বাবার সম্পত্তিতে অধিকার থাকবে মেয়েরও। বাবা যদি মৃত্যুর আগে উইল করে সম্পত্তির ভাগ মেয়েকে দিয়ে নাও যেতে পারেন, তা সত্ত্বেও বাবার সম্পত্তিতে অধিকার পাবেন মেয়েরাও। বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানিতে এমনই ঐতিহাসিক রায় দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
বৃহস্পতিবার হিন্দু মহিলা ও বিধবাদের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে মামলাটি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেখানেই বিচারপতি আবদুল নাজির এবং কৃষ্ণ মুরারির বেঞ্চ রায় দেয়, “কোনও হিন্দু ব্যক্তির কন্যা সন্তানরাও, তার বাবার স্ব-অর্জিত বা অন্যান্য সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে বাবার মৃত্যুর পরে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় কন্যা সন্তানদের দাবি বরং বেশি।”
অর্থাৎ, যদি একজন হিন্দু পুরুষ কোনও উইল ছাড়াই মারা যান, তার সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারী কন্যা পাবেনই। সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির ভাইয়ের ছেলে বা মেয়ে থাকলেও, তারা সেই সম্পত্তির কোনও ভাগ পাবে না। বরং সবার আগে ওই সম্পত্তির ভাগ পাবেন ওই মৃত ব্যক্তির কন্যা।
১৯৫৬ সালের হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের সমানাধিকার দেওয়া হয়নি। এর প্রায় ৫০ বছর পরে, ২০০৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সেই আইন সংশোধন করা হয় এবং ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকারের কথা বলা হয়।
পরে ২০২০ সালে আগস্ট মাসে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় দেয়, ‘‘অবিভক্ত যৌথ পরিবারের সম্পত্তিতে মেয়েদের সারা জীবন সমান অধিকার রয়েছে।’’ ২০০৫ সালের আগেও কারও বাবা মারা গিয়ে থাকলে তার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার রয়েছে।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ছবিটা প্রায়ই অন্য হয়। সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে কেবল ছেলেরাই প্রাধান্য পায়, ব্রাত্য রয়ে যায় পরিবারের মেয়েরা। উইল করে সম্পত্তি ভাগ করা থাকলে আলাদা বিষয়, তা না হলে যেন অলিখিত নিয়মেই মেয়েদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয় বাবার সম্পত্তির ভাগ থেকে।
বিচারপতি মুরারি তার ৫১ পাতার রায়ে এও জানিয়েছেন, উইল না করে মারা গিয়েছেন এমন কোনও মৃত হিন্দু ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী বা কন্যা যে মৃতের স্ব-অর্জিত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী পাবেন। এই আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হিন্দু মহিলারা যাতে পৈতৃক সম্পত্তি স্বচ্ছ ভাবে দাবি করতে পারেন।