বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েরা যাতে পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পান, সেই লক্ষ্যে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে আইন কমিশন।
কমিশন বলছে উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তিতে পুত্রের সাথে কন্যাকেও পূর্ণ ও সমান অধিকার দিতে হবে।
তবে এই সংস্কারের উদ্যেগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সম্পত্তিতে মেয়েদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন।
হিন্দু আইনের সংস্কারের এই সুপারিশকে সর্মথন করলেও এই সম্প্রদায়ের অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা এখনো হিন্দু আইন সংস্কারের উপযোগী নয়।
বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু দায়ভাগ আইন অনুযায়ী স্বীকৃতি প্রাপ্ত ৫ জন নারী সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে তারা জীবনসত্ত্ব সম্পত্তি ভোগের অধিকার পান। অর্থাৎ জীবন অবসানের সাথে সাথে এই সম্পত্তি পূর্ব মৃত ব্যক্তির পুরুষ উত্তরাধিকারের কাছে চলে যায়।
এই পটভূমিতে বাংলাদেশের আইন কমিশন হিন্দু আইন সংস্কারের সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহ আলম।
আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে হিন্দু আইনের আরও কিছু দিক, যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ, বিবাহ নিবন্ধন, ভরণপোষণ ও সন্তানের অভিভাবকত্ব, এবং দত্তক নেওয়ার প্রশ্নে বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মি. আলম বলেন “পিতার সম্পত্তিতে পুত্র ও কন্যার সমান অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। পুরুষ ও নারীর উভয়কেই বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।”
বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারত ও নেপাল হিন্দু প্রধান দেশ হওয়ায় অনেক আগেই যুগের চাহিদা অনুযায়ী এসব দেশে হিন্দু আইনের সংস্কার করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও হিন্দু আইন সংস্কার নিয়ে কাজ করেন নীনা গোস্বামী, যিনি বলছেন প্রচলিত বিভিন্ন প্রথা অনুযায়ী হিন্দু আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।
”তাই সময়ের প্রয়োজনে তার পরিবর্তন করলে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকে উপকৃত হবেন।” বলছেন নীনা গোস্বামী।
তবে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ মনে করছেন বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা হিন্দু আইন সংস্কারের উপযোগী নয়।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় এই পরিবর্তন কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা উচিত।
“সবাই ভারতের কথা বলেন, কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এক নয়। বিবাহ নিবন্ধনের বিষয়টি যেমন ঐচ্ছিক করা হয়েছে তেমনি পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোও ঐচ্ছিক করা উচিত।” বলেন মি. দেবনাথ।
এদিকে আইন কমিশন বলছে তাদের মাঠ পর্যায়ের গবেষণা দ্বারা তারা এর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবি বলে মনে করছেন।
এই লক্ষ্য পূরণে প্রচলিত হিন্দু আইনের সংস্কারের জন্য কমিশনের সুপারিশগুলো একটি পুর্ণাঙ্গ আইন অথবা বিষয়ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন আইন করে কার্যকর করার জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।
ফেসবুক গ্রুপ লিংক: হিন্দু আইন সংস্কার চাই