‘হিন্দু হতে পারিনি, মুসলিমও হতে পারিনি, স্যান্ডউইচ হয়েছি’

বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ ও কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে পরাজিত হয়েছে। এরপর পাঠানকে শুভেচ্ছা জানিয়েও কংগ্রেস প্রার্থীর অভিযোগ, তিনি জাতপাতের রাজনীতির কাছে হেরেছেন। তিনি ‘স্যান্ডউইচ’ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোটগণনা শেষে জানা যায়, বহরমপুর কেন্দ্রে অধীরকে প্রায় ৮৫ হাজার ভোটে হারিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও তৃণমূল প্রার্থী পাঠান।

অধীর বলেন, ‘বাংলার রাজনীতি ক্রমশ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি যারা আছে, তাদের জন্য নির্বাচন কঠিন হচ্ছে।’

এই কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘ভোট ঠিকঠাক হয়েছিল। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। পর পর পাঁচ বার জিতেছিলাম। মানুষের দোয়া-আশীর্বাদের ত্রুটি ছিল না। মানুষ মনে করছিল জেতানো দরকার, জিতিয়েছিল। এখন মনে করেছে যে কোনো দরকার নেই, তাই জেতায়নি। কিন্তু নির্বাচন তো নির্বাচন। হেরেছি মানে হেরেছি। আমি ইউসুফ পাঠানের কাছে পরাজিত হয়েছি, ইউসুফকে জয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি স্যান্ডউইচ হয়েছি। একদিকে, হিন্দু ভোটের বিভাজন, অন্যদিকে মুসলিম ভোটের বিভাজন। আমি হিন্দু হতে পারিনি, মুসলিমও হতে পারিনি।’

দেশের ফলাফল নিয়ে অধীর বলেন, ‘রাহুল গান্ধী আমার নেতা। রাহুল গান্ধী প্রমাণ করেছেন যে, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প হয় না।’

অন্যদিকে, অধীরের পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলে মমতা বলেন, ‘ওর ঔদ্ধত্যই এর জন্য দায়ী। আর উনি বিজেপির লোক। পাঠানকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ওকে আমরা আমন্ত্রণ করেছিলাম। উনি সেটা গ্রহণ করে মর্যাদা দিয়েছেন।’

বহরমপুরে এই প্রথম সংখ্যালঘু প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন অধীর। তার ওপর সেখানকার জনপ্রিয় চিকিৎসক নির্মলচন্দ্র সাহা বিজেপির প্রার্থী হওয়ায় অধীরের জন্য ভোটের সমীকরণ কঠিন হয়ে যায় বলেই রাজনৈতিক মহলের অনেকের মত। এর আগে পাঁচ বার অধীরের মূল প্রতিপক্ষ কখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে ছিলেন না। তাছাড়া ২০১৯ সালে অধীরের জয়ের ব্যবধান সাড়ে তিন লক্ষ থেকে ৮৭ হাজারে নেমে এসেছিল। যে বহরমপুর বিধানসভায় গত লোকসভা ভোটে প্রায় ৮৯ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন অধীর, সেখানেই ২০২১ সালে প্রায় ৫০ হাজার ভোটে হারে কংগ্রেস।

অন্যদিকে, জয়ের পর বহরমপুরবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পাঠান। সাদা শার্ট-জিন্‌সে গলায় মালা পরে তিনি বলেন, ‘এই জয় শুধু আমার জয় নয়। এখানকার সকল কর্মীর জয়। সবাইকে ধন্যবাদ।’

অধীরকে হারানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রেকর্ড তৈরি হয় ভাঙার জন্য। অধীরজি সিনিয়র লিডার। ওকে সম্মান করি। সেই সম্মান অটুট থাকবে।’

সাংসদ হিসেবে মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন বলে জানান তৃণমূল প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘ছোটদের জন্য স্পোর্টিং অ্যাকাডেমি করব। শিল্পের জন্য চেষ্টা করব।’

যদিও বহরমপুরে যে তিনি সব সময় থাকতে পারবেন না, তাও জানিয়ে দিয়েছেন পাঠান। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি গুজরাটে। কাজের সূত্রে দিল্লি যেতে হবে। তবে সময় পেলে এখানে আসবই। এটা আমার তৃতীয় বাড়ি। এখানে আমি আরও একটা পরিবার পেয়েছি।’

পাঠান জানান, তার জয়ের পর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। সবাই ভীষণ খুশি। নেতা এবং কর্মীদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্যে ভবন থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন

সকৃতজ্ঞ স্বীকৃতি:।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট ⇒সোর্স লিংক।।

⇒বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_img
spot_img

বাছাইকৃত

বিশেষ নিবন্ধ