আধুনিক মানুষ শূণ্য হাতে শুরু করলে…

পুলক ঘটক: বহুদূর মহাসাগরে একটি নতুন দ্বীপ আবিস্কৃত হয়েছে। সেখানে বিস্তীর্ন আবাদি জমি, বন ও সুপেয় জলাশয় আছে। তবে কোনো জনবসতি নেই। চাইলেই সেখানে একটি নতুন দেশ স্থাপন করা যায়। সেই দ্বীপে জাহাজে করে ২০ হাজার মানুষকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল। সেই মানুষগুলো সেখানে গিয়ে কেমন আচরণ শুরু করবে এবং কেমন সমাজ গড়বে?
চিন্তার জন্য অবস্থাগত ধারণা দিচ্ছিঃ

  • সূদুর অতীতে এমনই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে জীবন শুরু করার পর ধীরে ধীরে ক্রমপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ সভ্যতা বিনির্মাণ করেছে।
  • নতুন যে মুক্ত-ভূখন্ডে মানুষগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হল সেখানে কোনো রাষ্ট্র নেই; আইনের শাসন নেই।
  • আদিম যুগের মানুষরা গরীব ও ধনীর ব্যবধান দেখেনি, যা বর্তমান মানুষ দেখেছে।
  • বর্তমান মানুষের ব্যাপক জ্ঞানবৈষম্য আছে। জানার অনেক তারতম্য এবং বৈচিত্র আছে।
  • আদিম মানুষদের এরকম বহু ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিচিত্র ধরনের মূল্যবোধ ছিলনা, যা বর্তমান মানুষের আছে।
  • আদিম যুগের মানুষদের অভিজ্ঞতা, লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণ ছিলনা যা বর্তমান মানুষগুলোর আছে। এই ২০ হাজার মানুষ সেখানে তাদের বর্তমান অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ও মূল্যবোধ সাথে নিয়ে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রহীন মুক্ত সমাজে এবং মুক্ত ভূখন্ডে বর্তমানকালের এরকম বিভিন্ন বিশ্বাস, প্রশিক্ষণ, মূল্যবোধ ও নানা অভিজ্ঞতার ২০ হাজার নর-নারীকে ছেড়ে দিলে তারা সেখানে গিয়ে প্রথম একশো বছরে কি করবে? সবার মতামত জানতে চাই।

ফেসবুকে যেসব উত্তর পেয়েছিলাম: 

Brata Roy: মসজিদ, মন্দির বানাবে। আওয়ামি লিগ, বিএনপি করবে। কুমিল্লা সমিতি করবে।
               Dip Ahsan: নোয়াখালী বিভাগ চাইয়া আন্দলন করবে৷

Shukla Gharami: প্রথমে জমি দখলের প্রতিযোগিতা শুরু করবে।

Dip Ahsan: ভয়, অসহায়ত্ব ও ভাগ্যের ত্রানকর্তা হিসেবে প্রথমেই একটা উপাসনালয় স্থাপন করবে৷                  Pulack Ghatack: কিন্তু সবার বিশ্বাস তো একরকম নয়।
            Dip Ahsan: বিশ্বাসের বিভাজন থেকেই আদর্শ, দর্শন ও অন্যান্য বিভাজন শুরু হবে।

মুনির নূর: আদিম যুগে তো সবাই সমানভাবে চলতো। কিন্তু শিক্ষা,অভিঙ্গতা,উচু-নিচু শ্রেণীবিভেদ কখন থেকে শুরু হলো?

Sd Dolon: প্রথমে নারীদের উপর শক্তি প্রয়োগ করবে,,তারপর কিছু নিয়ম করবে নিজদের স্বার্থে যাদের বাহুবল বেশি ও জনবল একত্রে নিতে পারবে।তারপর ধর্ম বানিয়ে নিবে, উঁচু নিচু সৃষ্টি হবে এককথায় বৈষম্য সমাজ তৈরি করবে, তারপর নিজের প্রডাক্টের গুনগান গাইবে,,নিজ সম্প্রদায় ভুল করলেও জয়ধ্বনি দিবে তা নেতা হিসেবে থাকতে প্রবল শক্তি যোগাবে। তারপর লাশ পড়তে শুরু হবে ধর্ষণ অনেক আগে শুরু হয়ে যাবে ইত্যাদি একশো বছরের ভিতর হয়ে যাবে।

