বাংলা ট্রিবিউন: প্রচলিত হিন্দু আইন সংশোধন করে নারী, প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে সম্পত্তিতে সমঅধিকার দেওয়া; স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও পুরুষের যথেচ্ছ বহুবিবাহের সুযোগ বাতিল করা ও বিশেষ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের বিধান করাসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ।
শুক্রবার (২৬ মে, ২০২৩) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘অনলাইনে নারী নির্যাতন, কুৎসা, গুজব ও সাম্প্রদায়িক উসকানির প্রতিবাদে এবং হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কারের দাবিতে’ এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা এই দাবি জানান।
ছয়টি দাবি হলো—সন্তানের ওপর পুরুষের মতো নারীরও অভিভাবকত্বের স্বীকৃতি দেওয়া; নারীর সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার এবং কন্যা-সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দেওয়া এবং বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, হিন্দুপ্রধান ভারত, নেপাল ও মরিশাসের হিন্দু আইনে লিঙ্গবৈষম্য না থাকলেও বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনে নারী, প্রতিবন্ধী, দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি (নারী-পুরুষ উভয়ে) এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের প্রতি নির্মম বৈষম্য করা হচ্ছে। মানুষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সংবিধানে লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে কারও প্রতি বৈষম্য না করার অঙ্গীকার রয়েছে। রাষ্ট্রকে এ অঙ্গীকার পালন করতে হবে। তাই আমরা রাষ্ট্রের কাছে এসব দাবি জানাচ্ছি।
সভাপতি আরও বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ ও বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের নারী, প্রতিবন্ধী, দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ যাত্রা শুরু করে। গত ১ বছর ৯ মাসের কার্যক্রমে আমরা বৈষম্যমূলক হিন্দু আইনের ভুক্তভোগী এবং সমাজের বিবেকবান মানুষের কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন ভালোবাসা লাভ করেছি। পক্ষান্তরে হিন্দু সমাজের মধ্যেই গজিয়ে ওঠা মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল ও কায়েমি স্বার্থবাদী একটি মহলের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছি। তারা আমাদের আন্দোলনের সমর্থক ও সহকর্মী বিশেষ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে এবং নারীদের নানাভাবে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অনলাইনে উত্ত্যক্ত করা, অশ্লীল গালাগাল, মিথ্যা প্রচারণা, কুৎসা রটনা এবং ধর্মীয় ও বংশপরিচয় তুলে অভব্য মন্তব্য ও ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নন, এমন কয়েকজন বিশিষ্ট নারীর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কদর্য কথাবার্তা তারা ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে। অহেতুক মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারাই নাকি আমাদের সংগঠনের প্রধান নেতা। হিন্দু নারীদের সম্পর্কে ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে, অধিকার দিলে তারা সনাতন ধর্মে থাকবে না; তারা সবাই ধর্মান্তরিত হবে। এ ধরনের প্রচারণা হিন্দু নারীদের প্রতি ঘৃণাবাচক, অসম্মানজক ও নিন্দনীয়। তারা যেকোনও মূল্যে নারীর অধিকার প্রতিহত করতে চায়। ধর্মের নামে এসব করা হলেও, এগুলো মূলত অধর্ম। এগুলো কোনও স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নয়; এগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। কারও অধিকার হরণ গণতান্ত্রিক ও আইনসম্মত হতে পারে না।
অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার বলেন, তাদের অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। পুলিশসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কাছে এসব উসকানিমূলক কথা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তাদের মিথ্যা গুজব নস্যাতের জন্য এবং হিন্দু-বৌদ্ধ নারীদের দাবি বাস্তবায়নে আমরা আপনাদের সহযোগিতা প্রত্যাশী।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কৃতজ্ঞতা: বাংলা ট্রিবিউন
ফেসবুক গ্রুপ লিংক: হিন্দু আইন সংস্কার চাই