ভানুলাল দাস
বাংলাদেশে হিন্দু আইনে বিধবা নারীর ২য় বিবাহ বৈধ। কিন্তু বিধবা হতে হলে স্বামীকে আগে সত্যি সত্যি পটল তুলতে হবে।
স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায়, কিংবা স্বামী ২য় বিয়ে করায় স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে আসল এবং সিদ্ধান্ত নিল, ঐ স্বামীর সংসারে আর ফেরত যাবে না। তিনি ডিভোর্স নিতে গিয়ে জানলেন, হিন্দু আইনে এই জিনিস নাই।
কিন্তু স্বামীকে পরিত্যাগ করা বা স্বামী দ্বারা পরিত্যক্তা স্ত্রী ২য় বার বিয়ে করতে চান। কিভাবে করবেন?
স্বামীর খড়ের প্রতিকৃতি বানিয়ে শ্মশানে দাহ করার পর শ্রাদ্ধশান্তি করলেই হিন্দু আইনে স্বামী মৃত বলে গন্য হয় না। শ্রাদ্ধ করা স্ত্রী বিধবাও হয় না। এতে মনের ক্ষোভ, বিদ্বেষ, হিংসা, ঘৃনার হয়তো কিছুটা লাঘব হয়।
আইন সংস্কার না হওয়ায় নারীর মনে অত্যাচারী অনাচারী জীবিত স্বামী ধর্মীয় সংস্কারের অচ্ছেদ্য বন্ধন হিসাবে এক বিশাল টেবু হয়ে বিরাজ করে। এই ভয়াবহ টেবু ডিঙ্গাতে পারে খুব কম নারী। তাই বিবাহিতা নারী ২য় বিয়ে করে সুখী হতে পারে না। আইনের সমর্থন না থাকলে বিয়েটা ব্যভিচারের মত এক সময় মনে হতে থাকে। পাপবোধে পেয়ে বসে। ২য় বিবাহের স্বামীটিও মনের গভীরে স্ত্রীর প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ করে।
আইনের সমর্থন নৈতিকতার মূলভিত্তি রচনা করে। ধরুন, মানুষ হত্যা জঘন্যতম অপরাধ ও মহাপাপ, কিন্তু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সমুহ সম্ভাবনা দেখা দিলে আপনি আক্রমণকারীকে হত্যা করতে পারবেন। আইনে সেটা অপরাধও নয়, আবার পাপবোধে পাবে না যখন দেখবেন আইন এই হত্যাকে বৈধতা দিয়েছে।
কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসের বিধবা রোহিনী, বিষবৃক্ষের কুন্দনন্দিনী, আনা কারেনিনার নায়িকা আনা, মাডাম ব্যুভারীর এমা… এরা সবাই এই টেবুর বলি। তাদের ভালবাসা ছিল খাঁটি, কিন্তু জীবনযাপন ছিল আইনবহির্ভূত ও অনৈতিক । তখন হিন্দুর মত খ্রিস্টান নারীর ২য় বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল, তালাক ছিল না। হিন্দুর জন্য তখন বিধবা বিয়ে অবৈধ ছিল। এই সময়ে তারা ভালবাসার সীমা লংঘন করেছিল, এবং এক সময় নিজেরা পাপবোধে আক্রান্ত হয়। জীবন গ্লানিময় মনে হয়েছিল। পরিণতি হয়েছিল ভয়াবহ। রোহিনীকে তার লিভইনে থাকা প্রেমিক গোবিন্দলাল গুলি করে হত্যা করে, কুন্দনন্দিনী বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। আনা কারেনিনা রেললাইনে মাথা পেতে দিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে এবং এমা ব্যুভারী আর্সেনিক খেয়ে আত্মহত্যা করে।
আধুনিক হিন্দু নারীরা এই টেবু ভাঙ্গতে পারবে কি? ধর্ম ও আইনের সমর্থন ছাড়া, ডিভোর্স ছাড়া ২য় বিয়ে করে সংসার করার চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে তারা? ২য় স্বামী কি তাকে সমর্থন যোগাবে সারাজীবন? এই দুই শর্ত পূরণ না হলে ডিভোর্স ছাড়া ২য় বিয়ে নারীকে পরিপূর্ণ দাম্পত্য জীবন দিতে পারবে না।
এই জন্য হিন্দু নারীর ২য় বিয়ের জন্য হিন্দু বিবাহ আইনের সংস্কার করতে হবে। ভারতের মত ‘হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫’ আদলে বাংলাদেশেও আইন দরকার, তা হলেই হিন্দু নারীর মুক্তির দুয়ার খুলবে।
@ হিন্দু আইন সংস্কার চাই
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