“বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনে নারী, প্রতিবন্ধী, দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং লিঙ্গবৈচিত্রময় জনগোষ্ঠী সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।”
বিডিনিউজ: বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু আইনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যায়িত করে তা সংস্কারে ছয়টি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়নে সংবাদ সম্মেলনে করে এ দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ময়না তালুকদার।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, হিন্দু প্রধান ভারত, নেপাল এবং মরিশাসের হিন্দু আইনে লিঙ্গবৈষম্য না থাকলেও বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনে নারী, প্রতিবন্ধী, দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি (নারী-পুরুষ উভয়ে) এবং লিঙ্গবৈচিত্রময় জনগোষ্ঠী সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের প্রতি ‘নির্মম বৈষম্য’ বিরাজ করছে। মানুষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
“সংবিধানে লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে কারও প্রতি বৈষম্য না করার অঙ্গীকার রয়েছে। রাষ্ট্রকে এ অঙ্গীকার পালন করতে হবে। তাই আমরা রাষ্ট্রের কাছে আবারও দাবি জানাচ্ছি, প্রচলিত হিন্দু আইন সংস্কার করা হোক।”
বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের দাবিগুলো হলো-
- নারী, প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গবৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীকে সম্পত্তিতে সমঅধিকার দিতে হবে।
- স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও পুরুষের যথেচ্ছ বহুবিবাহের সুযোগ বাতিল করতে হবে।
- বিশেষ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের বিধান করতে হবে।
- সন্তানের ওপর পুরুষের মত নারীরও অভিভাবকত্বের স্বীকৃতি দিতে হবে।
- নারীর সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার এবং কন্যা সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দিতে হবে।
- বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
হিন্দু আইনে নারী, প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ যাত্রা শুরু করে। তবে শুরু থেকে তাদের দাবির বিষয়ে বিরোধিতা করে আসছে হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠন।
শুক্রবার পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের সময়ও প্রেসক্লাবের সামনে এই আইন সংস্কারের বিরোধিতা করে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল করেছে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন।
তাদের যুক্তি, সনাতন শাস্ত্রীয় আইন সংস্কার করা হলে ধর্মের প্রতি অবমাননা করা হবে। তাই তারা এই আইন সংস্কার চান না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ময়না তালুকদার বলেন, “আমাদের সংগঠন যাত্রার পর গত ১ বছর ৯ মাসের কার্যক্রমে আমরা বৈষম্যমূলক হিন্দু আইনের ভুক্তভোগী এবং সমাজের বিবেকবান মানুষের কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন ভালবাসা লাভ করেছি। পক্ষান্তরে হিন্দু সমাজের মধ্যেই গজিয়ে ওঠা মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল ও কায়েমী স্বার্থবাদী একটি মহালের চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছি।
“দুষ্টচক্রটি হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের অধিকার প্রদান প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে অবৈধ ও বেআইনি কর্মসূচি পালন করছে। একই সঙ্গে গত কয়েকদিন যাবত ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের মনে ভয় সঞ্চার ও পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পাঁয়তারা করছে। তারা যে কোনো মূল্যে নারীর অধিকার প্রতিহত করতে চায়। ধর্মের নামে এসব করা হলেও এগুলো মূলত অধর্ম।”
হিন্দু আইন সংস্কারের দাবি জানানোর কারণে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটকসহ তাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অধ্যাপক ময়না তালুকদার।
তিনি বলেন, “তারা আমাদের আন্দোলনের সমর্থক ও সহকর্মী, বিশেষ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে এবং নারীদের নানাভাবে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অনলাইনে উত্যক্ত করা, অশ্লীল গালাগাল, মিথ্যা প্রচারণা, কুৎসা রটনা এবং ধর্মীয় ও বংশ পরিচয় তুলে অভব্য মন্তব্য ও ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে।
“হিন্দু নারীদের সম্পর্কে ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে, অধিকার দিলে তারা সনাতন ধর্মে থাকবে না; তারা সবাই ধর্মান্তরিত হবে। এ ধরনেরর প্রচার হিন্দু নারীদের প্রতি ঘৃণাবাচক, অসম্মানজক ও নিন্দনীয়।”
বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক ও সহ-সভাপতি সুভাষ সাহা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।