তা করুন। আপনার একটু সচেতনতা, একটু সহমর্মিতা নিরাপদ করতে পারে আপনার মায়ের, কন্যার, বোনের, স্ত্রীর সুন্দর ভবিষ্যৎ, একটি সুন্দর হিন্দু সমাজ। তাই একটু অন্য ভাবে চিন্তা করুন, দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক করুন, সবাই না পারলেও কেউ কেউ যে পারে ওদের মতোই একটু চেষ্টা করুন। আপনার আমার সবার একটু একটু চেষ্টায় হিন্দু সমাজের লিঙ্গ, বর্ণ বৈষম্য দূর হতে বাধ্য।
বি। দ্র। -কিছু কিছু লোক বলবে ব্যক্তি চর্চা বা ব্যক্তি প্রশংসা ভালো না। আমি ও মানি কিন্তু সমসাময়িক বাস্তবতায় কিছু মানুষের দুঃসাহস কে সম্মান জানানো যদি ব্যক্তি প্রশংসা বলে ধরে নেন, সেক্ষেত্রে ব্যক্তিচর্চা করতে আমার আপত্তি নেই, কারণ সবাই সব কিছু পারে না কেউ কেউ পারে। তাদের সম্মান সাহস যুগানো ও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কার হোক।
মা বোন কন্যা স্ত্রীর ভবিষ্যৎ নিরাপদ হোক।

সরিষাবাড়ীতে স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন গণেশ

দৈনিক করতোয়া: জামালপুরের সরিষাবাড়ী হিন্দু ধর্ম থেকে স্বামী-স্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। মুসলমানদের আচার-ব্যবহার, ধর্মীয় রীতি-নীতি, চাল-চলন, ধর্মীয় কালচার ভালো লাগায় স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে স্বামী-স্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। স্ব-ইচ্ছায় গত শুক্রবার জামালপুর নোটারী পাবলিকের এর মাধ্যমে এফিডেভিট করে নিজ ইচ্ছায় স্বাধীনভাবে সনাতন হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন গণেশ (৩৬)। বর্তমানে তার নাম মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ যার রেজিঃ নং- ১৮০১। তিনি উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের মহিষাভাদুরিয়া গ্রামের বর্জনাথ রানীর ছেলে। শুক্রবার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ স্ত্রী পুতুল রানী (২৬) সনাতন হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এ বিষয়টি শুক্রবার জুমার নামাজের পর মহিষাভাদুরিয়া গ্রামে জামালপুর পৌরসভার সচিব মো. হাবিজুর রহমান এর বাড়িতে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মহিষাবাদুরিয়া জামে মসজিদের ইমাম মুফতী মুহাম্মদ আল-আমিন এর কাছে কালেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পুতুল রানী। বর্তমান নাম মোছা: আমেনা খাতুন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, জামালপুর পৌরসভার সচিব মো. হাবিজুর রহমান,ভাটারা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শামসু ভূঁইয়া, সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক তৌকির আহাম্মেদ হাসু, ভাটারা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক নেতা জহুরুল ইসলাম, আমেনা খাতুন এর উকিল পিতা শাহজাহান মন্ডল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মমিন মিয়া, আইয়ুব আলী সহ আরো অনেকে।এ সময় সদ্য মুসলিম হওয়া এ পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর। তাদের দুজনকে আবার নতুন করে ইসলাম শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে দেওয়া হয়।

ইসলাম গ্রহনের কারণ সম্পর্কে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানায়, ইসলামের সব নিয়ম কানুন আমার ভালো লাগে, বিশেষ করে মুসলমানদের আচার- আচরণ  ভালো লাগে। আমি প্রায় বছর খানিক ধরে ইসলাম গ্রহনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে আসছিলাম।অবশেষে গত শুক্রবার জামালপুর নোটারী পাবলিকের এর মাধ্যমে এফিডেভিট করে আইনগতভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করি। তার স্ত্রীর বিষয় জানতে চাইলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে আমার কথা হতো,আমি ইসলাম গ্রহনের পরপরই তাকে মুসলমান হওয়ার জন্য দাওয়াত দিলে প্রথমে সে একটু ইতস্ত হলেও পরবর্তীতে সে ইসলাম গ্রহনে আগ্রহী হলে স্থানীয় মহিষাবাদুরিয়া জামে মসজিদের ইমাম মুফতী মুহাম্মদ আল-আমিন এর কাছে শুক্রবার দুপুরে কালিমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে।

