নেই বিচ্ছেদের অধিকার; ভরণপোষণে বন্দি নারীরা
স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের ব্যবস্থা নেই; স্বামীর একাধিক বিয়ের সুযোগ
আংশিক সংশোধন করে সময়োপযোগী করা জরুরি —দাবি আইনজ্ঞদের
রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় মিলছে না আইনি প্রতিকার
নারীদের সম্পত্তি ও বিচ্ছেদের অধিকার না থাকা বৈষম্য —ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ -সাবেক আইনমন্ত্রী
এমন ব্যবস্থা পুরো সমাজকেই অসহায় করে রেখেছে —রানা দাসগুপ্ত প্রসিকিউটর, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল
প্রতিটা ধর্মেরই ধর্মীয় শাস্ত্রগুলো নারীবান্ধব নয় —ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সাবেক প্রসিকিউটর, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল
নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে শাস্ত্র দিয়ে আটকে রাখা উচিত নয় —ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
আমার সংবাদ: বৈবাহিক জীবনে স্বামী কর্তৃক নির্যাতন, নিপীড়ন ও নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন হিন্দু নারীরা। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তবে আইনি প্রতিকার মিলছে না।
হিন্দু আইনে নারীর সুরক্ষা নামমাত্র। নেই বিচ্ছেদের অধিকার, পাচ্ছে না স্বামী ও পিতৃ সম্পত্তির ভাগ। স্বামী দুশ্চরিত্র, লম্পট, নির্যাতনকারী, কিংবা নিরুদ্দেশ হলেও আইনগতভাবে নেই তালাক দেয়ার সুযোগ। চলছে শাস্ত্র মতোই। বনিবনা না হলে নারীকে শুধুই আলাদা থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু হিন্দু আইনে নারীদের বিচ্ছেদের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। ফলে বিয়েরও সমাপ্তি ঘটছে না। যার কারণে নানা যন্ত্রণা বঞ্চনা সহ্য করেই সংসারে টিকে থাকতে হয় নারীদের।
আবার আইনে স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের ব্যবস্থা না থাকলেও স্বামীর আছে একাধিক বিয়ের সুযোগ। আর সেই সুযোগেই একাধিক বিয়েও করছেন অনেক পুরুষ। নারীদের দাম্পত্য কলহ মেটাতে শুধু আপস-মীমাংসাই যেনো একমাত্র ভরসা। আবার আপসেও হয়রানির শিকার হচ্ছে নারী। একপেশে সালিশে স্বামীর কাছে পরাজিত হচ্ছেন স্ত্রী। অনেকে পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় ভরণপোষণও। অত্যাচার থেকে যেনো বেরোনোর কোনো পথ নেই। যেনো নালিশেরই জায়গা নেই। যেনো মুক্তির সকল পথ অবরুদ্ধ। এতে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালে পুরনো হিন্দু আইনের সংস্কার হলেও নানা দাবির পরও বাংলাদেশে এ আইনের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সংস্কারেরও নেই কোনো উদ্যোগ। আর হিন্দু পারিবারিক আইনে সংস্কার না হওয়ায় নানা প্রকারের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারীরা।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, অধিকাংশ নারীই লোকলজ্জার ভয়ে দিনের পর দিন ভোগ করছেন নির্যাতন। বিধবা হলেই আশ্রিত হয়ে বাস করতে হয় মৃত স্বামীর বাড়িতে। পান না স্বামীর সম্পত্তির কোনো ভাগ। আবার বিধবা নারীর ছেলে সন্তান না থাকলে পড়তে হয় মহা বিপাকে, তখন স্বামীর বাড়িতে টিকে থাকাও তার দায় হয়ে পড়ে বলে তাদের দাবি।
