Home Blog

বিচিত্র বিশ্বাস ও সত্য ধর্ম

0
এন্টনি ভ্যান লিউয়েনহুকের গবেষণায় ব্যাক্টেরিয়া আবিস্কার।

পুলক ঘটক: ক্ষতস্থানে পচন ধরেছে, নিদারুণ কষ্ট ভোগ করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে একজন মানুষ। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ঈশ্বরের অভিশাপ। আসল কারণ তখনো মানুষের অজানা। তাই নিরুপায় মানুষ নিরাময়ের সন্ধানে ঝাড়ফুঁক তুকতাকের আশ্রয় নিয়েছে; রক্ষা পেতে অদৃশ্য ঈশ্বরের সাহায্য খুঁজেছে। আজ থেকে কয়েক শো বছর আগে এটাই ছিল মানুষের জীবন বাস্তবতা।

ক্রমবিকশিত জ্ঞান থেকে মানুষ জেনেছে, শরীরে ঘা সৃষ্টি বা পচনের কারণ হল, খালিচোখে দেখা যায় না এমন অসংখ্য অণুজীব –ব্যাকটেরিয়া। লক্ষ কোটি অণুজীব মানুষ বা অন্য প্রাণীর দেহের মধ্যে আশ্রয় করে তাদের নিজেদের জীবনচক্র তৈরি করে নেয়ে। তাদের রুখতে না পারলে মানব দেহের নিজ কার্যচক্র বিঘ্নিত হয়। শরীরে দৃশ্যমান বা অদৃশ্য ঘা তৈরি হয়।

১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিস্কার করেন।

১৬৬৫ সালে রবার্ট হুকের গবেষণায় প্রথম ব্যাক্টেরিয়ার অস্তিত্ব ঘোষণা এবং এর ১১ বছর পর ১৬৭৬ সালে এন্টনি ভ্যান লিউয়েনহুকের গবেষণায় আবারও প্রকৃতিতে অনুজীবের সন্ধান লাভ নতুন সত্য সামনে এনেছে। তার প্রায় ২০০ বছর পর ১৮৬০ সালে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর প্রাণীদেহে ব্যাক্টেরিয়ার জীবনচক্র আবিস্কার করে যখন ঘোষণা দিলেন “সকল রোগের কারণ এই ব্যাক্টেরিয়া” তখন থেকে পৃথিবী জুড়ে চিকিৎসা শাস্ত্র নতুন পথে অগ্রসর হতে লাগল।

তার ৬৮ বছর পরে ১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং আবিস্কার করেন প্রথম এন্টিবায়োটিক, ‘পেনিসিলিন’ –যা মানবদেহে ব্যাক্টেরিয়ার জীবনচক্র নষ্টের ক্ষমতা তৈরি করে। আধুনিক চিকিৎসার প্রাণদায়ী ওষুধ সেই এন্টিবায়োটিক এখন অনেক রকমের।

শুধু এন্টিবায়োটিক আবিস্কারের মাধ্যমে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ব্যাধি, বেদনা ও মৃত্যু দ্বারা আক্রান্ত বিশ্বমানবের যে উপকার করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে বড় হিসেবে স্থান করে নেওয়া কয়জন মানুষ তা করতে পেরেছে? আশ্চর্য! লুই পাস্তুর বা ফ্লেমিংয়ের মতো মানুষদেরকে আমরা শ্রেষ্ঠ ‘মহামানব’ ঘোষণা করিনি!

আপনারা যে যাই বলুন, আমরা আসলে মহামানবের সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। ‘মহাপুরুষ’ হিসেবে মানছি কিছু চালাক মানুষকে, যারা বহুমাত্রিক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সমাজে ভাইরাসের মতো সংক্রমণশীল বহু বিচিত্র বিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছে –যেগুলো সবই আজ “ঈশ্বরের বাণী” হিসেবে স্বীকৃত।

সত্যবাদী ঈশ্বর বিভিন্ন মহাপুরুষের কানে বিভিন্ন রকম কথা কিভাবে বলতে পারেন তা আমার বোধগম্য হয় না।

লুই পাস্তুর আবিস্কার করেন, জীবাণুই রোগের কারণ।

আপনি এক মহাপুরুষ; আপনি ইহজগতে বাস করে অজ্ঞাত পরকালও দেখতে পেয়েছেন! অথচ আপনি আপনার চোখের সামনে বিরাজ করা জীবাণুগুলোকে দেখতে পাননি! রোগের কারণ হিসেবে জীবাণুর অস্তিত্বের কথা বলে যেতে পারেননি! কি আশ্চর্য! এ কারণে আপনার ব্যাপারে আমার মনে সংশয় তৈরি হলে তা কি আমার অপরাধ?

আপনারা সব মহামানব (কিংবা অতিমানব) ঈশ্বরের কাছ থেকে শুনে বা দেখে এসে একমত হয়ে আমাদেরকে বলেননি, “মানুষের বার বার জন্ম ও বার বার মৃত্যু হবে।” আপনারা কেউ কেউ পরকালে স্বর্গ-নরক দেখেছেন। কেউ কেউ একটি সুনির্দিষ্ট শেষ বিচারের দিনের কথা বলেছেন, যেদিন নাকি সবাইকে এক মাঠে দাঁড় করিয়ে একসঙ্গে বিচার করা হবে। অন্যদিকে কেউ কেউ নিত্যদিনের কর্মফলে নিত্যকালের বিচারের কথা বলে গেছেন।

আপনারা সবাই নিজেকে সত্যবাদী দাবি করেছেন; মানে অন্যেরটা মিথ্যা! আপনাদের বিভিন্ন জনের বিভিন্ন কথার কারণে আমরা সাধারণ মানুষ আজ বিভক্ত। আপনারা কাছের অদৃশ্য জীবাণুগুলো দেখতে পাননি; অথচ অতি দূরের, ইহকালের বাইরের ও কালান্তরের গল্প ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন।

আপনারা ঈশ্বর, দেবতা, জ্বীন, পরী, অ্যাঞ্জেল, ফেরেস্তা, ভুত, পেত্নী –এমন অনেক রকম অদৃশ্য সত্তা দেখেছেন। অথচ আপনার নিজের দেহে বাস করা জীবাণুদের দেখতে পাননি! ওষুধ হলে ভূত-পেত্নী-জ্বীন তাড়াতে বলেছেন; শরীরে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরামর্শ দিতে পারেননি।

আপনাদের সবার কীর্তি ও কথা শুনে আমার মতো একজন সাধারণ বুদ্ধির মানুষের মনে যদি প্রশ্নের উদয় হয়, এ কি আমার অপরাধ হবে? যদি প্রকৃত সত্যের অন্বেষায় বুদ্ধিবৃত্তিকে নিয়োজিত করি তবে কি অপরাধ হবে? যদি নতুন কোনো সত্য আমার সামনে প্রতিভাত হয়, তবে পুরাতনকে মিথ্যা ঘোষণা করা কি অপরাধ হবে?

আমার ভাবনাগুলো অনেক মানুষের বিশ্বাসের প্রতিকূল হতে পারে। আমার বিশ্বাসই হয়তো ভিন্নরকম। কিন্তু এ যে আমার বিশ্বাস! হয়তো ভঙ্গুর বিশ্বাস। এগুলো বলার অধিকার আমার কেন থাকবে না? আমার উপলব্ধির কথা বললে আপনি কেন ক্ষিপ্ত হবেন?

