Home Blog Page 23

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, অভিনেত্রী তিশাকে আইনি নোটিশ

0
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ চারজনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সোমবার (১২ অক্টোবর) লিটন কৃষ্ণদাসের পক্ষে আইনজীবী সুমন কুমার রায় এ নোটিশ পাঠান।

আইনজীবী সুমন কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, বিজয়া নাটকের মাধ্যমে সনাতনী সম্প্রদায়কে কটাক্ষ, নারীকে বিতর্কিত চরিত্রে উপস্থাপন, ধর্মান্তরকরণে উৎসাহ ও সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়া হয়েছে। এ নাটকে তিশার সঙ্গে অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ, রচনাকারী সালেহ উদ্দীন সোয়েব চৌধুরী ও পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ ভূঁইয়াকেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে নাটকটি প্রত্যাহার না করলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।

নোটিশে বলা হয়, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ‘বিজয়া’ নামে একটি নাটক নির্মাণ করা হয়। নাটকে দেখা যায়, এতে সূক্ষ্মভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। হিন্দু পুরুষদের মদ্যপ, নিষ্ঠুর আচরণকারী, অক্ষম ও উদাসীন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যার মাধ্যমে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও পরিকল্পিতভাবে পরকীয়া ও ধর্মান্তরকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নাটকটির ট্রায়াল ভার্সন প্রকাশের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মর্মাহত ও হতবাক হয়েছেন। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ ও সনাতন ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিতর্কিত ‘বিজয়া’ নাটকটি সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০

।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট।।সোর্স লিংক।।

জাসদের ব্যর্থ বিপ্লব, বিএনপি’র উদযাপন!

0
৭ নভেম্বর, ১৯৭৫

কর্নেল তাহের সেনাবাহিনীকে উৎপাদনমুখী করতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে। কিন্তু যেভাবে তিনি সেটা করতে চেয়েছিলেন, তা ছিল হঠকারিতা। তাহের ছিলেন একজন বিভ্রান্ত ও রোমান্টিক বিপ্লবী। বিচারের নামে জিয়ার প্রহসনে তাহেরের মর্মান্তিক পরিণতি আমাকেও বেদনার্ত করে। কিন্তু ৭ নভেম্বর তিনি যা করেছেন বা করতে চেয়েছেন, সেটা সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রভাষ আমিন: বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনটি তারিখ রাজনীতির বাঁকবদল করে দিয়েছিল। এর দুটি আগস্টে, একটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, আরেকটি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। অপর তারিখটি হলো ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর। তবে মূল টার্নিং পয়েন্ট অবশ্যই ১৫ আগস্ট। বাকিগুলো তার পরম্পরা। ১৫ আগস্ট খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, যাতে রাজনীতিতে তার কোনো উত্তরাধিকার না থাকে। এমনকি শিশু রাসেলও তাদের এই নিষ্ঠুর পরিকল্পনা থেকে রেহাই পায়নি। তবে দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা। ১৫ আগস্টের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল।

৭ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুবই আলোচিত, বিতর্কিত, গুরুত্বপূর্ণ, বেদনাদায়ক এবং জট লাগানো দিন। দিনটি একেকজন একেকভাবে পালন করে। আমি বিভ্রান্ত হয়ে যাই কার বিপ্লব, কে পালন করে? বিএনপি দিনটি পালন করে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে। কিন্তু ৭৫-এর ৭ নভেম্বর তো বিএনপির জন্মই হয়নি। আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তখন ক্যান্টনমেন্টে গৃহবন্দী। এমনকি জিয়াউর রহমান তখন কাগজে কলমে কেউই ছিলেন না। ২৪ আগস্ট মোশতাক জিয়াকে সেনাপ্রধান বানালেও ৩ নভেম্বর ক্যু করে সেনাপ্রধান হন জেনারেল খালেদ মোশাররফ। নিজ বাসায় বন্দী হন জিয়া। এমনকি জান বাঁচাতে জিয়া তখন পদত্যাগ করে পূর্ণ পেনশন দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। তার মানে ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান আসলে সেনাবাহিনীর পদত্যাগী সাবেক প্রধান।