এমনই একজন সুপ্রিয় দত্ত। বাড়ি ফরিদপুর শহরের নীলটুলী এলাকায়। প্রায় দুই দশক আগে আকস্মিক অসুস্থতায় স্বামী মারা যায়। তখন তার কোলে দুই শিশুসন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেখাপড়া করা এই নারী ফরিদপুরে একটি কলেজে শিক্ষকতা করার সুবাদে আর্থিকভাবে সমস্যায় তাকে পড়তে হয়নি। তবে বিধবা হওয়ার পর থেকে তিনি যেনো শ্বশুরবাড়িতে আশ্রিত আছেন, এমনটাই তার মনে হয়। সুপ্রিয় দত্ত বলছিলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি শ্বশুর বাড়িতে আছি। আমার একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। আমার ছেলে আছে বলে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে পারছি। কিন্তু সম্পত্তির ওপর আমার কোনো মালিকানা নেই। বাবার বাড়িতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার নিজের বলে কোনো সম্পত্তি নেই। শ্বশুর বাড়িতে আমি আশ্রিত বলতে পারেন। তিনি মনে করেন, এ ধরনের ব্যবস্থায় নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আসলে এর সংস্কার প্রয়োজন। বিধবা নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে কারণ আইনি কোনো সুরক্ষা নেই, তাদের আবার বিয়ে করারও সুযোগ শাস্ত্রে নেই। তখন তাদের অসহায় পরিস্থিতি মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
আইনজ্ঞরা বলছেন, হিন্দু আইন সংশোধন করে সময়োপযোগী করা জরুরি- এটা সময়ের দাবি। মূলত এ জাতীয় সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সার্বজনীন পারিবারিক আইন। কারণ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ফৌজদারি কোনো অপরাধ যেমন চুরি, মারামারি কিংবা খুনের জন্য যদি জাতি, ধর্ম-বর্ণ ও গোত্র ভেদে কোনো রকম বৈষম্য প্রদর্শন করা না হয়, তবে কেন বিয়ের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বৈষম্য মেয়েদের মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি হিন্দু বিয়েতে রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যতামূলক বিধান নেই। ফলে বিয়ে, তালাক কিংবা একই স্বামীর একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনি সহায়তা পান না হিন্দু নারীরা। এভাবে হিন্দু নারীরা বিয়ের ক্ষেত্রে ভয়াবহভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অথচ বিয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম আইনে রয়েছে বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রির বিধান। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, এ বিধান না মানা হলে শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকার হিন্দু নারীরা এ ক্ষেত্রে প্রতিকার পায় না। অথচ ভারতে হিন্দু বিয়েতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিয়ে-বিচ্ছেদের অধিকার না থাকায় হিন্দু নারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। বিধবা নারীদের সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নও এখন উঠছে। ধর্মে বিয়ে-বিচ্ছেদের ব্যবস্থা না থাকায় আমৃত্যু একা থাকতে হয় নারীকে, এটা মেনে নেয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। একবার বিয়ে হলে যেহেতু বিচ্ছেদের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেই সূত্র ধরে নারীদের দ্বিতীয় বিয়ে করারও অধিকার নেই। অন্যদিকে হিন্দু পুরুষদের স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই একাধিক বিয়ে করার সুযোগ রয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নির্যাতনের নানান অভিযোগে হিন্দু নারীদের মধ্যে স্বামী থেকে আলাদা থাকার প্রবণতা বাড়ছে। হিন্দু নারীরা মূলত ঘরে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে স্বামী থেকে আলাদা থাকার আবেদন নিয়ে আসেন। তখন সালিশ-সমঝোতার মাধ্যমে ভরণপোষণের অর্থ নিয়ে তারা আলাদা হচ্ছেন। বিয়ের কিন্তু সমাপ্তি ঘটছে না। সেখান থেকে তাদের বেরোনোর কোনো পথ নেই। হিন্দু নারীরা এখন বিয়ে-বিচ্ছেদের অধিকার চাইছেন। যখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে বা জীবন আটকে যাচ্ছে, তখন অনেক নারী ধর্ম বা শাস্ত্র সবকিছু এড়িয়ে অন্তত স্বামী থেকে আলাদা থাকছেন বা থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বড় অংশই চোখ বুঁজে সব মেনে নিচ্ছেন। আর সেখানে বন্ধনের চেয়ে জীবন টিকিয়ে রাখাই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন।