মানুষ যা ভাবে, তা বলার অধিকার থাকা উচিত। বহু মানুষের উদ্ভট বিশ্বাস রক্ষার প্রয়োজনে একজন মানুষেরও সত্য বলার অধিকার এবং প্রশ্ন করার অধিকার কেড়ে নেয়া যায় না। অধিকার কেড়ে নিলে ধর্ম হয় না।

নিছক কিছু বিশ্বাস ধর্ম হতে পারে না। মিথ্যা বিশ্বাসের ঝুরি রক্ষা করাও ধর্ম নয়। ঈশ্বর সত্য স্বরূপ ও প্রেম স্বরূপ। সত্য ও প্রেম থেকে বিচ্যুত হলে ধর্ম থাকে না; তাতে বরং হৃদয় থেকে ঈশ্বরের মৃত্যু হয়।

ধর্মের ধারণা বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্ন রকম। বহু শাস্ত্র পাঠ করে আমি বুঝেছি, বিশ্বাসগুলো ধর্ম নয়; বরং বিভেদ ও বিদ্বেষের কারণ। বিভেদ ও বিদ্বেষ মানুষের হৃদয় থেকে প্রেমকে ছুড়ে ফেলে দেয়; হত্যা করে। প্রেম নিহত হলে ধর্ম নিহত হয়।

বহু শাস্ত্র পাঠ করে আমি বুঝেছি, ভালবাসাই ধর্ম। পরম কল্যাণ ও পরমার্থের সন্ধানই ধর্ম। গবেষণাই ধর্ম। সত্য সন্ধানই ধর্ম। প্রশ্ন করতে না পারলে সত্য সন্ধান হয় না। প্রেম ও সত্যের প্রতিকূল সকল অন্ধ বিশ্বাস তিরোহিত হোক। জয় মানুষ।

 

[পুলক ঘটক; সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ]

 ফেসবুক পেজফেসবুক প্রোফাইলটুইটার অ্যাকাউন্ট

বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

পশু হত্যার ধর্ম

0
সনাতন ধর্মে পশু বলির যূপকাষ্ঠ।

পুলক ঘটক: সনাতন ধর্মে আমিষ ভোজন এবং নিরামিষ ভোজন দুটোই আছে। তবে নিরামিষ আহারকে বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে। যারা তপস্যি বা আধ্যাত্ম পথের পথিক, তাদের জন্য আহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানারকম সংযম সাধনার পরামর্শ আছে। আর যারা সংসারের কঠিন কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত, তাদের জন্য আহার সংযম ও সাধনার বিষয়গুলি ততোটা কঠোর নয়।

যেমন ধরুন, ব্রহ্মচর্য ব্রতধারী ব্যক্তির জন্য প্রাণীহিংসা, মাংস ও মধু ভক্ষণ এবং স্ত্রীসংসর্গ সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে – যে পরামর্শ সংসারি বা গৃহীর জন্য নয়।

“বর্জ্জয়েন্মধু মাংসঞ্চ গন্ধং মাল্যং রসান্ স্ত্রিয়ঃ।
শুক্তানি যানি সর্ব্বাণি প্রাণিনাঞ্চৈব হিংসনম।।” ২/১৭৭।।
-মনু সংহিতা

অর্থ: ব্রহ্মচারী মধু, মাংস, সুগন্ধী, মালা, মিষ্টি, ও স্ত্রী বর্জন করবে। যে খাদ্য অম্ল হয়ে যেতে পারে তা ভক্ষণ করবে না এবং প্রাণিহিংসাও করবে না।

পশুহত্যা করা হয় মূলত ভোজনের জন্য। যারা আমিষ ভোজন করে তাদের জন্য পশু হত্যা সনাতন ধর্মে পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়। তবে এসব নৃশংস কর্ম যতটা কম করা যায়, তত মঙ্গল। যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অহিংস ও নিরামিষাশী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পশুপ্রাণীর প্রতি নির্মমতা বা অকারণে পশুহত্যা নিষিদ্ধ। অকারণে বা সামান্যবোধে কীটপতঙ্গ হত্যাও শাস্ত্রে নিষিদ্ধ। প্রতিদিনের পথচলায়, জ্ঞানে বা অজ্ঞানে যেসব ক্ষুদ্র পোকামাকড় বা প্রাণী হত্যা হয়, শাস্ত্রে তাকে পঞ্চসূনা পাপের অন্তর্গত করা হয়েছে।

পঞ্চসূনা গৃহস্থস্য চুল্লীপেষণ্যুপস্করঃ।
কণ্ডনীচোদকুম্ভশ্চ বধ্যতে যাস্তু বাহয়ন্॥ (মনুস্মৃতি ৩/৬৮)

অর্থ: চুল্লী, পেষণী (শিললোড়া), সমার্জ্জনী, উদুখল, মুষল ও জলকলস এই পাঁচটির নাম সূনা। এসবের দ্বারা যে ক্ষুদ্র পোকামাকড় বা জীবহিংসা হয় গৃহস্থ সেই পাপে লিপ্ত হয়।

এসব পাপ থেকে মুক্তির জন্য প্রতিদিন দান ও অধ্যয়ন ইত্যাদি পঞ্চ মহাযজ্ঞ করার নির্দেশ স্মৃতিশাস্ত্রে আছে। অর্থাৎ শাস্ত্রে প্রাণীহিংসা পাপ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। আবার শাস্ত্রে হিংসার বৈধতাও দেওয়া হয়েছে। এমনকি মানুষ হত্যারও বৈধতা আছে- যদিও সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নরহত্যা পাপ।

রাজা, ক্ষত্রিয় বা সৈনিকের জন্য যুদ্ধকে কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করা আছে। জাতিয়তাবাদী চেতনায় যুদ্ধকে “স্বাধীনতা যুদ্ধ” ”মুক্তিযুদ্ধ” এবং ধর্মে ”ধর্মযুদ্ধ” হিসেবে মহিমান্বিত করা হয়। অথচ যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় না। তার মানে সাধারণভাবে যা পাপ, বিশেষ ক্ষেত্রে তা কর্তব্য।

কিন্তু নিরীহ তৃণভোজী নির্বৈরী প্রাণীকে হত্যা করা তো আত্মরক্ষার যুদ্ধ নয়! এই হত্যায় ঈশ্বরের সন্তোষ্টি কিভাবে হয়? আসলে হত্যার মূল উদ্যেশ্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার; ঈশ্বরের সন্তোষ্টির জন্য পশুহত্যা করা প্রয়োজনীয় নয়। সনাতন ধর্মে পশুবলিকে প্রত্যেকের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। ধর্মের উদ্দ্যেশ্যে পশুবলির গণপ্রচলনও নেই। বরং নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

খাদ্য নিয়ন্ত্রণের একটি পথ হল, তুমি যা কিছু খাও তা ঈশ্বরকে অর্পন করে খেতে হবে। যা ঈশ্বরের কাছে অর্পণযোগ্য নয়, বা যা প্রসাদ নয়, তা খাদ্য হবে না। গীতায় সকল কর্মের সঙ্গে ভক্তির সংযোগ ঘটানো হয়েছে।

যৎকরোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ।
যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎকুরুষ্ব মদর্পণম্ ॥২৭/৯॥

অর্থ: তুমি যা অনুষ্ঠান কর, যা আহার কর, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্তই আমাকে সমর্পণ কর।

খাদ্য গ্রহণ একটি দৈনন্দিন জীবনকর্ম। ভক্তির পথে চললে এই জীবনকর্মও ঈশ্বরে অর্পিত হওয়া দরকার। কিন্তু সব ধরনের খাদ্য সব দেবতাকে অর্পন করা যায় না। যে দেবতার যে ফুল প্রিয়, তাকে সেই ফুল দিয়ে পূজা করতে হয়। বিভিন্ন দেবতার পূজা বিভিন্ন রকম বস্তুতে হয়। এখানে বহুদেবতা পূজার সাথে একেশ্বরবাদের তাত্ত্বিক সন্নিবেশ।

একেশ্বরবাদ সনাতন ধর্মের মৌলিক মতবাদ হলেও এখানে একের মধ্যে বহুর উপস্থিতি। ছান্দোগ্য উপনিষদের ”একমেবাদ্বিতীয়ম” (৬/২/১) ঘোষণায় ঈশ্বরকে শুধু ‘এক’ বলা হয়নি। তাকে “অদ্বিতীয়” বলা হয়েছে। শুধু “এক” বললেই কথাটা ফুরিয়ে যায়। কিন্তু বলা হল, “অদ্বিতীয়”। তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো সত্ত্বার অস্তিত্বই নেই। দৃশ্যমান বা অদৃশ্য সকল কিছুই ঈশ্বরের একেকটি রূপ বা বিভূতি। ঈশ্বর এক হলেও তার রূপ এক রকম নয় –বহুরূপ; অনন্তরূপ। এক আগুন যেমন অসংখ্য প্রদীপে জ্বললে অসংখ্য রূপে প্রতিভাত হয়, অনেকটা তেমনই। সে আগুন শুধু প্রেমের উষ্ণতা দেয় না; ধ্বংসাত্মক ও কালাত্মক হতে পারে।