খালেদ মোশাররফ জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করে বাসার টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেও, তার বেডরুমের ফোন লাইনটি সচল ছিল। সেই ফোনেই তিনি কর্নেল তাহেরকে বলেছিলেন, ‘সেভ মাই লাইফ’। ডাক পেয়ে তাহের তার ‘সৈনিক সংস্থা’ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। তাহের যে জিয়াকে ভালবেসে তার জীবন বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তা নয়। বিপ্লবের গোপন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সুযোগ ভেবেই মাঠে নেমেছিলেন তিনি। জাসদের মধ্যেই তখন অনেক বিভ্রান্তি। কর্নেল তাহেরের বিপ্লবের কথা জানতেনই না জাসদের অনেকে। ৭ নভেম্বর বিপ্লব হোক, প্রতিবিপ্লব হোক, ব্যর্থ বিপ্লব হোক, হঠকারিতা হোক–করেছে জাসদ। ৭ নভেম্বর তো বিএনপির সাফল্যের দিন নয়, জাসদের ব্যর্থতার দিন, অথচ সেটাই ঘটা করে পালন করে বিএনপি। পদচ্যুত, গৃহবন্দী সেনাপ্রধান ক্যু করতে পারেন, বিপ্লব নয়।

যে সৈনিকেরা জিয়াকে নিয়ে উল্লাস করেছে তারা তো ছিল কর্নেল তাহেরের অনুগত। রাস্তায় যে জনগণ সৈনিকদের সঙ্গে মিলে ট্যাংকের ওপর উঠে উল্লাস করেছে, তারা তো জাসদের কর্মী। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, যদি সেদিন জাসদের বিপ্লব সফল হতো; যদি জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের সাথে বেইমানি না করতেন, যদি জিয়া তাহেরের স্ক্রিপ্ট ফলো করে শহীদ মিনারে গিয়ে বিপ্লবের ঘোষণা দিতেন; তাহলে আজ বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্রটা কেমন হতো? আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকতো জাসদ, যেমনটা ছিল ৭৫-এর আগে, বিএনপির হয়তো জন্মই হতো না। সত্যি রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

জাসদের বিপ্লব সফল হলে ভালো হতো, আমি এমনটা মনে করি না। জাসদের বিপ্লব সফল হলে কী হতো আসলে তা বলা মুশকিল। যারা বিপ্লবটি করতে চেয়েছিলেন, তারাও এর পরিণতি সম্পর্কে আদৌ জানতেন কিনা, আমার সন্দেহ। জাসদ আগে কী অপকর্ম করেছে, পরে কী করতে পারতো, সে আলাদা তর্ক। তবে অফিসারদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লব ভালো কিছু বয়ে না আনারই কথা। আর সিরাজুল আলম খান যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আফিম খাইয়ে ধ্বংস করেছেন একটি মেধাবী প্রজন্মকে, ৭ নভেম্বর কি তার চূড়ান্ত পরিণতি? জাসদের লোকজন কি তা বিশ্বাস করেন? সিরাজুল আলম খানের কি সায় ছিল ৭ নভেম্বরের তথাকথিত বিপ্লবে? মাত্র তিন বছর বয়সী একটা রাজনৈতিক দল কিছু ‘খ্যাপাটে সৈনিক’-এর ওপর ভর করে মধ্যরাতে গুলি ফুটিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েম করে ফেলবে? বিপ্লব কি এতই সহজ? ৭ নভেম্বর কি জাসদের বিপ্লব, নাকি স্বপ্নবান কর্নেল তাহেরের ইউটোপিয়ান বিপ্লব বিলাস? প্রশ্নগুলো সহজ, কিন্তু উত্তর পাওয়া দায়।

