ইতি চৌধুরী: মানিক লাল সরকার। বয়স প্রায় পয়ঁষট্টি প্লাস। স্ত্রী প্রভা রানী সরকার।
মানিক-প্রভা দম্পত্তি নিঃসন্তান। মানিক লালের আয়ের উৎস বিভাগীয় শহরে চার তলা বাড়ি; আট ইউনিটের প্রত্যেকটি ফ্লোরে তিন বেড।
বর্তমানে উনি হাউজ বিজনেস দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এইছাড়া উনার আয়ের আর কোন উৎস নেই।
মানিক লালের বাবা ছিলেন অত্যন্ত গরীব। তাই সংসারের অভাব ঘোচানোর জন্য উনারা দুই ভাই(হিরা লাল ও মানিক লাল) প্রবাসে পাড়ি জমান।
মানিক লাল সরকারের স্ত্রীর দুটো সন্তান গর্ভেই নষ্ট হয়ে যায়। প্রথম টা আট মাসে পরবর্তী টা ছয় মাসে তারপর আর উনাদের সন্তান হয়নি
মানিক লাল টানা উনিশ বছর বিদেশে থেকে দেশে আসলে আত্মীয় স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশি সকলেই চাপাচাপি করে দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য কিন্তু মানিক লাল সরকার দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। উনি উনার স্ত্রী কে যথেষ্ট সন্মান, মর্যাদা দেন এবং নিরঙ্কুশ ভালোবাসেন।
মানিক লাল এবং উনার বড় ভাই হীরা লাল প্রবাসী থাকা অবস্থায় শহরে একই প্লটে জায়গা কেনেন এবং ঐ জায়গায় পাশাপাশি বিল্ডিং তৈরি করেন। নীচ তলা গ্যারেজ টা একই সাথে। একই গেইটে ঢুকে দুটি আলাদা বিল্ডিং। দুই বিল্ডিং এর প্রবেশ মুখও একটা, নীচতলায় দুই জনের অফিস রুমও একটা।
মানিক লালের বড় দাদা বিল্ডিং দু তলা কাজ শেষ হওয়ার পর পরই অসুস্থ হয়ে মারা যান। উনার দুই ছেলে তখন পড়াশোনারত ছিলেন।
তার কয়েক বছর বাদে মানিক লালের বড় বৌদি ও মারা যান ডায়াবেটিস নীল হয়ে।
মানিক লাল উনার সামর্থ্য অনুযায়ী ভাতিজা দুজনের দায়িত্ব নেন।
এক সময় ভাতিজারা বড় হয়ে বিয়ে করে দুই ভাই আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটে থাকেন। ভাতিজারা আরও দুই তলার ফ্ল্যাট বাড়ান। দুটো তে দুই ভাই আলাদা থাকেন আর বাকিগুলো ভাড়া দেন।
যেহেতু মানিক বাবু নিঃসন্তান। তাই মানিক বাবুর চিন্তা মানিক লালের মৃত্যুর পর উনার স্ত্রীর কি হবে? এটা ভেবে মানিক লাল সরকার একজন জর্জ কোটের আইনজীবী কে উনার অফিসে নিয়ে আসেন এবং উনার এই বাড়ির একচ্ছত্র মালিক উনার স্ত্রী কিভাবে পাবেন সেটা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, উনার সমস্ত সম্পত্তির অধিকার কিভাবে উনার স্ত্রী উনার মৃত্যুর পর পাবেন সেই সম্পর্কে আইনজীবির কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
উনার দুই ভাতিজা একই সময়ে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি কাকার কাছে জানতে চেয়েছিলেন কেন আইনজীবী তলব করেছেন।
যেই মাত্র ভাতিজারা জানতে পেরেছেন মানিক লাল সরকার তার সমুদয় সম্পত্তি উনার স্ত্রী কে দানপত্র করে দিচ্ছেন ঠিক সেই সময়ে লাঠি সোটা দিয়ে মানিক লাল সরকারের মাথা ফাটিয়ে দেন এবং এও হুমকি দেন যদি উনি উনার স্ত্রী কে দানপত্র করে দেন তবে তারা উনারা স্বামী স্ত্রী দুজনকে এই পৃথিবী থেকে উড়িয়ে দেবেন।
স্বামীর কষ্টাজিত সম্পত্তির ভবিষ্যতের উত্তরাধিকার নিঃসন্তান বিধবার ভাসুরের ছেলেরা।
কি অদ্ভুত আইন? তাই না।