সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ গোপালগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের জমি-জায়গা জোর করে দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এলাকাটি ঘুরে দেখার অনুরোধ করেছেন এবং যাদের জমি জোর করে নেওয়া হয়েছে সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক এলাকা পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আজকে আমি পরিষ্কারভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করতে চাই। এই এলাকাটি শতভাগ হিন্দুপ্রধান এলাকা। যাদের শত শত বিঘা জমি জোর করে, হুমকি দিয়ে, চক্রান্তমূলকভাবে বেনজীর দখল করে নিয়েছেন। শুধু দখলই করেননি, আমরা দেখেছি, কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে এমনভাবে চারদিকে বেষ্টনি করা হয়েছে, যাতে অন্য কেউ ওই জায়গায় প্রবেশ করতে না পারে।
“ওই দিকে (পার্কের ভিতরে) এলাকার হিন্দুদের জায়গা-জমি আছে, সেগুলো তারা আর দেখাশুনা করতে পারছেন না। অথচ, এখানকার লোকজনের প্রধান জীবীকার উৎস হলো কৃষি। আজকে এই জীবীকার উৎস থেকে তারা বঞ্চিত হওয়ার ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি বিশাল অর্থনৈতিক সংকট নেমে এসেছে। আমি আবেদন করতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলাকাটি আপনারই। আপনি একবার এলাকায় আসুন, আপনি দেখে যান, কিভাবে এখানকার সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি জবরদখল করেছেন বেনজীর আহমেদ।”
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা দাবি ও আবেদন জানাই, যাদের সম্পত্তি দখল করা হয়েছে, তাদের সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হোক। এখন এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে। একই সঙ্গে বলতে চাই, এই এলাকার সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমও আসুন, জনগণ জানতে চায় তাদের এ অবস্থা কেন হলো?”
“আমি আহ্বান জানাই, তারা একবার যাতে আসেন। তাতে যারা এরই মধ্যে সম্পদ হারিয়েছেন তারা অন্তত সান্ত্বনা পাবেন। তাদেরও যে মূল কথা, সম্পত্তি ফেরত চাই, এই জায়গাটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে পরিস্থিতি অবলোকন করে অবশ্যই বিবেচনা করবেন, এ আশা আমরা করতে পারি।”
দুর্নীতি ও অপকর্মের কারণেই বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে মন্তব্য করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বেনজীর যে ভূমিকাটা পালন করছেন, এটা শুধু সরকারের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করেনি, এটা গোটা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করেছে। আমাদের যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ তাদের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করেছে।
“আজকে জনগণ উপলব্ধি করতে পারছে এ জাতীয় দায়িত্ব যারা পালন করেছেন তাদের এ অপকর্মের কারণে আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নিষেধজ্ঞা, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আজকের দিনে আমাদের মনে হয় এদের (বেনজীর ও জেনারেল আজিজ) কারণেই হয়েছে। হয়তো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় আমরা বিষয়গুলো জানতাম না বলেই অনেক সময় মনে করেছি, একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।”
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “তিনি বলেছেন, বেনজীর ও আজিজ যা করেছেন সেটা উনাদের ব্যক্তিগত ব্যপার। এখানে রাষ্ট্রের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু এ বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে চেপে রাখার কোনো বাস্তবতা নাই। অতএব আজকে তাদেরও উচিত, তারা বলুক এই মামলা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কী করে তারা এ দেশ থেকে চলে গেলো। এবং বিচার এড়ানোর তারা চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদ ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছে। অচিরেই সংবাদ সম্মেলন করে তা তুলে ধরা হবে।
ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণ উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা ভাবি, বাংলাদেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি দখল নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এবং এই জায়গা-জমি দখলের ক্ষেত্রে প্রায় সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা রাষ্ট্রের প্রভাশালী ব্যক্তি। যখনই যে সরকার ক্ষমতায় আসে তারা সেই সরকারের ক্ষমতার ক্ষমতাপুষ্ট। তারা এই ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে সাধারণ নিরীহ ও শান্তিপূর্ণ নাগরিকের জীবনে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে, এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যেটা ঘটছে, বেনজীর সেখানে একজন প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বেনজীরের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এই যে তারা একটি মামলা বা এ আলোচনা শুরু হওয়ার পর দেশ থেকে চলে গেল এবং দেশত্যাগ করতে পারলো, এ ব্যাপারে সরকারেরও জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। আমরা এ ব্যাপারেও সরকারের কাছে সুষ্পষ্ট জবাবদিহিতা চাই।”
এ সময় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকট তাপস কুমার পাল, মনীন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার সাহা, সংগঠনের গোপালগঞ্জ জেলার সভাপতি প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, সহসভাপতি শিপ্রা বিশ্বাস, সদস্য ডেভিড বৈদ্য উপস্থিত ছিলেন।
সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট ⇒সোর্স লিংক।।
⇒বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