ইত্তেফাক রিপোর্ট: বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ-১৯৭৯-এ বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষর করেছে। যেখানে নারীর অধিকার ভোগ ও চর্চার প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার কথা বলা হয়েছে। অথচ সম্পত্তিতে সমান অধিকার না থাকার কারণে হিন্দু নারী ও মেয়েরা বিভিন্ন ভাবে বঞ্চনা, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে গঠিত ‘হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগ’ কোয়ালিশন আইনটির খসড়া তৈরি করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (মার্চ ৫, ২০২১) ওয়েবিনারে ‘খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন-২০২০’ নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, বর্তমানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী যদি কারো পুত্র সন্তান থাকে, তাহলে কন্যা সন্তানরা তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি পায় না। তবে পুত্র না থাকলে পুত্র রয়েছে এমন কন্যারা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশ পেয়ে থাকে। যদিও নারীর অর্জিত সম্পত্তির অংশ তার পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ঠিকই পেয়ে থাকেন। এছাড়া বর্তমান আইনে বিধবা নারীরা জীবন স্বত্বে যে সম্পত্তি পান, তা বিক্রি বা উইল করতে পারেন না। এই খসড়া আইনে নারী-পুরুষ, পুত্র বা কন্যাসন্তান, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন অথবা বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে এসব অসম বিভাজন করা হয়নি।
ওয়েবিনারে আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এমজেএফের পরিচালক রীনা রায়, আইনটি উপস্থাপন করেন এমজেএফের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস। সভা প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। বক্তব্য রাখেন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, সংসদ সদস্য আরোমা দত্ত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের দিপালী চক্রবর্তী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, প্রতিবেশী দেশ ভারত ১৯৫৬ সালে ‘হিন্দু সাকসেশন অ্যাক্ট’ পাশ করেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে হিন্দু নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকার সম্পত্তির সমান অংশ নিশ্চিত করেছে। পরে দেশটি দুই দফা আইনটি সংশোধন করে যুগোপযোগী করেছে।
কৃতজ্ঞতা: দৈনিক ইত্তেফাক
ফেসবুক গ্রুপ লিংক: হিন্দু আইন সংস্কার চাই