ভোরের কাগজ: প্রচলিত হিন্দু আইন সংস্কারের দাবি এবং কয়েকটি সংগঠনের এ বিষয়ে বিরোধিতার বিষয়টি সামনে আসে ২০২১ সালে। এরপর থেকে এ বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন সময় পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচি। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ বিষয়ে আবারো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে দেশে প্রচলিত হিন্দু আইনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যায়িত করে তা সংস্কারে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ যাত্রা শুরু করে। তবে শুরু থেকে তাদের দাবির বিষয়ে বিরোধিতা করে আসছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন।
হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ময়না তালুকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, হিন্দু প্রধান ভারত, নেপাল এবং মরিশাসের হিন্দু আইনে লিঙ্গবৈষম্য না থাকলেও বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনে নারী, প্রতিবন্ধী, দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি (নারী-পুরুষ উভয়ে) এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের প্রতি ‘নির্মম বৈষম্য’ বিরাজ করছে। মানুষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের দাবিগুলো হলো : নারী, প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গবৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীকে সম্পত্তিতে সমঅধিকার দেয়া; স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও পুরুষের যথেচ্ছ বহুবিবাহের সুযোগ বাতিল করা; বিশেষ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের বিধান করা; সন্তানের ওপর পুরুষের মতো নারীরও অভিভাবকত্বের স্বীকৃতি দেয়া; নারীর সন্তান দত্তক নেয়ার অধিকার এবং কন্যা সন্তান দত্তক নেয়ার অধিকার; বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা।
পরিষদের সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই আইন সংস্কারের বিরোধিতা করে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল করে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের একাংশসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের যুক্তি, সনাতন শাস্ত্রীয় আইন সংস্কার করা হলে ধর্মের প্রতি অবমাননা করা হবে। তাই তারা এই আইন সংস্কার চান না। পরিষদের দাবির বিরোধিতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক ময়না তালুকদার বলেন, আমাদের সংগঠন যাত্রার পর গত ১ বছর ৯ মাসের কার্যক্রমে আমরা বৈষম্যমূলক হিন্দু আইনের ভুক্তভোগী এবং সমাজের বিবেকবান মানুষের কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি।
পক্ষান্তরে হিন্দু সমাজের মধ্যেই গজিয়ে ওঠা মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল ও কায়েমী স্বার্থবাদী একটি মহলের চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছি। এই মহলটি যেকোনো মূল্যে হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের অধিকার প্রতিহত করতে চায়। তারা ঘোষণা দিয়ে রাজপথে অবৈধ ও বেআইনি কর্মসূচি পালন করছে। একই সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা সা¤প্রদায়িক উসকানিমূলক গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের মনে ভয় সঞ্চার ও পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পাঁয়তারা করছে।
হিন্দু আইন সংস্কারের দাবি জানানোর কারণে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটকসহ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময় হুমকি দেয়ার পাশাপাশি হয়রানি করা হয়েছে। বিরোধিতাকারীরা হিন্দু নারীদের সম্পর্কে ঢালাওভাবে বলছে, অধিকার দিলে তারা সনাতন ধর্মে থাকবে না, তারা সবাই ধর্মান্তরিত হবে। এ ধরণের প্রচার হিন্দু নারীদের প্রতি ঘৃণাবাচক, অসম্মানজক ও নিন্দনীয়।
ফেসবুক গ্রুপ লিংক: হিন্দু আইন সংস্কার চাই