ইসলাম গ্রহনকারী নাম মুসলিমা আমেনা বেগম জানায়, স্বামী ইসলাম গ্রহন করে আমাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়। প্রথম প্রথম একটু কেমন কেমন লাগলেও পরে ইসলাম গ্রহনে রাজি হয়ে যাই।রাজি হতে স্বামী জোড় করেছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আমেনা বেগম জানায়,না কোন জোর জবর দস্তিতে নয়, মুসলমানদের সকল কাজ-বাজ ভালো লাগায় সম্পূর্ণ নিজ ইচ্ছায় স্বাধীনভাবে ইসলাম গ্রহন করেছি। বাকি জীবনটা ইসলামে আদর্শ অনুসরণে কাটাতে চাই।

।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট।।সোর্স লিংক।।

লালনের গান ও ধর্মীয় অনুভূতি

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ফেইসবুকে লালন সাঁইয়ের একটি গানের দুটি চরণ লিখে পোস্ট করার ঘটনায় কিছু মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে, আঘাত লাগার অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে করিৎকর্মা পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে। ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’- এই গানটি শোনেনি এমন কোন বাঙালি আছে বলে মনে হয় না। এই গানেরই দুটি চরণ হচ্ছে, ‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারী লোকের কি হয় বিধান।’

এই দুটি চরণের মর্ম কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘সুন্নতে খাতনা দিলে যদি হয় মুসলমান, তাহলে নারী জাতির কি হয় বিধান’। মুচলেকা দিয়ে আদালত থেকে ছাড়া পেলেও তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ না হলে তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুলিশ মোতায়েন করা হতো না। পুলিশ মোতায়েন করায় পোস্টদাতার জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিমুক্ত, না ঝুঁকিযুক্ত তা পরে জানা যাবে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি জনরোষে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

পাকিস্তানে একবার কারো বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অভিযোগ উঠলে সেই ব্যক্তি জেলখানা ও বাইরে কোথাও নিরাপদ থাকে না। পাকিস্তানের ধর্মান্ধরা বিচারের অপেক্ষা করে না, বিচারের আগেই অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে এবং এমন ঘটনা পাকিস্তানে অহরহ ঘটছে। জেলখানায় সাধারণ লোকের অনুপ্রবেশের সুযোগ না থাকায় জেলখানার পুলিশ প্রহরীই অভিযুক্তকে হত্যা করে ফেলে। জেলখানায় কোনভাবে বেঁচে গেলেও কেউ জামিন নিয়ে বাইরে আসে না, বাইরে এলে কী হবে তা সবাই জানে। এমনকি বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও উন্মত্ত জনতা বহু অভিযুক্তকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সরকার এমন উন্মত্ত জনতা থেকে বেকসুর খালাস পাওয়া ব্যক্তিকে বাঁচাতে অনেক সময় ছলচাতুরির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে, জেলখানা থেকে সরাসরি বিমানে তুলে দিয়ে ভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়। এতে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ায় ইসলামপন্থী দলগুলো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে এই মর্মে দাবি তুলেছিল যে, আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়া কোন ব্যক্তিকে ভিন দেশে পাঠানো যাবে না।

মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলে মালালা ইউসুফ জাঁই গুলি খেল। ব্লাসফেমি আইনের সংস্কারের পক্ষে কথা বলায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর সালমান তাসিরকে হত্যা করেছে তারই দেহরক্ষী মালিক মুমতাজ হুসাইন কাদরি। এই কাদরির গলায় মালা দেয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষের লম্বা মিছিলও হয়েছে।

