পুলক ঘটক: আমি কোনো মুসলমানকে আল্লাহর “দোয়ায়” বলতে শুনিনি। তারা বলেন, আল্লাহর “মেহেরবাণীতে”। কোনো মুসলমান “আলাইকুম”, “মুশরিক,” “তাবলীগ” এবং বিশেষ করে “আল্লাহু আকবার” শব্দের বানান ভুল করবে বা বিকৃত করবে, তা বিশ্বাস করার কারণ নেই। মুসলমানরা “আলহামদুলিল্লাহ” এবং “ইনশাআল্লাহ” শব্দ কোটেশন মার্ক দিয়ে লেখে না।
সংযুক্ত স্ক্রীণশটে যে কয়েকটি আরবি শব্দ দেখা যাচ্ছে, তার প্রায় প্রত্যেকটি ভুল। তার মানে এটা কাঁচা হাতের শয়তানি। মাদ্রাসার ছাত্রদের লেখায় বাংলাশব্দের বানানে ভুল পাওয়া যেতে পারে; কিন্তু তাদের আরবি প্রায় নির্ভুল পাওয়া যায়। কিন্তু এই প্রোপাগান্ডা বার্তায় যা লেখা হয়েছে তাতে বাংলা মোটামুটি নির্ভুল; আরবি শব্দগুলো ভুল।
লক্ষ করুন “মুসরিক” শব্দের পর ব্রাকেটে “হিন্দু” লিখে দেয়া হয়েছে। মুসলমানরা মুশরিক শব্দের অর্থ জানে। তাদেরকে মুশরিক শব্দের পর আবার ব্রাকেটে “হিন্দু” লিখে বুঝিয়ে দিতে হয় না। লেখাটি বানানো হয়েছে হিন্দুদের বোঝানোর জন্য। হিন্দুরা যাতে মুশরিক শব্দের অর্থ বুঝতে পারে সেজন্য ব্রাকেটে বিষয়টি পরিস্কার করে তুলে ধরা হয়েছে।
বোঝা যাচ্ছে, কাজটা মুসলমানদের নয়। হিন্দু মেয়েদের পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার প্রদানের বিরোধিরা যে সমস্ত কথা বলে, হুবহু সেইসব কথাই মুসলমানের নাম দিয়ে চালানো হয়েছে।
“ইসলামের আলো” নামে আদৌ কোনো ফেসবুক গ্রুপ আছে কিনা জানি না। তবে আমরা নানাভাবে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি, ইসলামী গ্রুপগুলোতে এরকম পোস্ট নেই। অথচ ফেসবুকে সনাতন ধর্মালম্বীদের বিভিন্ন গ্রুপে এরকম অসংখ্য পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষের ফেসবুক মেসেঞ্জারে পরিকল্পিতভাবে এসব পাঠিয়ে গুজব ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।
কাজটা যারা করছে, তারা চিহ্নিত। উগ্র “হিন্দুত্ববাদী” সাম্প্রদায়িক বদমাশরা তরুণ বয়সের হিন্দু ছেলেদের উস্কে দিয়ে এরকম অপকর্মে নিয়জিত করেছে। দেড় বছর আগে কুমিল্লার দুর্গা পূজা মণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা ইকবালদের কাজের সঙ্গে এদের এই কাজের পার্থক্য নেই। কায়েমি স্বার্থবাদী চক্র হিন্দু নারীদের অধিকার হরণের সর্বশেষ চেষ্টায় মরিয়া হয়ে দেশে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা নারীদের নামে অশ্লীল কুৎসা রটনায় নিয়োজিত হয়েছে।
কয়েকজন সুপ্রতিষ্ঠিত পেশাজীবী ও খ্যাতিমান নারী, যাদের সঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই, তাদেরকে আমাদের সংগঠনের প্রধান নেত্রী হিসেবে দেখিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এগুলো ধর্ম নয়; কোনো স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নয়; এগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
তাছাড়া, কারও অধিকার হরণ করার দাবি গণতান্ত্রিক ও আইনসম্মত হতে পারে না। আপনি আপনার অধিকার চাইতে পারেন, কিন্তু অন্যের অধিকার হরণ করার দাবি করতে পারেন না। তারা সেটাই করছে।
এদের অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। বাংলাদেশ পুলিশসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে তাদের এসব উস্কানিমূলক প্রোপাগান্ডা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
তাদের মিথ্যাগুজব নস্যাতের জন্য এবং হিন্দু-বৌদ্ধ নারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি তুলে ধরার জন্য আমরা গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। নারীর অধিকারবিরোধী দুষ্টচক্রের ঘৃণ্য অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে আগামী ২৬ মে শুক্রবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
কায়েমী স্বার্থবাদীদের অপপ্রচারের একটি ডিজিটাল স্লাইড শো আমরা সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করব। নারীবিরোধী উগ্রপ্রতিক্রিয়াশীলদের অপপ্রচার ও সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতা প্রতিহত করতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে আপামর বাঙালির দায়িত্বশীল ভূমিকা ও সহযোগিতা প্রার্থনা করছি।
লেখক: সাংবাদিক; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ
কারও অধিকার হরণ করার দাবি গণতান্ত্রিক ও আইনসম্মত হতে পারে না। আপনি আপনার অধিকার চাইতে পারেন, কিন্তু অন্যের অধিকার হরণ করার দাবি করতে পারেন না। তারা সেটাই করছে।