কৌশলকেই হাতিয়ার ও ধর্ম হিসেবে গ্রহণ

পুলক ঘটক: দেবাংশু শর্মা নামক আইডি থেকে আমাকে হত্যার হুমকির এই বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল গতবছর জুলাইয়ে। মেসেঞ্জারে এরকম কত হাজার হুমকি এবং অশ্লীল গালিগালাজের বার্তা আমি পেয়েছি তা গোণা হয়নি। তা সত্ত্বেও আমি ওদের কারও বিরুদ্ধে মামলা করা দূরে থাক, একটি জিডিও কখনো করিনি। কিন্তু যখন আমার বাচ্চা মেয়ের ছবি ব্যবহার শুরু করল, তখন এটা বরদাস্ত করা অন্যায় হয়। ফলে এবার আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। এরা নিছক অপরাধী এবং গোবিন্দ প্রামাণিকসহ শীর্ষ কয়েকজন এদের নেতা। এরা তাদের লোকজনকে সংগঠিতভাবে অনলাইন অপরাধ কর্মে নিয়োজিত করেছে। হিন্দু নারীরা যারাই তাদের অধিকারের কথা বলছে, তাদেরকেই অশ্লীল গালি দিচ্ছে। মেসেঞ্জারে ফোন দিয়ে উত্যোক্ত করছে। যেভাবেই হোক, মেয়েদের সমঅধিকারের দাবি ”উচ্চারণের স্পর্ধা” দমাতে চায়।

এরা বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী গ্রুপে ঘোষণা দিয়েছে, “কৌশলে যদি ধর্ম রক্ষা হয় তাহলে কৌশলকেই হাতিয়ার ও ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করছি।” কি সে কৌশল? ”হিন্দু আইন সংস্কার চাই” ফেসবুক গ্রুপের মডারেটর রীনা শিপ্রা’র ফেসবুক আইডি ফটোশপ করে লিখেছে, “আজ থেকে আমি শাঁখা সিঁদুর পরিত্যাগ করলাম।” এক সপ্তাহ থেকে এই প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ বাস্তবে মেয়েটি এখনো অবিবাহিতা; তার শাঁখা সিঁদুর পরার প্রশ্নই ওঠে না। ইভা মন্ডল নামে অজানা এক মেয়ের ছবি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে, তিনি নাকি আমার বোন এবং আমি আমার বোনকে মুসলমানের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছি। অথচ কে ইভা মন্ডল আমি কিছুই জানি না।

আমি যদি শিবলিঙ্গ নিয়ে ধর্মীয় অবমাননাকর কটুক্তি করে থাকি, তাহলে সেই তথ্য তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা। বিষয়টি সত্য হলে, আইন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তারা নিজেরাই শিবলিঙ্গের ছবির সঙ্গে কটুক্তি জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় বিশ্বাস বা অনুভূতি থাকলে তারা এভাবে আমার নাম ভাঙিয়ে শিবলিঙ্গের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে পারে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী, সাংবাদিক মুন্নি সাহা কিংবা জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্তের মতো বিশিষ্ট নারীরা নীতিগতভাবে নারীর সমঅধিকারের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু তারা আমাদের সংগঠনের কেউ নয়। অথচ তাদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে; বলছে তারাই হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের প্রধান নেত্রী।

দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি ঢালাওভাবে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে তারা হিন্দু নারী এবং সম্পত্তির লোভে হিন্দু মেয়েদের সমঅধিকারের কথা বলছে। প্রকাশ্য সমাবেশে এসব কথা বলছে এবং ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে। এদের নেতা বিশ্ব হিন্দু সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শিপন কুমার বসু নিজেকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট দাবি করে ভারত থেকে আমাকে ফোন করেছে এবং অডিও মেসেজে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। শুধু আমাকে নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকেও অশ্লীল গালাগাল ও হুমকি দিয়েছে। এসব কন্টেন্ট আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। এখন অপরাধীদের বিচার চাই।

শুধুই মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভিতি ছড়ানো যায় এবং সাময়িক বিভ্রান্তি তৈরি করা যায়। কিন্তু এসব মিথ্যা টেকে না। কুৎসা রটনা, অসভ্য মন্তব্য ও আচরণ দিয়ে নিজেদের সভ্যতার স্তর দেখিয়ে দেওয়া যায়। মহৎ অর্জনকে ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের সম-অধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাকে মেরে ফেললেও কেউ না কেউ হিন্দু নারীদের মানুষ হিসেবে প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ লড়াই থামবে না। ওঁ শুভমস্তু।

 

লেখক: সাংবাদিক; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_img
spot_img

বাছাইকৃত

বিশেষ নিবন্ধ