প্রেমময় স্রষ্টার ধ্বংসাত্মক রূপটিও নিত্যদিনের। ঐরূপে তিনি “করাল বদনাং ঘোরাং” মহাকাল বা মহাকালী প্রকৃতি –প্রলয়রূপী বা রূপিনী– ঈশ্বর যেন স্বাক্ষাৎ মৃত্যুসরূপ। সকল প্রাণীর মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুরূপী, সর্বগ্রাসী, সর্বনাশী যে ঈশ্বর, তার পূজায় জীবনকে আহুতি দিতে হয়; সেখানে পশুবলি হয়। নিষ্ঠুর মৃত্যুদেবতার পূজায় বলি হয়। ঈশ্বরকে আহুতি দেয়ার ছলে মানুষ নিজেই সে পশুমাংস আহার করে।

সকল প্রাণীর মৃত্যু অনিবার্য। এটা মেনে নিয়েই বোধকরি মৃত্যুরূপী দেবতার কাছে নিরীহ প্রাণীকে বলি দিয়ে নিজের উদরপূর্তিকে মানুষ জায়েজ করে নেয়। ঈশ্বরের যে সকল শান্ত সৌম্য প্রেমরুপী দেবরূপ আছে, সে রূপের পূজায় বলি নেই। কালরূপের পূজায় বলি আছে।

কিন্তু প্রতিদিন কালীপূজা করা বা মহাকালের পূজা করা এবং বলি প্রদান করে প্রসাদ হিসেবে মাংস ভক্ষণ সহজ হয় না। ফলে ভক্তিবাদী ধর্মীয় ব্যবস্থা নিত্যদিন পশুহত্যার নির্মমতা পক্ষান্তরে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ইদানিং পূজায় পাঁঠাবলির জন্য হিন্দুরা আর অপেক্ষা করে না; বাজার থেকে খাসির মাংস কিনে এনে তৃপ্তি মেটায়।

সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদী ও ক্রমোন্নতির ধর্ম। এই ধর্মের আদি বৈশিষ্টে পশুহত্যার প্রচলন ছিল এবং ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। আদিম মানুষের জীবন-জীবীকার মূলে ছিল পশু শিকার। বৈদিক যাগযজ্ঞে ও তন্ত্র সাধনায় পশুবলি এবং পৌরাণিক রাজাদের মৃগয়া বা শিকারের নেশায় সে যুগের জীবন-বাস্তবতার প্রতিফলন রয়েছে। একদিকে জীবন রক্ষার জন্য শিকারের অনিবার্যতা, অন্যদিকে বিকশিত মানবতাবোধ, তথা প্রাণীর প্রতি দরদ –এই দুইয়ের টানাপোড়েন সেই প্রাচীন কালেই মানুষকে তত্ত্বের দ্বন্দ্বে নিয়োজিত করেছিল।

ভক্তিবাদী সনাতন ধর্ম বা প্রেমধর্ম বিকশিত হওয়ার পূর্বযুগে পশুবলি ও আমিষ আহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বুদ্ধের “অহিংসা পরম ধর্ম“ ঘোষণাকে সে হিংসার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহ বলে মনে হয়। সনাতন ধর্মে অহিংস বৈষ্ণবীয় ধারার বিস্তার পশুহত্যাকে প্রবলভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। প্রাচীন বেদে এবং সাংখ্য দর্শনে সাধারণভাবে জীবহিংসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সম্ভবত স্বামী বিবেকানন্দের একটি লেখায় পড়েছিলাম, নিয়মিত নিরামিষ খেলে মানু্ষের হিংসাবৃত্তি হ্রাস পায়। এতে শরীর অপুষ্ট হয় না। গরু, মহিষ ও হাতির মতো তৃণভোজী প্রাণীরা মাংসভোজী মানুষের চেয়ে দুর্বল নয়। মানুষের দাঁত ও শারীরিক গঠন মাংসাশী প্রাণীদের মতো নয়; বরং তৃণভোজী প্রাণীদের সাথে মিল বেশি। বিজ্ঞানের আধুনিক আবিস্কার অনুযায়ী এই ধারণা কতটা সত্য জানি না। তবে আমার মানবিক বোধে মনে হয়, প্রাণী হত্যা করে বাঁচার চেয়ে যারা অহিংস পন্থায় বাঁচতে চায় তারা উত্তম।

আমি মাছ-মাংস ভোজন করি। কিন্তু অহিংসার আদর্শে যারা নিরামিষ আহার করে, তাদেরকে আমার চেয়ে উন্নত মনে করি। ধর্মীয় গ্রন্থগুলো পাঠ করে অহিংসার দর্শনে আমি যতটা প্রভাবিত হয়েছি, আমার মনোজগতকে তার চেয়ে বেশি আলোরিত করেছে মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী “The Story of My Experiments with Truth”। আমিষ আহার না করেও মানুষ ভালভাবে বাঁচতে পারে –গান্ধীজিসহ আমার চারদিকের বহু মানুষকে দেখেছি। আমি মাছ-মাংস আহার করি বটে, কিন্তু আত্মগ্লানিতে ভুগি; নিজেকে অপরাধী মনে হয়। নিজেকে তখন বন্য প্রাণীর চেয়ে উন্নত মনে হয় না।

জঙ্গলবাসী আদিম মানুষের যে জীবনধারা তার সঙ্গে সহিংস পশুর জীবনধারার সাদৃশ্য বেশি। সেই বুনো মানুষ সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে উন্নত মানুষ হয়ে ওঠার সাধনায় লিপ্ত আছে। সে সাধনায় অহিংসার দর্শন নিশ্চয় উন্নততর। মানবিকতার মহোৎকর্ষই ধর্ম। পশুহত্যাকে ত্যাগ বা মহত্ত্ব বলার সুযোগ নেই। ক্ষেত্রবিশেষে বড়জোর প্রয়োজন বলতে পারি। মানুষ পশুর চেয়ে বেশি হিংস্র – এই বদনাম দূর হোক।

”মা হিংস্যাৎ সর্ব্বা ভুতানি” –কোনো প্রাণীরই হিংসা করবে না।

 

[পুলক ঘটক; সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ]

 ফেসবুক পেজফেসবুক প্রোফাইলটুইটার অ্যাকাউন্ট

বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

হিন্দু আইনে গলদ

0
নারী দেবী না মানুষ?
  • নেই বিচ্ছেদের অধিকার; ভরণপোষণে বন্দি নারীরা
  • স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের ব্যবস্থা নেই; স্বামীর একাধিক বিয়ের সুযোগ
  • আংশিক সংশোধন করে সময়োপযোগী করা জরুরি —দাবি আইনজ্ঞদের
  • রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় মিলছে না আইনি প্রতিকার
  • নারীদের সম্পত্তি ও বিচ্ছেদের অধিকার না থাকা বৈষম্য —ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ -সাবেক আইনমন্ত্রী
  • এমন ব্যবস্থা পুরো সমাজকেই অসহায় করে রেখেছে —রানা দাসগুপ্ত প্রসিকিউটর, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল
  • প্রতিটা ধর্মেরই ধর্মীয় শাস্ত্রগুলো নারীবান্ধব নয় —ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সাবেক প্রসিকিউটর, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল
  •  নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে শাস্ত্র দিয়ে আটকে রাখা উচিত নয় —ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট  

আমার সংবাদ: বৈবাহিক জীবনে স্বামী কর্তৃক নির্যাতন, নিপীড়ন ও নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন হিন্দু নারীরা। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তবে আইনি প্রতিকার মিলছে না।

হিন্দু আইনে নারীর সুরক্ষা নামমাত্র। নেই বিচ্ছেদের অধিকার, পাচ্ছে না স্বামী ও পিতৃ সম্পত্তির ভাগ। স্বামী দুশ্চরিত্র, লম্পট, নির্যাতনকারী, কিংবা নিরুদ্দেশ হলেও আইনগতভাবে নেই তালাক দেয়ার সুযোগ। চলছে শাস্ত্র মতোই। বনিবনা না হলে নারীকে শুধুই আলাদা থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু হিন্দু আইনে নারীদের বিচ্ছেদের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। ফলে বিয়েরও সমাপ্তি ঘটছে না। যার কারণে নানা যন্ত্রণা বঞ্চনা সহ্য করেই সংসারে টিকে থাকতে হয় নারীদের।