৩ নভেম্বর ১৫ আগস্টের খুনি চক্রের বিরুদ্ধে ক্যু করেছিলেন খালেদ মোশাররফ। কিন্তু তিনি আর্মি ক্যু করতে চেয়েছিলেন সিভিলিয়ান স্টাইলে। আলাপ-আলোচনা-সমঝোতার সুযোগে কালক্ষেপণ হয়। বিভ্রান্তি ছড়ায়, গুজব ছড়ায়, ক্যুর শুরুতেই পলায়নপর খুনিচক্র কারাগারে হত্যা করে জাতীয় চার নেতাকে। এই ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে নামে জাসদ, আরও স্পষ্ট করে বললে কর্নেল তাহের। তিনি জিয়াউর রহমানের মাথায় লবণ রেখে বরই খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কর্নেল তাহের সৈনিকদের উস্কানি দিতে যতটা পটু ছিলেন, জনসমাগম করতে ততটা নয়। জনগণ জাসদের পক্ষে ছিল না বলেই তাহেরের চেয়ে বেশি চালাক জিয়া বরইটি নিয়ে নিজেই খেয়ে ফেলেন। কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দিয়ে জিয়া ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন অবশ্যই। কারণ তাহের তাকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু কর্নেল তাহের বিপ্লবী ‘সৈনিক সংস্থা’ করে ক্যান্টনমেন্টে গোপন রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। তার বিপ্লবের মূল স্লোগান ছিল ‘সৈনিক সৈনিক ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই’। এ ধরনের হঠকারী তৎপরতা সবসময়ই অপরাধ। তবে ৭ নভেম্বরই জাসদের প্রথম হঠকারিতা নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও, এমপি হত্যা, থানা লুট, ভারতীয় হাইকমিশনারকে অপহরণ চেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতি ৭ নভেম্বর। আর এই ৭ নভেম্বরেই জাসদের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকেছিলেন কর্নেল তাহের।

কর্নেল তাহেরের ব্যাপারে আমার মধ্যে একটা মিশ্র অনুভূতি আছে। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার। তবে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি তিনি। দেশ গঠন নিয়ে তার নানা পরিকল্পনা ছিল। তিনি সেনাবাহিনীকে উৎপাদনমুখী করতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে। তার চাওয়ার সাথে আমি ষোলআনা একমত। কিন্তু যেভাবে তিনি সেটা করতে চেয়েছিলেন, তা ছিল ভুল, হঠকারিতা। কর্নেল তাহের ছিলেন একজন বিভ্রান্ত কিন্তু রোমান্টিক বিপ্লবী। বিচারের নামে জিয়ার প্রহসনে কর্নেল তাহেরের মর্মান্তিক পরিণতি আরো অনেকের মতো আমাকেও বেদনার্ত করে। কিন্তু ৭ নভেম্বর তিনি যা করেছেন বা করতে চেয়েছেন, সেটাও সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই।

৭ নভেম্বর আরেকটা বিষয় প্রমাণিত হয়েছে, আপনি ভালো-মন্দ যাই করতে চান, তাতে জনগণের সমর্থন থাকতে হবে। জনগণের সমর্থন ছাড়া আপনি কিছুই অর্জন হরতে পারবেন না। জাসদের ব্লুপ্রিন্টে ছিল ৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ ঘটানো এবং জিয়াউর রহমানকে সেখানে এনে তাদের দাবির পক্ষে ঘোষণা দেওয়ানো। কিন্তু সবই জাসদের পরিকল্পনামতো হলেও জনতার ঢল নামেনি বলেই নিয়ন্ত্রণটা নিজের হাতে রাখতে পারেননি তাহের।

৭ নভেম্বর নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু সবচেয়ে কম আলোচনা হয় সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায়টি নিয়েই। ৭ নভেম্বর তিনটি পক্ষ, তিনপক্ষের নেতৃত্বেই তিনজন সেক্টর কমান্ডার, তিন বীর উত্তম। খালেদ মোশাররফ আর তাহের হেরেছেন; জিয়াউর রহমান জিতেছেন। ৭ নভেম্বর এক মর্মান্তিক ভ্রাতৃঘাতী দিন। ৭ নভেম্বর আমরা হারিয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের তিন শ্রেষ্ঠ বীরকে। খালেদ মোশাররফ তো ছিলেন বীরদের বীর। কর্নেল হুদা আর কর্নেল হায়দারের বীরত্বও মুক্তিযুদ্ধের বীরগাথার অংশ। তিনজনই বীরউত্তম। খুনিচক্রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে প্রাণ দেওয়া খালেদ মোশাররফ আজ যেন ভুলে যাওয়া নাম। শেখ হাসিনা ইতিহাসের অনেক দায় মিটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, জেলহত্যা মামলার বিচার করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। এখন সময় খালেদ-হুদা-হায়দার হত্যার বিচার করার। ইতিহাসের দায় মেটাতে হবে সবাইকেই।