পাকিস্তানি ভূত বাংলাদেশের ওপর ভর করেছে, এখন আমরা পাকিস্তানের চেয়েও বেশি স্পর্শকাতর, সামান্যতেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। অনুভূতিতে আঘাত লাগলে আমরাও এখন আর মুখে মুখে প্রতিবাদ করি না, লিখে প্রতিকার চাই না, প্রতিঘাত করার জন্য সবাই হয়ে যাই এক এক জন ‘মালিক মুমতাজ হুসাইন কাদরি’।

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলন।

রাজনৈতিক ফায়দা লোটার লক্ষ্যে ধর্মীয় অনুভূতির পারদ ওঠানামা করানো হয় বলে ভারত উপমহাদেশের দেশগুলোর বদনাম রয়েছে। রাজনৈতিক কারণে ধর্মের অতিরিক্ত ব্যবহারে বহির্বিশ্বে পাকিস্তানের ইমেজ ভালো নয়। একসময় বাংলাদেশের কেউ পাকিস্তান যেত না, কারণ পাসপোর্টে পাকিস্তানের ভিসা থাকলে ইউরোপ, আমেরিকা প্রভৃতি দেশের ভিসা পাওয়া যেত না, পাকিস্তান গেলেই ভাবত জঙ্গি কানেকশন রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থাও অচিরে তেমন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনো বাংলাদেশের কারো নামের সঙ্গে ‘মুহাম্মদ’, ‘আহমদ’, ‘ইসলাম’ থাকলে ভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট হাতে নিয়ে দশবার চেহারা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

লালন ফকিরের ধর্ম নিয়ে কম টানাটানি হয়নি, এখনো হচ্ছে। তাকে কেউ বলে মুসলমান, আবার কেউ বলে হিন্দু। একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী লালন ফকিরকে মুসলমান অভিধায় অভিষিক্ত করে আনন্দ লাভ করছেন। লালন কিন্তু কখনো নিজেকে হিন্দু বা মুসলমান রূপে পরিচয় দেননি। তিনি হচ্ছেন জাত-বর্ণ-ধর্ম বহির্ভূত মানবতা বন্দনার বাউল।

কাজী নজরুল ইসলামকেও মাঝে মাঝে মুসলমান কবি-লেখক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়; তার রচিত শ্যামা সংগীতের কথা তখন অনুচ্চারিত থাকে। কিন্তু মুসলমানরাই তাকে ‘কাফের’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল, আর ‘কাফের’ উপাধি ঘোচাতেই তাকে রচনা করতে হয়েছিল অজস্র ইসলামিক গান ও কবিতা। তারপরও ১৯২৬ সালে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনে ঢাকা বিভাগ থেকে প্রার্থী হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম জামানত হারিয়েছিলেন। কে না জানে, কাজী নজরুল ইসলাম ধর্মান্তর না করেই হিন্দু মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে আমৃত্যু সংসার করেছেন। লালন ফকির ও নজরুল মানবধর্মকে অধিক প্রাধান্য দিয়েছেন।

লালন ফকিরকে মুসলমান বানানো যায়নি বলেই ইদানীং তার আধ্যাত্মিক গানগুলোর মধ্যে যৌনতার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। লালনের যে গানের খৎনার কথা লিখে একজন হিন্দু অভিযুক্ত হয়েছেন সেই গানের কথা কিন্তু ঠিক নয়, কারণ মেয়েদেরও খৎনা হয়। পুরুষের যেমন সবার খৎনা হয় না, মেয়েদেরও তেমনি সবার খৎনা হয় না। ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলমানদের নবী ইব্রাহীম (আ.) ৮০ বছর বয়সে তার নিজের হাতেই নিজের খৎনা করেন। ইসলাম ধর্মের আগেও বেশির ভাগ পৌত্তলিক পুরুষের এবং কিছু কিছু মেয়ের খৎনা করা হতো; অন্যদিকে ইহুদী পুরুষদের খৎনা ধর্মীয় কারণেই হতো।

