প্রচলিত হিন্দু আইন বর্তমান সমাজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক : বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ

লইয়ার্স ক্লাব: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেছেন, হিন্দু সমাজে প্রচলিত আইনগুলো আমাদের বর্তমান সমাজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একটা সমাজে একজন অপরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় অথচ লিখিতভাবে কিছু হয় না, যা একমাত্র মান্ধাতার আমল ছাড়া বর্তমানে কল্পনা করা যায় না।

হিন্দু আইনে নারীদের সম্পত্তি প্রাপ্তির বিষয়ে গত শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ বিপু মিলনায়তনে হিন্দু আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আলোচনায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেছেন, ‘আমি বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। আমি আমার পিতার সম্পত্তি পাইনি। কিন্তু আমি আমার পিতার উত্তরাধিকার পেয়েছি কর্মের মাধ্যমে। আমার বাবা একজন জজ ছিলেন। আমি জজ হয়েছি। আমি মনে করি মেয়েরা নিজ যোগ্যতায় অধিকার আদায় করে নিবে। আমার পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে দুই ভাই উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তিতে অধিকার পেয়েছে। আর ৩ বোনের মধ্যে আমি বাবার কর্মের উত্তরাধিকার পেয়েছি। কিন্তু এই সুযোগ সবার জীবনে আসবে না। আমি সেই ভাগ্যবানের মধ্যে একজন।’

বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২।

বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘কন্যা নয়, সন্তানের অধিকার চাই। আর সন্তান মানেই আমি সবকিছুতে আছি। অথচ দীর্ঘ ২২ বছরেও হিন্দু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। মূলত বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। যার ফলে তৈরি হচ্ছে নানা বৈষম্য।’

দেশের প্রথম হিন্দু নারী বিচারকের মতে, ‘সংস্কার আইনের সমাধান নেই, থাকতে পারে না; তা হতে পারে না। সমাধান আছেই। তা খুঁজে বের করতে হবে। এর জন্য দরকার প্ল্যান অফ অ্যাকশনে যাওয়া। আমাদের কী চাই, তা নির্বাচন করা। এবং সেই বিষয়টাই মানুষকে জানানো। তবেই এর সমাধান সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘অক্টোবর পর্যন্ত আমি আইনের লোক। কিন্তু ৯ অক্টোবরের পর অবসরে যাওয়ার পর আমিও আপনাদের সারিতে দাঁড়াবো। তখন আমি আন্দোলনকারী হিসেবে দাঁড়াবো। তখন আইনের অধিকার কীভাবে আদায় করতে হয়, সেজন্য পাশে থাকব। আমি এখন যেহেতু আইনের জগতে আছি আমি কোনো উত্তর দিতে পারব না। এরজন্য আমি দুঃখিত, কারণ আইন আপনাদের (ভুক্তভোগী) অধিকার দেয় না।’

অনুষ্ঠানে অনেক ভুক্তভোগী নারী বলেন, হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র ভারত অনেক আগেই এই আইনের সংস্কার করেছে। নেপাল ও মিয়ানমারও ব্রিটিশ এই আইন পরিবর্তন করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও চান পরিবর্তন হোক; তবে আমাদের বাবা ও দাদারা তা চান না।

স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন ২০১৪ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারীর সম্পদের মালিকানা নেই। এক শতাংশের সম্পদ থাকলেও পরে তারা তা হারিয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২৯ ভাগ নারী সম্পদের মালিক হয়েছে উত্তরাধিকারসূত্রে। তবে এই ২৯ ভাগ নারীর সবাই আসলে মুসলিম পরিবারের আওতাধীন। হিন্দু আইনের আওতাধীন নারীরা সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রায় শূন্য অধিকার নিয়ে বেঁচে আছে। কিছু কর্মজীবী নারী বাদ দিলে সব হিন্দু নারী আশ্রিত-পিতার, স্বামীর, ভাইয়ের কিংবা সন্তানের।

বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘হিন্দু আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সংস্কার পরিষদের সহসভাপতি সুভাস সাহা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ হিন্দু সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

কৃতজ্ঞতা: লইয়ার্স ক্লাব

ফেসবুক গ্রুপ লিংক: হিন্দু আইন সংস্কার চাই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_img
spot_img

বাছাইকৃত

বিশেষ নিবন্ধ