সোজা বাংলায় কয়েকটি কথা বলি। ১৭৭২ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজরা যখন হিন্দু আইনগুলো প্রণয়ন করেছিল তখন ভারতবর্ষে শিক্ষিত হিন্দু নারী কয়জন ছিল? কর্মজীবী নারী কয়জন ছিল? সকল নারী ছিল শিক্ষাবঞ্চিত এবং পুরুষের আশ্রিত; অন্তঃপুরবাসিনী।
আজ এই বাংলাদেশে লাখ লাখ গার্মেন্টস কর্মী নারী। প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হাজার হাজার শিক্ষক নারী। ডাক্তার, আইনজীবী, বিচারক, ব্যবসায়, সরকারি-বেসরকারি চাকরিসহ সকল পেশায় নারীদের প্রবেশ ঘটেছে। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ নারী শিক্ষা নিয়ে কর্মজীবনের মূলধারায় চলে আসছে।
এ্রই শিক্ষিত নারীরা কি শুধুই ঘরের গৃহিনী হয়ে থাকবে? জীবনের মূলধারায় বিচরণশীল শিক্ষিত নারীদের কি চিরকাল মৌন করে রাখা সম্ভব? এদের অধিকার দিতে হবে না? সকল জাতির ও সকল সম্প্রদায়ের নারীরা অধিকার পাবে, শুধু বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা অধিকার পাবে না –এটা কি হয়? সমাজ এবং অর্থনীতি পাল্টে যাচ্ছে না? শতবছর আগেকার সেই দিন এখনো আছে নাকি?
আজকের পৃথিবীতে এমন একটি দেশ বা জাতি দেখান যেখানে মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারণে পিতামাতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুধুই বাংলাদেশের হিন্দু আইনে নারীদের প্রতি এই অবিচার! শুধু বাংলাদেশের সীমানায় এই অবস্থা অনন্তকাল চলবে? এভাবে মেয়েদের অধিকারহীন করে রাখতে চাইলে সামনের দিনে অটোমেটিক বিপর্যয় নেমে আসবে।
সুতরাং পরিবর্তনের স্বাভাবিক তাগিদেই আইন পরিবর্তন হবে। আজ হোক কাল হোক পরিবর্তন হবেই। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ আওয়াজ তুলবেই। সুতরাং এজন্য আমাকে কৃতিত্ব দেয়ার কি আছে? অথবা আমাকে গালি দেওয়ারই বা কি আছে? যেই একাজে হাত দিবে সেই জয়ী হবে। হিন্দু মেয়েদের প্রাপ্য অধিকার জোর করে আটকে রাখার কোনো সুযোগ নেই।
আজ আমার জন্মদিনে আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কেউ কেউ আমাকে মহাপুরুষ বানিয়ে ফেলছেন। আর স্বার্থান্ধ প্রতিপক্ষ আমাকে শুরু থেকেই ভিলেন বানিয়ে আসছেন; আমার বউ, বাচ্চা সবাইকে রেপ করতে চাচ্ছেন।
অথচ যা অনিবার্য, তা হবেই। যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, তবে এটাও বিশ্বাস করুন, ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই হবে। আর যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেন, তবে জেনে রাখুন সভ্যতা ও উন্নয়নের স্বাভাবিক নিয়মে আইন পরিবর্তন হবে। এর দায় অথবা কৃতিত্ব আমার একার নয়।
অনেকেই নানাভাবে হিন্দু নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। আপনি-আমি সবাই মিলে ন্যায়, মানবতা ও উন্নয়নের জন্য একসাথে কাজ করছি। দায় সবার, কৃতিত্ব সবার। মানুষ সফল হবে। জন্মদিনে মহাজনতার চরণে শতকোটি প্রণাম।