আবার আইনে স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের ব্যবস্থা না থাকলেও স্বামীর আছে একাধিক বিয়ের সুযোগ। আর সেই সুযোগেই একাধিক বিয়েও করছেন অনেক পুরুষ। নারীদের দাম্পত্য কলহ মেটাতে শুধু আপস-মীমাংসাই যেনো একমাত্র ভরসা। আবার আপসেও হয়রানির শিকার হচ্ছে নারী। একপেশে সালিশে স্বামীর কাছে পরাজিত হচ্ছেন স্ত্রী। অনেকে পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় ভরণপোষণও। অত্যাচার থেকে যেনো বেরোনোর কোনো পথ নেই। যেনো নালিশেরই জায়গা নেই। যেনো মুক্তির সকল পথ অবরুদ্ধ। এতে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালে পুরনো হিন্দু আইনের সংস্কার হলেও নানা দাবির পরও বাংলাদেশে এ আইনের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সংস্কারেরও নেই কোনো উদ্যোগ। আর হিন্দু পারিবারিক আইনে সংস্কার না হওয়ায় নানা প্রকারের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারীরা।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, অধিকাংশ নারীই লোকলজ্জার ভয়ে দিনের পর দিন ভোগ করছেন নির্যাতন। বিধবা হলেই আশ্রিত হয়ে বাস করতে হয় মৃত স্বামীর বাড়িতে। পান না স্বামীর সম্পত্তির কোনো ভাগ। আবার বিধবা নারীর ছেলে সন্তান না থাকলে পড়তে হয় মহা বিপাকে, তখন স্বামীর বাড়িতে টিকে থাকাও তার দায় হয়ে পড়ে বলে তাদের দাবি।

এমনই একজন সুপ্রিয় দত্ত। বাড়ি ফরিদপুর শহরের নীলটুলী এলাকায়। প্রায় দুই দশক আগে আকস্মিক অসুস্থতায় স্বামী মারা যায়। তখন তার কোলে দুই শিশুসন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেখাপড়া করা এই নারী ফরিদপুরে একটি কলেজে শিক্ষকতা করার সুবাদে আর্থিকভাবে সমস্যায় তাকে পড়তে হয়নি। তবে বিধবা হওয়ার পর থেকে তিনি যেনো শ্বশুরবাড়িতে আশ্রিত আছেন, এমনটাই তার মনে হয়। সুপ্রিয় দত্ত বলছিলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি শ্বশুর বাড়িতে আছি। আমার একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। আমার ছেলে আছে বলে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে পারছি। কিন্তু সম্পত্তির ওপর আমার কোনো মালিকানা নেই। বাবার বাড়িতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার নিজের বলে কোনো সম্পত্তি নেই। শ্বশুর বাড়িতে আমি আশ্রিত বলতে পারেন। তিনি মনে করেন, এ ধরনের ব্যবস্থায় নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আসলে এর সংস্কার প্রয়োজন। বিধবা নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে কারণ আইনি কোনো সুরক্ষা নেই, তাদের আবার বিয়ে করারও সুযোগ শাস্ত্রে নেই। তখন তাদের অসহায় পরিস্থিতি মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

আইনজ্ঞরা বলছেন, হিন্দু আইন সংশোধন করে সময়োপযোগী করা জরুরি- এটা সময়ের দাবি। মূলত এ জাতীয় সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সার্বজনীন পারিবারিক আইন। কারণ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ফৌজদারি কোনো অপরাধ যেমন চুরি, মারামারি কিংবা খুনের জন্য যদি জাতি, ধর্ম-বর্ণ ও গোত্র ভেদে কোনো রকম বৈষম্য প্রদর্শন করা না হয়, তবে কেন বিয়ের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বৈষম্য মেয়েদের মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি হিন্দু বিয়েতে রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যতামূলক বিধান নেই। ফলে বিয়ে, তালাক কিংবা একই স্বামীর একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনি সহায়তা পান না হিন্দু নারীরা। এভাবে হিন্দু নারীরা বিয়ের ক্ষেত্রে ভয়াবহভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অথচ বিয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম আইনে রয়েছে বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রির বিধান। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, এ বিধান না মানা হলে শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকার হিন্দু নারীরা এ ক্ষেত্রে প্রতিকার পায় না। অথচ ভারতে হিন্দু বিয়েতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিয়ে-বিচ্ছেদের অধিকার না থাকায় হিন্দু নারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। বিধবা নারীদের সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নও এখন উঠছে। ধর্মে বিয়ে-বিচ্ছেদের ব্যবস্থা না থাকায় আমৃত্যু একা থাকতে হয় নারীকে, এটা মেনে নেয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। একবার বিয়ে হলে যেহেতু বিচ্ছেদের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেই সূত্র ধরে নারীদের দ্বিতীয় বিয়ে করারও অধিকার নেই। অন্যদিকে হিন্দু পুরুষদের স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই একাধিক বিয়ে করার সুযোগ রয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নির্যাতনের নানান অভিযোগে হিন্দু নারীদের মধ্যে স্বামী থেকে আলাদা থাকার প্রবণতা বাড়ছে। হিন্দু নারীরা মূলত ঘরে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে স্বামী থেকে আলাদা থাকার আবেদন নিয়ে আসেন। তখন সালিশ-সমঝোতার মাধ্যমে ভরণপোষণের অর্থ নিয়ে তারা আলাদা হচ্ছেন। বিয়ের কিন্তু সমাপ্তি ঘটছে না। সেখান থেকে তাদের বেরোনোর কোনো পথ নেই। হিন্দু নারীরা এখন বিয়ে-বিচ্ছেদের অধিকার চাইছেন। যখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে বা জীবন আটকে যাচ্ছে, তখন অনেক নারী ধর্ম বা শাস্ত্র সবকিছু এড়িয়ে অন্তত স্বামী থেকে আলাদা থাকছেন বা থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বড় অংশই চোখ বুঁজে সব মেনে নিচ্ছেন। আর সেখানে বন্ধনের চেয়ে জীবন টিকিয়ে রাখাই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন।

জানা যায়, হিন্দু আইনটি ব্রিটিশ আমলের। ১৯৫৫ সালে এ আইটি পাস হয়। কিন্তু তাতে বিয়ে-বিচ্ছেদ, পরিবার বা সম্পত্তির মালিকানা প্রশ্নে ওই ধর্মের শাস্ত্রের ব্যবস্থাগুলোই রয়েছে। হিন্দুমতে, বিয়ে রেজিস্ট্রি করার উদ্দেশ্য হলো, ধর্মীয় রীতি ও সকল নিয়ম কানুন মেনে বিয়েটা হয়েছে, সেটা পরবর্তীতে প্রমাণ করার জন্য নথিভুক্ত করা। এটা ছাড়া বিয়ে রেজিস্ট্রির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। হিন্দু আইন সংস্কারের লক্ষ্যে ২০১২ সালে অন্তত ৫০টি নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে একটি খসড়া সুপারিশমালা তৈরি করে তা আইন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছিলো সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার, সুনির্দিষ্ট কারণ সাপেক্ষে আদালতের মাধ্যমে হিন্দু নারী-পুরুষের বিয়ে-বিচ্ছেদ ও পুনঃবিয়ে, হিন্দু নর-নারীর বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং দত্তক নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়। কিন্তু পরে বিষয়টি আর বেশিদূর এগোয়নি। বিয়ে-বিচ্ছেদ কিংবা তালাকের ক্ষেত্রে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী নারীরা নিকাহনামার ১৮ নম্বর কলামের শর্তসাপেক্ষে স্বামীকে তালাকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। কিন্তু হিন্দু নারীর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো আইন বা বিয়ের দলিল নেই। হিন্দু বিয়ে নিবন্ধন করতে সরকার ২০১৩ সালে একটি আইন করলেও সেটি বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।

