কবীর চৌধুরী তন্ময়: পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এর স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এক ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তৎকালীন পার্বত্য শান্তিচুক্তির জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। আর এই চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি অবসানের মধ্য দিয়ে অনগ্রসর এবং অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের ধারা প্রবাহিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই দশক ধরে চলা সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ করে, অস্ত্র সংবরণ করে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে পাহাড়ে আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র গেরিলারা।
জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধের পটভূমি থেকে জানা যায়, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৫৪ হাজার একর চাষযোগ্য ভূমি জলমগ্ন হয়। এতে ভিটেমাটি হারিয়ে পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হন প্রায় ১ লাখেরও বেশি মানুষ। জমিজমা হারিয়ে অনেক পাহাড়ি পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। কাপ্তাই লেকের পানিতে তলিয়ে যায় রাঙামাটির নান্যারচর থানার মাওরুম নামক এম এন লারমার নিজস্ব গ্রামটিও।
১৯৬৩ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ছাত্র সম্মেলন সংগঠিত করতে গিয়ে কারাবরণও করেছিলেন মারুম নামক এম এন লারমা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কোনোক্রমেই পাহাড়িদের বন্ধু নয়, বন্ধু হতেও পারবে না। এ কারণে পাহাড়ি ছাত্র সমিতিতেও এম এন লারমা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। আবার ১৯৭১ সালে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করলেও মং রাজা মং প্রু সেইন, কে কে রায় ও এম এন লারমা প্রমুখ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। তারা তরুণ পাহাড়িদের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য সংগঠিত করার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাকমা রাজার প্রতিনিধি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন সম্বলিত পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিচার-বিশ্লেষণ করে তাদের ওই দাবী প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে পাল্টা বাঙালিকরণের প্রস্তাব করেন। এমনকি, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান রাঙামাটির জনসভায় পাহাড়িদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা সবাই বাঙালি হইয়া যাও। আমি তোমাদের উপজাতি থেকে জাতিতে প্রমোশন দিলাম’। কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর পাল্টা দাবী নাকচ করে দেন। শুধু তাই নয়, তারা চাকমা নেতা সন্তু লারমার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে জনসংহতি সমিতি এবং ১৯৭৩ সালে তাদের সামরিক শাখা শান্তি বাহিনীও গঠন করেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সমস্যাটি এভাবেই চলছিল এবং তেমন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাতে তৎকালীন পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ, আরও সংঘাতময় করে তোলে। দিনের পর দিন শান্তি বাহিনীর চোরাগোপ্তা হামলায় আমাদের বাংলাদেশি অনেক সৈনিক সেখানে তখন শহীদ হয়েছে। জিয়াউর রহমান ভেবেছিলো, অস্ত্রের মুখে শান্তি বাহিনীর সকল আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিবে। কিন্তু তার ওই সিদ্ধান্ত বরং আরও রক্তপাতের সূচনা ঘটায়, হিতে বিপরীত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আর পার্বত্য অঞ্চলে দিনের পর দিন শান্তি বাহিনীর হামলায় প্রচুর সৈনিকের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
আরেক অবৈধ স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদও অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম নীতির কিছুটা পরিবর্তন করেন। ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার ৩টি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করে তাদের হাতে কিছুটা রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করেন। তারপরেও স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে তারা সশস্ত্র আন্দোলন বন্ধ করেনি। উপজাতীয়রা কখনও স্বায়ত্তশাসন, কখনও বাঙালি খেদাও প্রভৃতি দাবীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবতারণা করেন। খালেদা জিয়া সরকারের আমলে ১৯৯২ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী অলি আহম্মেদের নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ বিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সাথে ৫ নভেম্বর ১৯৯২ সাল থেকে জনসংহতি সমিতির ৭ দফা এবং উপকমিটির ৬ দফা মোট ১৩ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে মূল সমস্যার কোনো সমাধানই কেউ করতে পারেনি।
রাজনৈতিক অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পার্বত্য সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে প্রধান করে জাতীয় কমিটি গঠন করে উপজাতীয় প্রধানের সাথে আলোচনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে ১ম দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২৬ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তির খসড়া প্রণয়ন করেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অন্যদিকে, এই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে থেকেই তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলাম এবং তাদের অপরাপর সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এর তীব্র বিরোধিতা করেন। তাদের ওই বিরোধিতা এবং বিরোধিতা করতে গিয়ে নানাবিধ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপও এ জাতি অবলোকন করেছে। ওই বিরোধিতা ছিল সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক চক্রান্ত। বিএনপি ও তার মৌলবাদী সহযোগীরা শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে সর্বশেষ অবস্থান থেকে একটা সময় তারা জেহাদেরও ডাক দিয়েছিলেন।
সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সম্পাদিত শান্তিচুক্তি; নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক সাফল্য। যুগ-যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা শান্তিচুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জনসংহতি সমিতি এবং তার সামরিক শাখা ‘শান্তিবাহিনী’ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীতে দীর্ঘকাল ধরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে আসছিল। কিন্তু ইতিপূর্বে কোনো সামরিক এবং বেসামরিক সরকার এ সমস্যা সমাধানের বিপরীতে সংঘাত সৃষ্টি করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার ষড়যন্ত্র করেছিল। শেখ হাসিনা এ দীর্ঘ সংঘাতময় পরিস্থিতির পরিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে যে যুগান্তকারী ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা সারা পৃথিবীব্যাপী বহুল প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভূষিত হয়েছিলেন ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কারে।
আর চুক্তি মোতাবেক ৪৫ দিনের মধ্যে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের তালিকা প্রদান করা হয়েছিল এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত ৪ দফায় ১৯৪৭ জন সশস্ত্র শান্তি বাহিনীর সদস্য শেখ হাসিনা সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। ৮৭৫টি অস্ত্রসহ ২ লাখের অধি গোলাবারুদ তারা জমা দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ সর্বশেষ দলের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখা শান্তি বাহিনীর পুরোপুরি বিলুপ্তি ঘটে।
নানাবিধ সমস্যার মাঝেও বঙ্গবন্ধুকণ্যা শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছার বাস্তব প্রতিফলনও ফুটে উঠেছে পাহাড়ি অঞ্চলে। পাহাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নের নানান পদক্ষেপের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গম পাহাড়ে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সন্তানদের যেমন শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হচ্ছে তেমনি তাদের পরিবারদেরও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে সার্বিকভাবে সচ্ছল করে তোলা হচ্ছে। যাতে করে দুর্গম পাহাড়ে থেকেও সমাজের মুল স্রোতের সাথে বাস্তব অর্থেই অনায়াসে মিশতে পারে এবং আধুনিক বিশ্বায়নে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে। তাই দেশের একদশমাংশ জায়গা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের লক্ষে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ও রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে।
আর শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে বিভিন্ন মহলের দাবি থেকে স্পষ্ট যে, চুক্তিটির গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপগুলো অবশ্যই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অংশ। বিশেষ অঞ্চল বলেই দেশের মধ্যে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়েছে। একজন প্রতিমন্ত্রী সেখানকার সব বিষয় দেখভাল করছেন। ১৪৫টিরও বেশি এনজিও পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের সব উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, কেবল শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে বলেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে।
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বর্ণিল জীবনাচার, ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে সরকার গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তির ফলে পার্বত্য জেলাগুলোর দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটে। নতুন করে সূচিত হয়েছে শান্তির পথচলা। শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে এটি একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্রের নতুন খেলা শুরুর ইঙ্গিত মিলছে। ষড়যন্ত্রের এ নীল-নকশা হয়েছে পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের সংগ্রাম বাদ দিয়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবির আন্দোলনে চার গ্রুপই এখন সম্পৃক্ত।
অন্যদিকে জুম্ম জনগণের মধ্যে ‘আদিবাসী বনাম উপজাতি’ বিতর্ক উসকে দেওয়া হচ্ছে, যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য সুখকর নয়। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রণীত ‘ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন-১৯৫৭’ (কনভেনশন নম্বর ১০৭)-এ অনুস্বাক্ষর করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী ও ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়সহ তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘের এ সংস্থা আবার সংশোধিত ‘ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন-১৯৮৯’ (কনভেনশন নম্বর-১৬৯) গ্রহণ করেছে। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল জাতীয় পর্যায়ে উপজাতিদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয়। এখানে ট্রাইবাল বা সেমিট্রাইবাল বলতে ওই গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের ট্রাইবাল বৈশিষ্ট্য হারানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং এখনো জাতীয় জনসমষ্টির সঙ্গে একীভূত হয়নি।
অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ নয়, বাস্তবতার আলোকে প্রয়োজনে গবেষণা করে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং এই শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি অধিবাসীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে— এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)