জানা যায়, হিন্দু আইনটি ব্রিটিশ আমলের। ১৯৫৫ সালে এ আইটি পাস হয়। কিন্তু তাতে বিয়ে-বিচ্ছেদ, পরিবার বা সম্পত্তির মালিকানা প্রশ্নে ওই ধর্মের শাস্ত্রের ব্যবস্থাগুলোই রয়েছে। হিন্দুমতে, বিয়ে রেজিস্ট্রি করার উদ্দেশ্য হলো, ধর্মীয় রীতি ও সকল নিয়ম কানুন মেনে বিয়েটা হয়েছে, সেটা পরবর্তীতে প্রমাণ করার জন্য নথিভুক্ত করা। এটা ছাড়া বিয়ে রেজিস্ট্রির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। হিন্দু আইন সংস্কারের লক্ষ্যে ২০১২ সালে অন্তত ৫০টি নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে একটি খসড়া সুপারিশমালা তৈরি করে তা আইন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছিলো সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার, সুনির্দিষ্ট কারণ সাপেক্ষে আদালতের মাধ্যমে হিন্দু নারী-পুরুষের বিয়ে-বিচ্ছেদ ও পুনঃবিয়ে, হিন্দু নর-নারীর বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং দত্তক নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়। কিন্তু পরে বিষয়টি আর বেশিদূর এগোয়নি। বিয়ে-বিচ্ছেদ কিংবা তালাকের ক্ষেত্রে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী নারীরা নিকাহনামার ১৮ নম্বর কলামের শর্তসাপেক্ষে স্বামীকে তালাকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। কিন্তু হিন্দু নারীর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো আইন বা বিয়ের দলিল নেই। হিন্দু বিয়ে নিবন্ধন করতে সরকার ২০১৩ সালে একটি আইন করলেও সেটি বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।
হিন্দু আইনে যা আছে : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতের মিল হচ্ছে না বা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অসুবিধা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে জুডিশিয়াল সেপারেশনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে হয়। আদালত ওই আবেদন যথোপযুক্ত ও যুক্তিসঙ্গত মনে করলে, বিয়ে-বিচ্ছেদ না করেও আদালতের মাধ্যমে দু-পক্ষের আলাদা হয়ে থাকার বিধান আছে। অনেক সময় দু-পক্ষ আলাদা থাকার ফলে নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো বুঝতে পেরে আবার একসাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। কিন্তু যদি এক বছর আলাদা থাকা সত্ত্বেও স্বামী-স্ত্রীর মতপার্থক্য না কমে ও মীমাংসার কোনো সম্ভাবনা তৈরি না হয় সে ক্ষেত্রে যেকোনো পক্ষ আদালতের কাছে বিয়ে-বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) জন্য আবেদন করতে পারেন। আদালত তা মঞ্জুর করলে তারপর বিয়ে করার কোনো বাধা থাকে না। তবে জুডিশিয়াল সেপারেশন চলাকালীন কেউ বিয়ে করতে পারেন না, কারণ আইনের চোখে তখনো তারা স্বামী ও স্ত্রী।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, হিন্দু আইনে নারীদের তালাকের সুযোগ দিয়ে দ্রুত সংশোধন করা উচিত। কারণ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো নারীর ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক। একজন নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে আইন দিয়ে আটকে রাখাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে তাই আইনটি সময়োপযোগী করা জরুরি। নারীরা কার সাথে সংসার করবে বা করবে না সেটার বিষয়ে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিত। এক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতিনীতিকে আবদ্ধ করে কারো জীবনের ওপর সেটা চাপিয়ে দেয়া কাম্য নয়। হিন্দু নারীরা চাইলে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের দারস্থ হতে পারেন। আশা করি আদালতে এ বিষয়ে ভালো সুরাহা পাওয়া যাবে।