হিন্দু আইনে যা আছে : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতের মিল হচ্ছে না বা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অসুবিধা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে জুডিশিয়াল সেপারেশনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে হয়। আদালত ওই আবেদন যথোপযুক্ত ও যুক্তিসঙ্গত মনে করলে, বিয়ে-বিচ্ছেদ না করেও আদালতের মাধ্যমে দু-পক্ষের আলাদা হয়ে থাকার বিধান আছে। অনেক সময় দু-পক্ষ আলাদা থাকার ফলে নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো বুঝতে পেরে আবার একসাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। কিন্তু যদি এক বছর আলাদা থাকা সত্ত্বেও স্বামী-স্ত্রীর মতপার্থক্য না কমে ও মীমাংসার কোনো সম্ভাবনা তৈরি না হয় সে ক্ষেত্রে যেকোনো পক্ষ আদালতের কাছে বিয়ে-বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) জন্য আবেদন করতে পারেন। আদালত তা মঞ্জুর করলে তারপর বিয়ে করার কোনো বাধা থাকে না। তবে জুডিশিয়াল সেপারেশন চলাকালীন কেউ বিয়ে করতে পারেন না, কারণ আইনের চোখে তখনো তারা স্বামী ও স্ত্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, হিন্দু আইনে নারীদের তালাকের সুযোগ দিয়ে দ্রুত সংশোধন করা উচিত। কারণ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো নারীর ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক। একজন নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে আইন দিয়ে আটকে রাখাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে তাই আইনটি সময়োপযোগী করা জরুরি। নারীরা কার সাথে সংসার করবে বা করবে না সেটার বিষয়ে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিত। এক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতিনীতিকে আবদ্ধ করে কারো জীবনের ওপর সেটা চাপিয়ে দেয়া কাম্য নয়। হিন্দু নারীরা চাইলে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের দারস্থ হতে পারেন। আশা করি আদালতে এ বিষয়ে ভালো সুরাহা পাওয়া যাবে।

হিন্দু আইন সংস্কার হওয়া উচিত কি-না এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নারী অধিকারে সোচ্চার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, প্রতিটা ধর্মের শাস্ত্রগুলো নারীবান্ধব নয়। কিন্তু যুগের প্রয়োজনে বিভিন্ন সমাজ বা দেশ তাদের ধর্মীয় আইনগুলো সংস্কার বা পরিবর্তন করেছে। যেমন ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হয়েছে, তারা ধর্মীয় শাস্ত্রের দিকে না তাকিয়ে হিন্দু আইন পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করেছে। পিতৃ সম্পত্তি ও বিয়ে-বিচ্ছেদ অধিকার দুটোই তারা আইনে সংযুক্ত করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা নিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি। আমাদের দেশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কেউই নারীকে সম্পত্তি দিতে চায় না, তাই এ আইন সংশোধনের বিষয়ে পুরুষের আগ্রহ নেই। সেজন্যই যুগের পর যুগ পুরনো আইনেই চলছে। আর হিন্দু নারীরা তখনই বিয়ে-বিচ্ছেদের অধিকার চাইছেন যখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে বা জীবন আটকে যাচ্ছে। তখন অনেক নারী ধর্ম বা শাস্ত্র সবকিছু এড়িয়ে অন্তত স্বামী থেকে আলাদা থাকছেন বা থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বড় অংশই চোখ বুঁজে সব মেনে নিচ্ছেন। আর সেখানে বন্ধনের চেয়ে জীবন টিকিয়ে রাখাই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই নারীদের ইচ্ছাকে প্রধান্য দিয়ে হিন্দু আইন সংস্কার করা উচিত।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত নির্যাতিত নারীদের আইনি সহায়তা দেন। তিনি বলেছেন, অনেক নারী নির্যাতিত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে স্বামী থেকে আলাদা থাকেন। কিন্তু এই ব্যবস্থার আইনগত কোনো ভিত্তি থাকে না। ধর্ম অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন থাকতে হবে আমৃত্যু। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শাস্ত্র বা মন্ত্র তাদের জায়গায় আছে। আর বাস্তবতা হচ্ছে, ঘরে স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধও আছে। স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে একা থাকছে। এই সুযোগে স্বামী আরেকটা বিয়ে করছে। এটাই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিধবা নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে কারণ আইনি কোনো সুরক্ষা নেই, তাদের আবার বিয়ে করারও সুযোগ শাস্ত্রে নেই। তখন তাদের অসহায় পরিস্থিতি মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। রানা দাশগুপ্ত মনে করেন, এমন ব্যবস্থা পুরো সমাজকেই অসহায় করে রেখেছে। বিধবা নারীদের একটা বড় অংশই চোখের জল ফেলে বাকি জীবনটা পার করেন। আইনজীবী হিসেবে আমার কাছে অনেকে সহায়তা চান। কিন্তু আইনগতভাবে আমার কিছুই করার থাকে না। তখন সন্তানদের ডেকে তাদের মায়ের সাথে সাথে ভালো আচরণ করার অনুরোধ করে দায়িত্ব শেষ করি।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, হিন্দু নারীদের সম্পত্তি বিয়ে-বিচ্ছেদের অধিকার না থাকা বৈষম্য তো বটেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়ন হয়েছে। সমানাধিকারের প্রশ্নে আমাদের দেশেও এ ধরনের আইন প্রণয়ন হওয়া উচিত।

 

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি⇒ আমার সংবাদ প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১

ওয়েবসাইট⇒ বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ

ফেসবুক গ্রুপ লিংক⇒ হিন্দু আইন সংস্কার চাই

উত্তরাধিকার আইন সংস্কার ও হিন্দুসম্প্রদায়ের আশঙ্কা

1
নারীর হাতে ফুল। (ছবি- অ্যাডোবি স্টক- VOA)

নির্তেশ সি দত্ত: হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষা নিয়ে গত ১৪ মে ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ হাইকোর্ট রুল জারি করলে হিন্দু সম্পত্তি উত্তরাধিকার আইন সংস্কারের বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। হাইকোর্টের রুলে হিন্দু নারীর বিবাহ নিবন্ধন, বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক ও সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার সুরক্ষায় নীতিমালা বা নির্দেশনা গ্রহণে রুল জারি করলেও আলোচনা হচ্ছে মূলত সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার আইন নিয়ে। সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার আইনের পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনায়ই সোশাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। অনেকে উজ্জীবিত হচ্ছেন, অনেকে আশঙ্কায় আছেন, অনেকে হাসি তামাসাও করছেন। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্পত্তি আইন সংস্কারের বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। কারণ ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাগের পর থেকে পাকিস্তান হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিশাল পরিমাণ ব্যক্তিসম্পত্তি বেদখল হওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস আছে।

নির্তেশ সি দত্ত

হিন্দু নারীর বিবাহ নিবন্ধন, বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক ও সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার সবক্ষেত্রেই নারী-পুরুষে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে, সব ক্ষেত্রেই নীতিমালা প্রণয়ন জরুরী। সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে হিন্দু নারী-পুরুষে জঘন্যতম বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। বর্তমান হিন্দু পারিবারিক আইনে উত্তরাধিকার হিসেবে হিন্দু নারী সম্পত্তির মালিকই হতে পারে না, হিন্দু পুরুষেরা সকল উত্তরাধিকার সম্পত্তির মালিক হয়। এটা হতে পারে না। এই আইন স্পষ্টভাবে হিন্দু নারীদের শত শত বছর বঞ্চিত করেছে। কাজেই নারী,পুরুষ ও অন্যান্য লিঙ্গনির্বিশেষে সমান উত্তরাধিকার আইনের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক দাবী। ফলে হিন্দু সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছে। এই আইন হতে হবে শুদ্ধ স্বচ্ছ নিরপেক্ষ এবং ফাঁকফোকড়, অসঙ্গতি ও জটিলতাবর্জিত। দুরভিসন্ধিমূলকভাবে অসঙ্গতি, আইনের মারপ্যাচ ও ফাঁকফোকড় রেখ এই আইন সংস্কার হলে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় নতুন করে বিপাকে পড়বে। বিগত বছরে প্রস্তাবিত হিন্দু উত্তরাধিকার খসড়া আইনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও মারপ্যাঁচ রয়ে গেছিল। এমনিতেই শক্রসম্পত্তি নামক কালো আইনে, ভূমি কর্মকর্তাদের অসততা, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ অধ্যাদেশের আইনি জটিলতা, প্রণীত আইনের ফাঁকফোকড়ে, আইন আদালত সংখ্যালঘু বান্ধব না হওয়া ইত্যাদি বহু কারণে লক্ষ লক্ষ একর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রায় ২৬ লাখ একর জমি দখল হয়ে গেছে বা ২৬ লক্ষ একর জমি থেকে সংখ্যালঘুরা উচ্ছেদ হয়ে গেছে। এই জমির পরিমাণ ইজরাইল রাষ্ট্রের অর্ধেক! অর্থাৎ, ইজরাইল ফিলিস্তিনিদের যে পরিমাণ জমি দখল করেছে তার অর্ধেক বাংলাদেশের হিন্দুরা হারিয়েছে। কাজেই, সম্পত্তির আইন সংস্কার বিষয়ে হিন্দুদের আশঙ্কা হওয়া মোটেই অমূলক নয়। তাই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্পত্তি আইন সংস্কারে এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। পুনঃপুন যাচাই বাছাই করে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে খসড়া প্রণয়ন করতে হবে।

