হিন্দু আইনে অন্ধের ছেলে জন্মালেও বঞ্চনা
পুলক ঘটক: রাম এবং শ্যাম দুই ভাই। রামের একটি ছেলে আছে কিন্তু সে জন্মান্ধ এবং বিবাহিত। এই অবস্থায় রাম মারা গেলে তাহার সম্পত্তি তাহার ভাই শ্যাম পাইবে। হিন্দু দায়ভাগ আইনে জন্মান্ধ ব্যক্তি উত্তরাধিকারী হইতে পারে না। সেই কারণে রামের অন্ধ পুত্র হইতে তাহার ভ্রাতার দাবি অগ্রগণ্য হইল।
অন্ধ পুত্র সম্পত্তি না পাইলেও তাহার অর্থাৎ অন্ধের কোনো পুত্র থাকিলে সে সম্পত্তি পায়। অর্থাৎ রামের অন্ধ পুত্রের কোনো পুত্র থাকিলে সে তাহার ঠাকুরদাদার সম্পত্তি অগ্রগণ্য হিসেবে পাইতো। অর্থাৎ অন্ধ পুত্র না পাইলেও পৌত্র (নাতি) অবশ্যই পাইতো। তবে রাম মারা গেলে তাহার অন্ধ পুত্রের ভবিষ্যতে কোন পুত্র সন্তান হইতে পারে – এই ভরসায় রামের সম্পত্তির উত্তরাধিকার থামিয়া থাকিবে না। সে মারা যাওয়া মাত্র তৎক্ষণাৎ তাহার সম্পত্তি তাহার ভাই শ্যামের অধিকারে চলিয়া যাইবে। তাহার অন্ধ পুত্র বঞ্চিত হইবে। ভবিষ্যতে যদি তাহার অন্ধ পুত্রের কোনো সন্তান জন্ম লাভ করে, তাহা হইলে সেই সন্তান কোনো সম্পত্তি পাইবে না।
কারণ সম্পত্তি আগেই রামের ভাই শ্যামের অধিকারে চলিয়া গিয়াছে। সেই সম্পত্তি আর অন্ধের পুত্রের কাছে ফিরিয়া আসিবেনা। হিন্দু আইনের ইহা একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি। কেহ একবার সম্পত্তি আইনসঙ্গতরূপে সম্পূর্ণসত্বে পাইলে তাহা হইতে বঞ্চিত হয় না। তবে নারীদের ক্ষেত্রে আলাদা। নারীরা সম্পত্তি পূর্ণস্বত্বে পায় না। তাহাদের অধিকারের সম্পত্তি আবারও ফিরিয়া যায়।
এখানে আরও একটি ব্যাপার আছে। যদি রামের মৃত্যুর সময় তাহার অন্ধ পুত্রের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা অর্থাৎ গর্ভবতী থাকে তাহা হইলে ওই সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত রামের সম্পত্তির উত্তরাধিকার সাময়িক স্থগিত থাকিবে।
যদি রামের মৃত্যুর পর তাহার পুত্রবধূর পুত্র সন্তান জন্মে তাহা হইলে সেই অন্ধের নবজাত পুত্র তাহার ঠাকুরদাদার সম্পত্তির মালিক হইবে। রামের ভাই শ্যাম মালিক হইবে না। ধরিয়া নেওয়া হইবে যে মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই ঐ পুত্র সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইয়াছিল। তাহার জন্মের পূর্ব পর্যন্ত কয়েক মাস রামের ভাই শ্যাম তাহা শুধু রক্ষার দায়িত্বে ছিল।
তবে অন্ধের গর্ভবতী পত্নী যদি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়, তাহা হইলে সম্পত্তি পাইবে না। রামের মৃত্যুর পর তাহার ভাই শ্যামই সমুদয় সম্পত্তি পাইবে। রামের অন্ধ পুত্র বা তাহার কন্যা সম্পত্তি পাইবে না।
সূত্র: হিন্দু আইনের ভাষ্য, গাজী শামসুর রহমান।
[পুলক ঘটক; সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ]
⇒ ফেসবুক পেজ, ফেসবুক প্রোফাইল, টুইটার অ্যাকাউন্ট
⇒বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