শর্মিষ্ঠা পাল
আমরা নারীরা ছোট বেলা থেকে ছেলেদের মতই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, ছোট বেলা থেকে ছেলেদের মতই মেয়েদের অভিভাবক, শিক্ষকগণ উপদেশ দেন ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে, ভালো রেজাল্ট করতে হবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বি সি এস ক্যাডার হতে হবে, ভালো চাকরি পেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু অভিভাবক থেকে শিক্ষক কেউই বলেন না মেয়েদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে, যেটা ছেলেদের থেকে মেয়েদের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, সেটা বিয়ের পর সংসার জীবনে প্রবেশ করার পর, একটা মেয়ে সে যতই শিক্ষিত, মেধাবী হোক না কেন ঠিকই দিনের পর দিন তাকে সংসারের ঘানি টানতেই হয়, সেই তিনবেলা রান্না, ঘরের কাজকর্ম সবই করতে হয়, কিন্তু পুরুষদের কিন্তু এসব করতে হয় না।
একটা মেয়ে বাইরে কাজ করলেও তাকে বাসায় এসে ঠিকই রান্না করতেই হবে। এখানে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন, যে সব শ্বশুরবাড়ি খারাপ নয়, সব স্বামীরা খারাপ নয়, তাদের বলছি, পুরুষ মানুষ হল, আকাশের মত রং বদলায়, একসময় মনে হবে সে খুব ভালো, আরেকসময় সে তার উগ্র রূপটি দেখাবে, স্বার্থে আঘাত না লাগা পর্যন্ত সবাই ভালো সেজেই থাকে।
হ্যা তবে কিছু পুরুষ অবশ্যই ভালো আছেন কিন্তু সেটা কয় পার্সেন্ট? আমার তো মনে হয় ২০% ও হবে না। নারীদের বিয়ের পরই হয় ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করতে হয় না হয় দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়, অনেকেই বলতে পারেন, টাকা বেশি থাকলে কাজের লোক রেখে কাজ করাবে, সেটাই বা কয়জনে পারে বলেন তো, হিন্দু দের ক্ষেত্রে তো হিন্দু কাজের লোক পাওয়া ই যায় না। ৯০% স্বামীরা স্ত্রী দের দিয়ে রান্না করাতে চান, সন্তান লালন পালন করাতে চান, কাজের লোকের হাতে চান না এবং নিজেরাও কিচ্ছু করতে চান না। আর তা যদি বউ করতে না চায় তাহলে সেই বউ বাদ, অন্য বউ আনো, সমাজ, পরিবার সবার এই মেন্টালিটি। আর হিন্দু নারীদের তো ডিভোর্স, খোরপোশ কিচ্ছু নেই, তাই হিন্দু পুরুষদের আরও সুবিধা।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থায় নারীরা শিক্ষিত স্বাবলম্বি হয়েও খুব একটা লাভ হচ্ছে না, সংসারের জাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে তার জীবনের দুর্দশাগুলো কাটছে না। সারাজীবন সংসারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে শেষ বয়সে সন্তান রাও মুখ ফিরিয়ে নেয়, এটাই আমাদের সমাজে নারীর জীবনের বাস্তবতা।
প্রয়োজন শক্ত আইন, আর পারিবারিক কাঠামোর পরিবর্তন। তা না হলে, পরিবার তন্ত্র ভেঙে পড়বে চীন, জাপান, কোরিয়ার মত, ওরা তো অনেক উন্নত, সেখানকার নারীরা সবাই স্বাবলম্বী। সেখানে নেই ধর্মীয় গোড়ামি, ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ নারীদের দাবিয়ে রাখতে পারে না। সেখানকার নারীরা নাকি বিয়ে করতে চায় না, সেসব দেশের জনসংখ্যা ও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাও ভালো নারীরা অন্তত স্বাধীন ভাবে বাঁচতে তো পারছে।
মিথ্যা এই পরিবার তন্ত্র, সামাজিক অবকাঠামো যার ছায়াতলে নারী সহ অন্যান্য দুর্বল মানুষদের নিপীড়ন করা হয় প্রতিনিয়ত। যেখানে সম অধিকার উপেক্ষিত, মানবাধিকার উপেক্ষিত, লাঞ্চিত হয় নারী সহ দুর্বল জনগোষ্ঠী সেই সামাজিক পরিকাঠামো এবং পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক। গড়ে উঠুক স্বাধীন, সম অধিকার, মানবাধিকার এ পূর্ণ একটি সমাজ ব্যাবস্থা।
⇒বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