হিন্দু আইন সংস্কার হওয়া উচিত কি-না এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নারী অধিকারে সোচ্চার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, প্রতিটা ধর্মের শাস্ত্রগুলো নারীবান্ধব নয়। কিন্তু যুগের প্রয়োজনে বিভিন্ন সমাজ বা দেশ তাদের ধর্মীয় আইনগুলো সংস্কার বা পরিবর্তন করেছে। যেমন ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হয়েছে, তারা ধর্মীয় শাস্ত্রের দিকে না তাকিয়ে হিন্দু আইন পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করেছে। পিতৃ সম্পত্তি ও বিয়ে-বিচ্ছেদ অধিকার দুটোই তারা আইনে সংযুক্ত করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা নিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি। আমাদের দেশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কেউই নারীকে সম্পত্তি দিতে চায় না, তাই এ আইন সংশোধনের বিষয়ে পুরুষের আগ্রহ নেই। সেজন্যই যুগের পর যুগ পুরনো আইনেই চলছে। আর হিন্দু নারীরা তখনই বিয়ে-বিচ্ছেদের অধিকার চাইছেন যখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে বা জীবন আটকে যাচ্ছে। তখন অনেক নারী ধর্ম বা শাস্ত্র সবকিছু এড়িয়ে অন্তত স্বামী থেকে আলাদা থাকছেন বা থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বড় অংশই চোখ বুঁজে সব মেনে নিচ্ছেন। আর সেখানে বন্ধনের চেয়ে জীবন টিকিয়ে রাখাই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই নারীদের ইচ্ছাকে প্রধান্য দিয়ে হিন্দু আইন সংস্কার করা উচিত।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত নির্যাতিত নারীদের আইনি সহায়তা দেন। তিনি বলেছেন, অনেক নারী নির্যাতিত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে স্বামী থেকে আলাদা থাকেন। কিন্তু এই ব্যবস্থার আইনগত কোনো ভিত্তি থাকে না। ধর্ম অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন থাকতে হবে আমৃত্যু। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শাস্ত্র বা মন্ত্র তাদের জায়গায় আছে। আর বাস্তবতা হচ্ছে, ঘরে স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধও আছে। স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে একা থাকছে। এই সুযোগে স্বামী আরেকটা বিয়ে করছে। এটাই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিধবা নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে কারণ আইনি কোনো সুরক্ষা নেই, তাদের আবার বিয়ে করারও সুযোগ শাস্ত্রে নেই। তখন তাদের অসহায় পরিস্থিতি মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। রানা দাশগুপ্ত মনে করেন, এমন ব্যবস্থা পুরো সমাজকেই অসহায় করে রেখেছে। বিধবা নারীদের একটা বড় অংশই চোখের জল ফেলে বাকি জীবনটা পার করেন। আইনজীবী হিসেবে আমার কাছে অনেকে সহায়তা চান। কিন্তু আইনগতভাবে আমার কিছুই করার থাকে না। তখন সন্তানদের ডেকে তাদের মায়ের সাথে সাথে ভালো আচরণ করার অনুরোধ করে দায়িত্ব শেষ করি।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, হিন্দু নারীদের সম্পত্তি বিয়ে-বিচ্ছেদের অধিকার না থাকা বৈষম্য তো বটেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়ন হয়েছে। সমানাধিকারের প্রশ্নে আমাদের দেশেও এ ধরনের আইন প্রণয়ন হওয়া উচিত।
সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি⇒ আমার সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১
ওয়েবসাইট⇒ বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ
ফেসবুক গ্রুপ লিংক⇒ হিন্দু আইন সংস্কার চাই