পুলক ঘটক
মদন: সমঅধিকার নয়, নারীদের ন্যায্য অধিকার দিতে হবে।
জবাব: নারীকে কম দেওয়া বা পুরুষের অর্ধেক অধিকার দেওয়া কি ন্যায্য? না, সমঅধিকারই ন্যায্য অধিকার। কাউকে মানুষ হিসেবে সমস্বীকৃতি, সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার না দিলে ন্যায্য হয় না।
মদন: তাহলে নারীর জন্য চাকরিতে কোটা সুবিধা, সংসদে সংরক্ষিত আসন, গণপরিবহনে মেয়েদের রির্জাভ সিট বা অন্যান্য বিশেষ সুবিধা বাদ দেন। যেহেতু সমঅধিকার, তাহলে সবক্ষেত্রে সমান অধিকার হোক। গাছেরও খাবেন, তলারও কুড়াবেন, তা হবে না। সমঅধিকার যদি বলেন তাহলে সবক্ষেত্রে সমান।
জবাব: এই ধারণাকে সমঅধিকার বলে না। এগুলো নিজের সুবিধাবাদী অবস্থান থেকে উদ্গার হওয়া বৈষম্যমূলক চিন্তা। শারীরিকভাবে সমস্যায় থাকা একজন মানুষ যাতে আপনার মতোই সমভাবে জীবনের স্বাদ উপভোগ করতে পারে সেজন্য তাকে বিশেষ সুযোগ দিয়ে আপনার কাতারে নিয়ে আসার ব্যবস্থার নাম সমসুযোগ ও সমঅধিকার। জীবন বাঁচানোর জন্য ডাক্তাররা একজন মানুষের একটি পা কেটে দিয়েছে। সেই মানুষটা এক পা নিয়ে জীবনযুদ্ধে লিপ্ত আছে। ঐ মানুষের অফিসের চেয়ারটা কেড়ে নেওয়ার নাম সমঅধিকার নয়। ঐ পা কাটা ভদ্রলোক যাতে সমভাবে অফিসে উঠতে পারেন এজন্য বিশেষ সিড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা হলো সমঅধিকার। প্রয়োজনে তার বসার উপযুক্ত বিশেষ চেয়ার নির্মাণের নাম সমঅধিকার। একজন এক পাওয়ালা পঙ্গু মানুষের সঙ্গে দুই পাওয়ালা স্বাভাবিক মানুষের দৌড় প্রতিযোগিতার নাম সমঅধিকার নয়। যাতে পঙ্গুও গিরি লংঘন করতে পারে তারজন্য সুব্যবস্থা সৃষ্টির নাম সমঅধিকার।
ড্রয়িংরুমে আপনারা পরিবারের সবাই মিলে গানবাজনা করছেন, আনন্দে মত্ত আছেন। পাসের রুমে আপনার বুড়ো দাদু একা আছেন। তিনি আপনাদের আসরে আসতে পারছেন না। অথচ ওনারও অধিকার আছে আপনাদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দেয়ার; পরিবারের আনন্দে অংশিদার হওয়ার। তাই আপনি ওনার হাত ধরে আপনাদের মাঝে নিয়ে এসে একটি উঁচু চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। এতে আপনারা কেউ খাটো হলেন না, বরং দাদুর সমসুযোগের নিশ্চয়তা দিলেন।
যাদের সভ্যতার সেন্স নেই তারাই কেবল সমঅধিকারে বাঁধা সৃষ্টির জন্য পিছিয়ে পড়া মানুষদের বিশেষ অধিকার কেড়ে নিতে বলে। এগুলো স্বার্থপর হীনচিন্তার প্রকাশ। নারী মা; তারা আমাদের জন্মদায়িনী। তারা পেটে সন্তান ধারণ করেন; গর্ভবতী হন। নারীদের ঋতুস্রাব হয়। তাদের শারীরিক ও মানসিক গঠনগত কিছু বিষয় আছে, যার জন্য তাদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়। সমঅধিকারের নিশ্চয়তা বিধানের জন্যই বিশেষ ব্যবস্থা। ন্যায্য অধিকারের কথা বলে নারীকে পুরুষের অর্ধেক বানানোর চেষ্টা ভন্ডামি।
নারীদের যোগ্যতা আছে। তাদেরকে পশ্চাদপদ করে রেখেছে আমাদের সিস্টেম। সিস্টেম পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীদের প্রাপ্য সমঅধিকার দিয়ে ন্যায্যতা আনতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