বাংলাদেশের রাজনীতির দুটি পক্ষ- আওয়ামী লীগ আর এন্টি আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশে এন্টি আওয়ামী লীগ শক্তির নবজন্ম ঘটে, পরে যেটা বিএনপি হিসেবে পরিচিতি পায়।

ইতিহাস আমরা বদলাতে পারব না। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়াটা জরুরি, যাতে কোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ৭ নভেম্বরের শিক্ষা হলো, আর কখনও যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র, রক্তপাত, নিষ্ঠুরতা না ঘটে।

 

লেখক: প্রভাষ আমিন, সাংবাদিক, বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ

স্মৃতিতে কামাল লোহানী

0
প্রগতিশীল সাংবাদিক ফোরামের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন বরেণ্য সাংবাদিক কামাল লোহানী। পাশে আছে বিশিষ্ট সাংবাদিক কেজি মুস্তফা ও প্রগতিশীল সাংবাদিক ফোরামের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক।

পুলক ঘটক: একটি কার্টুন চিত্র প্রকাশকে কেন্দ্র করে ২০০৭ সালে জরুরি আইন চলাকালীন দৈনিক প্রথম আলো এবং সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছিল হিজবুত তাহরীরসহ কিছু মৌলবাদী সংগঠন। ঐ ঘটনায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বায়তুল মোকারমের খতিবের কাছে গিয়ে মাপ চেয়ে এসেছিলেন। আর আমরা প্রগতিশীল সাংবাদিক ফোরাম কামাল লোহানীর নেতৃত্বে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম।

কামাল লোহানী ছাড়া সে সময় আর কারও দ্বারা এটা সম্ভব ছিলনা। লোহানী ভাইয়ের সভাপতিত্বে ২০০৭ সালের অক্টোবরের ৩ তারিখ “সাংবাদিকতার মর্যাদা” শিরোনামে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সকল সাংবাদিক নেতা অংশ নিয়েছিলেন।

ছবিতে লোহানী ভাইয়ের এক পাশে বরেণ্য সাংবাদিক কেজি মুস্তফা এবং আরেক পাশে আমাকে দেখা যাচ্ছে। এই স্মৃতি অমোচনীয়। লোহানীভাই ছিলেন প্রগতিশীল সাংবাদিক ফোরামের আহ্বায়ক এবং আমি ছিলাম সদস্য সচিব। (ডেইলি নিউ এজ পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি।)

১৯৭১ সালে কামাল লোহানী ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ৭১’র ২৫ মার্চ ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা শুরুর মাত্র দুই দিন আগে ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কামাল লোহানীদের নেতৃত্বে সাংবাদিক ইউনিয়ন সেনাবাহিনীর সংবাদ বয়কট করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।

লোহানী ভাই তখন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তার পত্রিকার দুই সাংবাদিক আশরাফুজ্জামান খান এবং চৌধুরী মঈনুদ্দিন আল বদরদের নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যায় যুক্ত হয়েছিলেন। কামাল লোহানী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশত্যাগ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যুক্ত হয়েছিলেন। সাংবাদিকতা পেশায় এবং প্রগতিশীল আন্দোলনে আজ আমরা অভিভাবক হারালাম। লাল সালাম কামাল লোহানী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কামাল লোহানীর জন্ম ২৬ জুন, ১৯৩৪। মৃত্যু: ২০ জনু, ২০২০।।

 

[পুলক ঘটক; সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ]

 ফেসবুক পেজফেসবুক প্রোফাইলটুইটার অ্যাকাউন্ট

বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধন সময়ের দাবি: আইনমন্ত্রী

0
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা সংখ্যাগরিষ্ঠদের দায়িত্ব, এ মত দিয়ে তিনি হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন…

বাসস: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধন এখন সময়ের দাবি। তবে, সরকার এটি তাদের উপর চাপিয়ে দেবে না। হিন্দু সম্প্রদায় এগিয়ে এলে সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে বৃহস্পতিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে আমরা অত্যন্ত জোর গলায় নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি। কিন্তু যখন নারীদের উত্তরাধিকারের কথা আসে তখন আমাদের গলার শব্দ স্তিমিত হয়ে যায়। এটা আমরা উত্তরণের চেষ্টা করব,”– আইনমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন।

এদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা সংখ্যাগরিষ্ঠদের দায়িত্ব, এ মত দিয়ে তিনি হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন।