জন্মের অষ্টম দিনে প্রত্যেক ইহুদি ছেলের খৎনা হতো বিধায় যিশুরও খৎনা হয়েছিল; কিন্তু তার অনুসারীরা পরে খৎনা পরিত্যাগ করেছে। মুসলমানদের খৎনা হয় ধর্মীয় নির্দেশে এবং সেই নির্দেশ এসেছে হাদিস থেকে। কোরআনে খৎনার কথা নেই, থাকার কথাও নয়; কারণ কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম-সুন্দর আকৃতিতে’। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন নিখুঁতভাবে, কোন ক্রুটি নেই, ক্রুটি না থাকায় শরীরের কোথাও অপ্রয়োজনীয় অংশও থাকার কথা নয়।

কিন্তু হাদিস বলছে, খৎনা ‘পুরুষদের জন্য আইন এবং মহিলাদের জন্য সম্মান রক্ষা।’ মহিলাদের খৎনা নিয়ে ইমাম এবং আলেমদের মধ্যে রয়েছে মতভেদ। শাফিঈ ও হাম্বলি আইনবিদদের মতে মুসলিম পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য খৎনা বাধ্যতামূলক। হানাফি মাজহাবের মেয়েরা বেঁচে গেছে, তাদের জন্য খৎনা বাধ্যতামূলক নয়। আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশে মেয়েদের খৎনা করা হলেও এদের মধ্যে ২৪টি দেশেই মেয়েদের খৎনা নিষিদ্ধ। ধর্মে থাকা সত্ত্বেও কেন মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে মেয়েদের খৎনা নিষিদ্ধ তা বোধগম্য নয়। তবে কয়েকটি মুসলিম দেশে মেয়েদের খৎনা হয় ব্যাপকভাবে; ৯০ শতাংশ মিশরীয় নারী খৎনার শিকার। সিয়েরা লিওনেও দেদারছে মেয়েদের খৎনা হচ্ছে। মেয়েদের খৎনা হচ্ছে সুদান, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশীয়া, ইথিওপিয়ায়।

অত্যন্ত অমানবিক এই প্রথাটি সভ্য পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হলেও অনেক দেশে এটি ধর্মীয় চর্”া হিসেবে পালন করা হয়। জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বে প্রতি ২০ জন মেয়ে শিশু বা নারীর মধ্যে ১ জনের খৎনা করা হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে নাকি এই সময়ে বিশ কোটি নারীর খৎনা রয়েছে অর্থাৎ যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। ধর্মের নিক্তিতে বিচার করলে লালনকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঠিক তদরূপ কাজী নজরুল ইসলামের শ্যামা সংগীত পড়ে বা শুনেও যে কারোরই মনে হতে পারে যে তিনি একজন কালি অন্তপ্রাণ হিন্দু। অখ- মানবসমাজ গঙে তোলার মহান ব্রত নিয়ে তারা দুইজন অসংখ্য গান লিখেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা উভয়ে ধর্ম, জাত, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদি ভেদাভেদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু প্রচার করেছেন। তার গানের ভক্ত অগণিত মানুষ।

লালন ফকিরের যে গানের দুটি চরণ পোস্ট করে সঞ্জয় রক্ষিত গ্রেপ্তার হয়েছেন সেই গানটি রেডিও, টিভি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অজস্রবার শুনেছি, কিন্তু কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে ইতোপূর্বে শোনা যায়নি। শতাধিক বছরের সুপ্ত অনুভূতির জাগরণ হয়েছে শুধু একজন হিন্দুর লেখায় চরণ দুটি ওঠে আসায়। সমাজের কিছু লোকের ধর্মে মন না থাকলেও ধর্মানুভূতি তীব্র; এদের সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘যাহারা গু-া, ভ- তারাই ধর্মের আবরণে স্বার্থের লোভে ক্ষেপাইয়া তোলে অজ্ঞান জনগণে!’ এরা রাষ্ট্রের প্রশ্রয় পায় বলেই জাতির জন্য তা চরম দুর্ভাগ্য।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও টাকশালের সাবেক এমডি]

কৃতজ্ঞতা স্বীকার:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট।।সোর্স লিংক।।