হিন্দু ভাই, বোন, বাবা, মা যারা বলছেন- হিন্দু মেয়েরা উত্তরাধিকারে সমান সম্পত্তি পেলে ধর্মান্তরিত হয়ে চলে যাবে তারা ভুল বলছেন। হিন্দু ছেলেরাও ধর্মান্তরিত হয়, উত্তরাধিকারে প্রাপ্য মেয়েদের সম্পত্তি না দিয়ে সেই অংশসহ নিজের সম্পত্তি নিয়েই ধর্মান্তরিত হচ্ছে। সম্ভবত সেই জন্যই বিগত বছরের প্রস্তাবিত হিন্দু উত্তরাধিকার খসড়া আইনে ধর্মান্তরিত উত্তরাধিকার বিষয়ে একটি ধারা রাখা হয়েছিল।

প্রস্তাবিত সেই হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছিল-

“গ. ধর্মান্তরিত ব্যক্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ

কোন হিন্দু নারী, পুরুষ বা হিজরা (তৃতীয় লিঙ্গ) যদি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি গ্রহণ করার পূর্বে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা ধর্মান্তরিত না হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশটি তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সমান অংশ পাবেন। কিন্তু কোন হিন্দু নারী, পুরুষ বা হিজরা (তৃতীয় লিঙ্গ) যদি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি গ্রহণ করার পর অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা ধর্মান্তরিত না হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন।”

অর্থাৎ হিন্দু নারী বা পুরুষ উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিক হওয়ার পরে ধর্মান্তরিত হলে আর তার স্ত্রী পুত্রকন্যারা ধর্মান্তরিত না হলে সেসব নিরপরাধ হিন্দু স্ত্রী পুত্রকন্যারা উক্ত উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ধর্মান্তরিত ওই ব্যক্তি পরবর্তীতে অহিন্দু বিয়ে করলে সেই ঘরের অহিন্দু স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা তার উত্তরাধিকার পাবে। আর তার ধর্মান্তরিতপূর্ব হিন্দু স্ত্রী পুত্রকন্যারা উত্তরাধিকারের সম্পত্তি পেতে হলে হিন্দু স্ত্রী পুত্রকন্যাদের তার মত ধর্মান্তরিত হতে হবে। সাবাস! এই খসড়া নিশ্চিতভাবেই কি সংখ্যালঘু হিন্দুদের ধর্মান্তরিত হওয়াকে উৎসাহিত করে না?? বা স্ত্রী পুত্রকন্যারা ধর্মান্তরিত না হওয়ার কারণে সম্পত্তি বঞ্চিত হওয়া কি হিন্দুদের সম্পত্তি অন্যধর্মের হস্তগত হওয়ার সহজ পথ বাৎলে দেয় না??

প্রস্তাবিত সেই হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের খসড়ায় আরো অনেক অসঙ্গতি ও মারপ্যাচ ছিল- যেমন, এখানে ‘স্ত্রী’র পাশাপাশি ‘স্বামী’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি। প্রশ্ন হলো, নারী ধর্মান্তরিত হলে তার স্বামীর ক্ষেত্রে কী হবে তা ওই খসড়ায় বলা হয়নি। অর্থাৎ শুধুমাত্র ধর্মান্তরিত পুরুষকে টার্গেট করে ধারাটি লেখা হয়েছিল। ধর্মান্তরিত নারীর জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে, নাকি হবেনা- সেই ধোঁয়াশা থেকেই গেছে। সুতরাং হিন্দু নারী ধর্মান্তরিত হলে তাদের জন্য প্রচ্ছন্ন আনুকূল্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। যে হিন্দু নারীদের বৈষম্য দূর করার জন্য আইন করা হচ্ছে, সেই হিন্দু নারীরা যদি আইনের মারপ্যাচে বঞ্চিতই হয় তবে বিষয়টি অধিক বিড়ম্বনার হবে। এইসব অসঙ্গতিপূর্ণ আইন প্রণয়ন হয়ে গেলে সেটা সংশোধন করার আন্দোলন আরো কঠিন হবে। তাই সার্বিক বিবেচনায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অভিন্ন সমান উত্তরাধিকার আইন প্রণয়ন করা হউক। একই সাথে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটিও প্রণয়ন করা হউক।

লেখক- নির্তেশ সি দত্ত 

 

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি⇒ লেখাটি গ্রামনগর বার্তা থেকে সংগৃহিত

ওয়েবসাইট⇒ বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ

ফেসবুক গ্রুপ লিংক⇒ হিন্দু আইন সংস্কার চাই

বিবাহ বিচ্ছেদ বিতর্ক: হিন্দু নারীরা মানুষ নয়, দেবী

0

পুলক ঘটক: বাংলাদেশের হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের বৈধতা নেই। বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়াই হিন্দু পুরুষরা যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারে; কিন্তু হিন্দু নারীদের পুন:বিবাহের অধিকার নেই। কোনো হিন্দু নারীর স্বামী অসৎ ও দুবৃত্ত হলে কিংবা তার সঙ্গে বসবাস না করলেও নিজেকে সেই পুরুষেরই স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আজীবন সতীত্বের পরীক্ষা দিয়ে বাঁচতে হবে হিন্দু নারীকে।

দেশের একশ্রেণীর হিন্দু বলছে, নারীরা মানুষ নয়, তারা দেবী। তাদের জন্য কোনো পার্থিব অধিকারের প্রয়োজন নেই। এই ধারণার ভিত্তিতে বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের অধিকার বঞ্চিত রাখা হয়েছে এবং এই অধিকারহীনতা বজায় রাখার জন্য প্রাণপণে মরিয়া একটি মহল। এই ভিডিওতে তাদের কথাগুলো এসেছে। ফেসবুক লাইভে তারা যা বলেছেন তা নিয়ে সমাজকে ভাবতে হবে।

 

বাসাইলে সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকির অভিযোগ

বাসাইলে সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকির অভিযোগ উঠেছে কাজী অলিদের বিরুদ্ধে | Deepto News : দীপ্ত নিউজ
দীপ্ত সংবাদ: বাসাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী অলিদ ইসলাম পালিত সাগর বাহিনীর বিরুদ্ধে আনারস প্রতীকে ভোট দিতে সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকী দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (২ জুন) হুমকির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ও উপজেলা আ.লীগের উপ–দপ্তর সম্পাদক মো. ফরিদ মিয়া
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত ৩১ মে ও ১ জুন সন্ধ্যা ৭টার পর বাসাইল পৌর শহরের পালপাড়াসহ অন্যান্য হিন্দু পাড়াগুলিতে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী সাগর বাহিনী দ্বারা আনারস মার্কায় ভোট দেয়ার দিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
নামপ্রকাশে একাধিক সংখ্যালঘু ভোটার হুমকির কথা স্বীকার করেছেন। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ভয়ে প্রকাশ্যে হুমকির কথা তারা বলতে পারছেন না। তবে হুমকির বিষয়ে ভারা হিন্দু–বৌদ্ধ–খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা এবং উপজেলা শাখা নেতৃবৃন্দদের জানিয়েছেন।
অভিযোগকারী মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ও উপজেলা আ.লীগের উপ–দপ্তর সম্পাদক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, আমাদের একাধিক সংখ্যালঘু সমর্থক ভোটারকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ পেয়েই ওই আবেদন করা হয়েছে। নিরাপত্তা জনিত কারণে আমাদের সমর্থক সংখ্যালঘু ভোটাররা প্রকাশ্যে হুমকির কথা স্বীকার করছেন না।
এ বিষয়ে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক অভিযুক্ত সাগর এর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আর এ ধরণের অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেছেন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী অলিদ ইসলাম।
এ ঘটনায় হিন্দু–বৌদ্ধ–খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদ বাসাইল উপজেলা কমিটির কোন নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে আনারস প্রতীকের প্রার্থী কাজী অলিদ যেভাবে তার পালিত সন্ত্রাসী সাগর বাহিনী দিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে সাগর বাহিনীর প্রধান সাগর ও তার সঙ্গীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা শাহরুখ খান জানান, সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানা অফিসার্স ইনচার্জকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৫ জুন বাসাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলা। এ উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার ৮৩০জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৭৬ হাজার ১৯৮ আর পুরুষ ভোটার ৭৫ হাজার ৬৩১ জন। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ৭ আর মহিলা ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট ⇒সোর্স লিংক।।