ধর্মনিরেপেক্ষ দেশ হিসেবে এই দেশ মুসলমানদের জন্য যেমন, হিন্দুদের জন্যও ঠিক তেমন। তাই কোনো সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা আইন করে তাদেরকে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ হয়নি, এমনটাই মন্ত্রীর মত।।

যেখানে মুসলমান, হিন্দু সবাই সমানভাবে থাকতে পারবে এবং সকলেই বাঙালি এবং বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দেবে, এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের অঙ্গীকারের কথাও বললেন তিনি।

আইনমন্ত্রী জানালেন, শেখ হাসিনার সরকার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে যেতে চায়– বাহাত্তরের মূল সংবিধানে যে চার মূলনীতির কথা বলা আছে সেগুলো সুনিশ্চিত করতে চায়– কারণ এগুলো বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়।

বিচারপতি শামসুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিচারপতি অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির এবং বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।

 

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি⇒ বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

ওয়েবসাইট⇒ বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ

ফেসবুক গ্রুপ লিংক⇒ হিন্দু আইন সংস্কার চাই

হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে সংশোধনীর প্রস্তাব

0

বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েরা যাতে পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পান, সেই লক্ষ্যে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে আইন কমিশন।

কমিশন বলছে উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তিতে পুত্রের সাথে কন্যাকেও পূর্ণ ও সমান অধিকার দিতে হবে।

তবে এই সংস্কারের উদ্যেগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সম্পত্তিতে মেয়েদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন।

হিন্দু আইনের সংস্কারের এই সুপারিশকে সর্মথন করলেও এই সম্প্রদায়ের অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা এখনো হিন্দু আইন সংস্কারের উপযোগী নয়।

বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু দায়ভাগ আইন অনুযায়ী স্বীকৃতি প্রাপ্ত ৫ জন নারী সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে তারা জীবনসত্ত্ব সম্পত্তি ভোগের অধিকার পান। অর্থাৎ জীবন অবসানের সাথে সাথে এই সম্পত্তি পূর্ব মৃত ব্যক্তির পুরুষ উত্তরাধিকারের কাছে চলে যায়।

এই পটভূমিতে বাংলাদেশের আইন কমিশন হিন্দু আইন সংস্কারের সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহ আলম।

আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে হিন্দু আইনের আরও কিছু দিক, যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ, বিবাহ নিবন্ধন, ভরণপোষণ ও সন্তানের অভিভাবকত্ব, এবং দত্তক নেওয়ার প্রশ্নে বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মি. আলম বলেন “পিতার সম্পত্তিতে পুত্র ও কন্যার সমান অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। পুরুষ ও নারীর উভয়কেই বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।”

বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারত ও নেপাল হিন্দু প্রধান দেশ হওয়ায় অনেক আগেই যুগের চাহিদা অনুযায়ী এসব দেশে হিন্দু আইনের সংস্কার করা হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও হিন্দু আইন সংস্কার নিয়ে কাজ করেন নীনা গোস্বামী, যিনি বলছেন প্রচলিত বিভিন্ন প্রথা অনুযায়ী হিন্দু আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।

”তাই সময়ের প্রয়োজনে তার পরিবর্তন করলে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকে উপকৃত হবেন।” বলছেন নীনা গোস্বামী।

তবে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ মনে করছেন বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা হিন্দু আইন সংস্কারের উপযোগী নয়।

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় এই পরিবর্তন কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা উচিত।

“সবাই ভারতের কথা বলেন, কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এক নয়। বিবাহ নিবন্ধনের বিষয়টি যেমন ঐচ্ছিক করা হয়েছে তেমনি পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোও ঐচ্ছিক করা উচিত।” বলেন মি. দেবনাথ।

এদিকে আইন কমিশন বলছে তাদের মাঠ পর্যায়ের গবেষণা দ্বারা তারা এর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবি বলে মনে করছেন।

এই লক্ষ্য পূরণে প্রচলিত হিন্দু আইনের সংস্কারের জন্য কমিশনের সুপারিশগুলো একটি পুর্ণাঙ্গ আইন অথবা বিষয়ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন আইন করে কার্যকর করার জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।

কৃতজ্ঞতা: বিবিসি বাংলা

ফেসবুক গ্রুপ লিংক: হিন্দু আইন সংস্কার চাই