শুধু স্বার্থপরতায় বিরোধিতা কাঙ্খিত নয়

পুলক ঘটক

আমার ঘনিষ্ঠ একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা দুই কন্যা সন্তানের পিতা; ছেলে নেই। হিন্দু আইনে বৈষম্যের কারণে তার মৃত্যুর পর মেয়েরা যাতে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে সমস্যায় না পড়ে, সেজন্য তিনি সময় থাকতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। রিটায়ার করার পর সম্পত্তির বড় অংশ দুই মেয়েকে সমান অংশে লিখে দিয়েছেন। কিছুটা নিজের হাতে রেখে মেয়েদের নামে উইল করেছেন।

এরপর থেকে ভদ্রলোকের ভাই-ভাতিজারা তার সঙ্গে কথা বলে না, সম্পর্ক রাখেনা। অথচ তিনি ঐ ভাইদের মানুষ করেছেন, বাড়ি করে দিয়েছেন, ভাতিজাদের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। যেইমাত্র তিনি নিজের মেয়েকে সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন, ভাই ভাতিজারা নাখোশ! উনি মেয়েদের সম্পত্তি লিখে দেওয়ার আগে মারা গেলে এই গুণধর ভাতিজারা কি করত? তারা তাদের জেঠাতো বোনদের ঠকিয়ে সম্পত্তি দখল নেওয়ার আশায় ছিল! এই হল মানব চরিত্র।

যে মানুষ জেঠা-কাকার সম্পত্তির লোভে সবরকম বদমাইশি করতে পারে, নিজের বাবার সম্পত্তির লোভ ছাড়া তাদের জন্য সহজ নয়। স্বার্থ যাদের কাছে বড়, তারা নীতি ও মহত্ত্বের কথা শোনে না। এখানেই হিন্দু আইন সংস্কারের বিরোধিতার সব কাহন নিহিত।

দাদারা শুনুন, যে পৈত্রিক সম্পত্তি অলরেডি আপনার অধিকারে চলে এসেছে তার ভাগ আপনার বোনেরা আইন সংস্কার হলেও পাবে না। লোভে, ভয়ে অহেতুক বিরোধিতা করবেন না। আপনি মারা যাওয়ার পর ভবিষ্যতে আপনার সন্তানদের ক্ষেত্রে নতুন আইন প্রযোজ্য হবে। আপনি যদি নেহায়েত আপনার মেয়েকে বঞ্চিত করতে চান, সেটাও আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেক্ষেত্রে নতুন আইন হলেও আপনি আপনার মেয়েকে বাদ দিয়ে ছেলেকে লিখে দিতে পারবেন। তাহলে আপনার ব্যক্তিগত কারণে সকল নারীর অধিকারে বাধা দেন কেন?

[লেখক: সাংবাদিক; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_img
spot_img

বাছাইকৃত

বিশেষ নিবন্ধ