Lina Saom: কোন ধরনের মানুষ ছেড়ে দেয়া হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করছে। কথায় আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে।
Him Ridoy Roy Adhikary: Lina Saom এতগুলো কমেন্ট থেকে এটাই বেস্ট।
Pulack Ghatack: Lina Saom দৈবচয়নের মাধ্যমে। অর্থাৎ বেছে বেছে নয় বিশেষ জাতের মানুষকে নয়। পুকুরে জাল ফেললে যেমন নানা জাতের মাছ ধরা পরে সেরকম। বাচবিচার না করে।                  Sadiq Pavel: Pulack Ghatack আপনি কোন পুকুরে মাছ ফেলবেন তার উপর নির্ভর করবে… যেমন middle east এ,নাকি southeast এ,নাকি china তে?নাকি north America তে?নাকি ইউরোপে? পুকুরে কি কি মাছ আছে তা জানতে হবে আগে…
Lina Saom: Pulack Ghatack এমনিতেও মানুষকে দৈবচয়ন ছাড়া বাছতে পারবেন না। যত বাছাবাছির ক্ষমতা পৃথিবীতে আছে সব একসাথে করলেও না। মানুষ প্রতিটি সেকেন্ডে চেঞ্জ হয়। পরিবেশ অনুযায়ী সে নিজেকে তার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। তাই পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে মানুষ বাছা। আমি মনে করি এটা অসম্ভব কাজ।
            Him Ridoy Roy Adhikary: Pulack Ghatack স্যার সবচেয়ে বড় কথা, নিয়ম বহির্ভূত কোন কিছু চলবে না,,তার মানে এদিকে যেমন সেদিকে ঠিক তেমনি হবে হয়তো একটু কম কি বেশী,,যেহেতু আন্তর্জাতিক বলতে একটা ব্যাপার আছে।

Prasanta Bikash Roy: নরওয়ে নেদারল্যান্ডসের মানুষ ছাড়লে এরা বছর কুড়ির মধ্যে বসবাস যোগ্য করে তুলবে। কুড়িটা হাসপাতাল বানাবে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।

বাংলাদেশের হলে কুড়ি বছরে জনসংখ্যা দেড় লাখ করে দেবে। দশ বারোটা জেল হবে। আর পাশের সমুদ্রের মাছ নিঃশেষ করে দেবে।

তারেক মন্ডল: এই বিশ হাজার মানুষকে কি স্মৃতি শূন্য করে পাঠানো হবে? সেটা হলে আপনার প্রদত্ত ধারনা সমূহ কাজ করবে। তা না হলে যে যার মতো করতে গিয়ে মারামারি করে বিশ হাজারকে দশ হাজারে পরিনত করবে আগে।

Pulack Ghatack: মানুষ যদি শুধু পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া আর কোনোকিছু না নিয়ে সেখানে যায়, তবে প্রথমেই সেখানে শুরু হবে বাঁচার লড়াই। কারণ যন্ত্র এবং অর্থনীতির অন্যান্য উপাদান না থাকলে জ্ঞান থাকলেও মানুষকে অসহায় হতে হবে। সবকিছু নতুন করে তৈরি করতে হবে। সেজন্য উৎপাদনের উপাদান লাগবে। শুরুতে কাঁচা ফলমুল এবং কাঁচা মাছমাংস খেয়ে বাঁচতে হবে। একবছরের মধ্যে সকল মানুষ নগ্ন হয়ে যাবে। কারণ, তাদের কাছে বস্ত্র বয়নের মতো উপাদান থাকবে না। যন্ত্র এবং সুতা ছাড়া কাপড় বানানো যায় না। তাই নগ্ন সংস্কৃতি থেকে শুরু করতে হবে। সেই বাস্তবতায় দ্বন্দ্ব এবং সহযোগিতা দুটোই থাকবে। জমি এবং জীবনের অন্যান্য উপকরণসমূহ দখলের যুদ্ধ শুরু হবে। প্রভুত্ব বা রাজত্ব কায়েমের লড়াইও শুরু হবে। হানাহানি এবং দলবাজি শরু হবে। তবে বাঁচার প্রয়োজনেই মানুষ মানুষকে সহযোগিতা করবে। অসুখ-বিসুখে এবং দুর্যোগে অনেক মানুষের করুণ মৃত্যু হবে। ধর্ম বা সংস্কৃতি নিয়ে দ্বন্দ্ব করার সুযোগ মানুষ পাবে না। এগুলো আমার প্রাথমিক ধারণা। আপনাদের মতামত শুনতে চাই।

[আরও অনেকের জবাব ফেসবুকের এই লিংকে] 

[পুলক ঘটক; সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ]

 ফেসবুক পেজফেসবুক প্রোফাইলটুইটার অ্যাকাউন্ট

বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_img
spot_img

বাছাইকৃত

বিশেষ নিবন্ধ