⇒বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

নিজের নামে সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে বাড়িছাড়া করলো ছেলে

0

নাজমুল হাসান (ডাসার) মাদারীপুর: মাদারীপুরের ডাসারে সৈয়দা শান্তি নাহার (৭০) নামে এক বৃদ্ধা মায়ের সম্পত্তি ও ব্যাংকে থাকা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বড় ছেলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বৃদ্ধা সৈয়দা শান্তি নাহার ছেলেকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সরেজমিন সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার পূর্ব ডাসার গ্রামের শান্তি নাহার নামে এক বৃদ্ধা তার বড় ছেলে সৈয়দ জানে আলম স্বপনের কাছে ছিলেন। অসুস্থ মাকে দেখশোনা করার কথা বলে তার কাছে বেশ কিছুদিন রাখেন।

এসময় মায়ের নামে থাকা মাদারীপুর শহরের একটি বাড়ির জমি স্বপন লিখে নিয়েছেন। এছাড়াও তার জমি বিক্রির ব্যাংকে থাকা অর্থ আত্মসাৎ করছেন তিনি। বৃদ্ধা মায়ের অভিযোগ, সম্পত্তি ও টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনদিন খাবার না দিয়ে বড় সন্তান ও তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, একাধিক বার তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।

এই ঘটনায় প্রতারণা করে সম্পত্তি ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে মাদারীপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন বৃদ্ধা। মামলায় বড় সন্তান সৈয়দ জানে আলম স্বপন ও তার স্ত্রী কাজী শিবলী আক্তার রুমা এবং তার নাতনী সৈয়দ রাহুল আলম শুভকে আসামী করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার পরে তার মেজ ছেলে সৈয়দ মুক্তি তার মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করেন।

ভুক্তভোগী সৈয়দা শান্তি নাহার বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে আমার ছেলে সৈয়দ জানে আলম ও তার স্ত্রী কাজী শিবলী আক্তার রুমা জায়গাজমি অর্থ সম্পদ আত্মাসাৎ করে, আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।এমন কুলাঙ্গার সন্তান আমার দরকার নেই। আমি এর সুষ্ঠু বিচার সরকারের কাছে চাই।

নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধার দেবর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলমগীরর জানান, আমার ভাতিজা স্বপন আমার সামনে ওর মাকে মারধর করেছে।এমন কুলাঙ্গার সন্তান আমি জীবনে দেখি নি। ওর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়ার উচিত।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সৈয়দ জানে আলম স্বপন বলেন, এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার মা মিথ্যা কথা বলছে। জমি বিক্রি করে তার টাকা তাকে দেওয়া হয়েছে। সে তার টাকা তুলে সে চিকিৎসার জন্য খরচ করছে। তার জমি বিক্রির বাকি টাকা তার একাউন্টেই আছে।

ডাসার থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধা মাকে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ডাসার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ আফরোজ বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। মাকে তার সন্তান মারধর করবে এটা সভ্য সমাজে মেনে নেয়ার মত নয়। অভিযুক্ত সন্তানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট ⇒সোর্স লিংক।।

⇒বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

প্রধানমন্ত্রী এসে দেখুন বেনজীর কীভাবে হিন্দুদের জমি দখল করেছেন: রানা দাশগুপ্ত

0
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত গোপালগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। [৮ জুন ২০২৪. বিডিনিউজ২৪]

সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ গোপালগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের জমি-জায়গা জোর করে দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এলাকাটি ঘুরে দেখার অনুরোধ করেছেন এবং যাদের জমি জোর করে নেওয়া হয়েছে সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক এলাকা পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আজকে আমি পরিষ্কারভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করতে চাই। এই এলাকাটি শতভাগ হিন্দুপ্রধান এলাকা। যাদের শত শত বিঘা জমি জোর করে, হুমকি দিয়ে, চক্রান্তমূলকভাবে বেনজীর দখল করে নিয়েছেন। শুধু দখলই করেননি, আমরা দেখেছি, কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে এমনভাবে চারদিকে বেষ্টনি করা হয়েছে, যাতে অন্য কেউ ওই জায়গায় প্রবেশ করতে না পারে।

“ওই দিকে (পার্কের ভিতরে) এলাকার হিন্দুদের জায়গা-জমি আছে, সেগুলো তারা আর দেখাশুনা করতে পারছেন না। অথচ, এখানকার লোকজনের প্রধান জীবীকার উৎস হলো কৃষি। আজকে এই জীবীকার উৎস থেকে তারা বঞ্চিত হওয়ার ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি বিশাল অর্থনৈতিক সংকট নেমে এসেছে। আমি আবেদন করতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলাকাটি আপনারই। আপনি একবার এলাকায় আসুন, আপনি দেখে যান, কিভাবে এখানকার সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি জবরদখল করেছেন বেনজীর আহমেদ।”

রানা দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা দাবি ও আবেদন জানাই, যাদের সম্পত্তি দখল করা হয়েছে, তাদের সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হোক। এখন এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে। একই সঙ্গে বলতে চাই, এই এলাকার সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমও আসুন, জনগণ জানতে চায় তাদের এ অবস্থা কেন হলো?”

“আমি আহ্বান জানাই, তারা একবার যাতে আসেন। তাতে যারা এরই মধ্যে সম্পদ হারিয়েছেন তারা অন্তত সান্ত্বনা পাবেন। তাদেরও যে মূল কথা, সম্পত্তি ফেরত চাই, এই জায়গাটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে পরিস্থিতি অবলোকন করে অবশ্যই বিবেচনা করবেন, এ আশা আমরা করতে পারি।”

দুর্নীতি ও অপকর্মের কারণেই বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে মন্তব্য করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বেনজীর যে ভূমিকাটা পালন করছেন, এটা শুধু সরকারের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করেনি, এটা গোটা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করেছে। আমাদের যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ তাদের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করেছে।

“আজকে জনগণ উপলব্ধি করতে পারছে এ জাতীয় দায়িত্ব যারা পালন করেছেন তাদের এ অপকর্মের কারণে আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নিষেধজ্ঞা, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আজকের দিনে আমাদের মনে হয় এদের (বেনজীর ও জেনারেল আজিজ) কারণেই হয়েছে। হয়তো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় আমরা বিষয়গুলো জানতাম না বলেই অনেক সময় মনে করেছি, একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।”

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “তিনি বলেছেন, বেনজীর ও আজিজ যা করেছেন সেটা উনাদের ব্যক্তিগত ব্যপার। এখানে রাষ্ট্রের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু এ বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে চেপে রাখার কোনো বাস্তবতা নাই। অতএব আজকে তাদেরও উচিত, তারা বলুক এই মামলা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কী করে তারা এ দেশ থেকে চলে গেলো। এবং বিচার এড়ানোর তারা চেষ্টা করছে।”

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদ ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছে। অচিরেই সংবাদ সম্মেলন করে তা তুলে ধরা হবে।

ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণ উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা ভাবি, বাংলাদেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি দখল নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এবং এই জায়গা-জমি দখলের ক্ষেত্রে প্রায় সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা রাষ্ট্রের প্রভাশালী ব্যক্তি। যখনই যে সরকার ক্ষমতায় আসে তারা সেই সরকারের ক্ষমতার ক্ষমতাপুষ্ট। তারা এই ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে সাধারণ নিরীহ ও শান্তিপূর্ণ নাগরিকের জীবনে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে, এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যেটা ঘটছে, বেনজীর সেখানে একজন প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বেনজীরের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এই যে তারা একটি মামলা বা এ আলোচনা শুরু হওয়ার পর দেশ থেকে চলে গেল এবং দেশত্যাগ করতে পারলো, এ ব্যাপারে সরকারেরও জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। আমরা এ ব্যাপারেও সরকারের কাছে সুষ্পষ্ট জবাবদিহিতা চাই।”

এ সময় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকট তাপস কুমার পাল, মনীন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার সাহা, সংগঠনের গোপালগঞ্জ জেলার সভাপতি প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, সহসভাপতি শিপ্রা বিশ্বাস, সদস্য ডেভিড বৈদ্য উপস্থিত ছিলেন।

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট ⇒সোর্স লিংক।।

⇒বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গস্বতন্ত্রদের জন্য বাজেটে ভাল প্রস্তাবনা

0
লিঙ্গস্বাতন্ত্রময় জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবন।
পুলক ঘটক

প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গস্বাতন্ত্রের ব্যক্তিবর্গকে চাকরি দিলে কর রেয়াত প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে সংসদে পেশকৃত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। এটি একটি অতি উত্তম প্রস্তাবনা। এমন সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। যেহেতু বেসরকারী খাত এখন মানুষের কর্মসংস্থানের বড় জায়গা, তাই বাজেট প্রস্তাবনায় এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিবেচনা।

হিজড়া পরিচয়ে ভিক্ষা করে বা প্রকারান্তরে মানুষকে উত্যক্ত করে বেঁচে থাকা কারও মানবজন্মের একমাত্র নিয়তি হতে পারে না। এই অবস্থা থেকে মানুষগুলোকে উদ্ধার করে কর্মজীবনের মূল ধারায় নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী নতুন কর ব্যবস্থা চালু হলে রেয়াত পাওয়ার জন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বহু প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গস্বাতন্ত্রের মানুষকে চাকরি দেবে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী অথবা তৃতীয় লিঙ্গের কর্মচারী নিয়োগ দিলে নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট অঙ্কের কর রেয়াত দেওয়া হবে।

কোনো করদাতা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট জনবলের অন্যূন ১০ শতাংশ অথবা ২৫ জনের বেশি কর্মচারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ করলে তার প্রদেয় করের ৫ শতাংশ অথবা ওই প্রতিবন্ধী কর্মচারীদের মোট পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ (যেটা কম) কর রেয়াত দেওয়া হবে।

কোন করদাতা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ করেও একই সুবিধা পেতে পারেন।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট জনবলের অন্যূন ১০ শতাংশ অথবা ২৫ জনের বেশি কর্মচারী তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ করলে তার প্রদেয় করের ৫ শতাংশ অথবা ওই তৃতীয় লিঙ্গের কর্মচারীদের মোট পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ (যেটা কম) কর রেয়াত দেওয়া হবে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় আগামী অর্থবছরে ভাতাপ্রাপ্তের সংখ্যা ২৯ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে ৩২ লক্ষ ৩৪ হাজার জনে উন্নীত করার কথাও বলেন।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তির হার বিদ্যমান ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০ টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে।

এগুলো সব মানবিক ও কল্যাণমূলক কাজ। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত সফল হবে প্রত্যাশা করি।

 

[পুলক ঘটক; সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ]

 ফেসবুক পেজফেসবুক প্রোফাইলটুইটার অ্যাকাউন্ট

বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

‘হিন্দু হতে পারিনি, মুসলিমও হতে পারিনি, স্যান্ডউইচ হয়েছি’

বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ ও কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী।

বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ ও কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে পরাজিত হয়েছে। এরপর পাঠানকে শুভেচ্ছা জানিয়েও কংগ্রেস প্রার্থীর অভিযোগ, তিনি জাতপাতের রাজনীতির কাছে হেরেছেন। তিনি ‘স্যান্ডউইচ’ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোটগণনা শেষে জানা যায়, বহরমপুর কেন্দ্রে অধীরকে প্রায় ৮৫ হাজার ভোটে হারিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও তৃণমূল প্রার্থী পাঠান।

অধীর বলেন, ‘বাংলার রাজনীতি ক্রমশ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি যারা আছে, তাদের জন্য নির্বাচন কঠিন হচ্ছে।’

এই কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘ভোট ঠিকঠাক হয়েছিল। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। পর পর পাঁচ বার জিতেছিলাম। মানুষের দোয়া-আশীর্বাদের ত্রুটি ছিল না। মানুষ মনে করছিল জেতানো দরকার, জিতিয়েছিল। এখন মনে করেছে যে কোনো দরকার নেই, তাই জেতায়নি। কিন্তু নির্বাচন তো নির্বাচন। হেরেছি মানে হেরেছি। আমি ইউসুফ পাঠানের কাছে পরাজিত হয়েছি, ইউসুফকে জয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি স্যান্ডউইচ হয়েছি। একদিকে, হিন্দু ভোটের বিভাজন, অন্যদিকে মুসলিম ভোটের বিভাজন। আমি হিন্দু হতে পারিনি, মুসলিমও হতে পারিনি।’

দেশের ফলাফল নিয়ে অধীর বলেন, ‘রাহুল গান্ধী আমার নেতা। রাহুল গান্ধী প্রমাণ করেছেন যে, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প হয় না।’

অন্যদিকে, অধীরের পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলে মমতা বলেন, ‘ওর ঔদ্ধত্যই এর জন্য দায়ী। আর উনি বিজেপির লোক। পাঠানকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ওকে আমরা আমন্ত্রণ করেছিলাম। উনি সেটা গ্রহণ করে মর্যাদা দিয়েছেন।’

বহরমপুরে এই প্রথম সংখ্যালঘু প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন অধীর। তার ওপর সেখানকার জনপ্রিয় চিকিৎসক নির্মলচন্দ্র সাহা বিজেপির প্রার্থী হওয়ায় অধীরের জন্য ভোটের সমীকরণ কঠিন হয়ে যায় বলেই রাজনৈতিক মহলের অনেকের মত। এর আগে পাঁচ বার অধীরের মূল প্রতিপক্ষ কখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে ছিলেন না। তাছাড়া ২০১৯ সালে অধীরের জয়ের ব্যবধান সাড়ে তিন লক্ষ থেকে ৮৭ হাজারে নেমে এসেছিল। যে বহরমপুর বিধানসভায় গত লোকসভা ভোটে প্রায় ৮৯ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন অধীর, সেখানেই ২০২১ সালে প্রায় ৫০ হাজার ভোটে হারে কংগ্রেস।

অন্যদিকে, জয়ের পর বহরমপুরবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পাঠান। সাদা শার্ট-জিন্‌সে গলায় মালা পরে তিনি বলেন, ‘এই জয় শুধু আমার জয় নয়। এখানকার সকল কর্মীর জয়। সবাইকে ধন্যবাদ।’

অধীরকে হারানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রেকর্ড তৈরি হয় ভাঙার জন্য। অধীরজি সিনিয়র লিডার। ওকে সম্মান করি। সেই সম্মান অটুট থাকবে।’

সাংসদ হিসেবে মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন বলে জানান তৃণমূল প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘ছোটদের জন্য স্পোর্টিং অ্যাকাডেমি করব। শিল্পের জন্য চেষ্টা করব।’

যদিও বহরমপুরে যে তিনি সব সময় থাকতে পারবেন না, তাও জানিয়ে দিয়েছেন পাঠান। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি গুজরাটে। কাজের সূত্রে দিল্লি যেতে হবে। তবে সময় পেলে এখানে আসবই। এটা আমার তৃতীয় বাড়ি। এখানে আমি আরও একটা পরিবার পেয়েছি।’

পাঠান জানান, তার জয়ের পর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। সবাই ভীষণ খুশি। নেতা এবং কর্মীদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্যে ভবন থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট ⇒সোর্স লিংক।।

⇒বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