মিজানুর রহমান
ইদ আসলেই কি উৎসব নাকি অন্য কোনো আয়োজন! ইদ অর্থ যা বার বার আসে। উইকিপিডিয়ায় ইদকে উৎসব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় ভাবে এই দিনে নফল নামাজ যেটাকে ইদের জামাত বলা হয়ে থাকে সেটার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। অন্য ধর্ম বা নিধর্মী উৎসবে যেমন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গুরুত্ব পায় ইদে তেমনটা নয়। এখানে খাওয়া দাওয়া ও নতুন কাপড় চোপরই যেটুকু আনন্দের। এখন নবীজীর সময়ে ইদ কিভাবে পালিত হতো সেটা দেখে নেওয়া যায়। স্কুল পাঠ্য বইয়ে- আজ ইদ, মদীনার ঘরে ঘরে আনন্দের মেলা। এমন একটা গল্প ছিল যেখানে একটি দরিদ্র শিশুর বিষয়ে বলা হয়েছিল যে ইদে কোনো নতুন কাপড় পায়নি। তবে স্কুল পাঠ্য এ গল্পগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। ইসলামী কোনো সোর্সে উল্লেখ নাই এমন অনেক গল্পও আমরা সত্য জ্ঞানে পড়েছি। যেমন নবীজীর পথে কাটা বিছানো বুড়ীর গল্প। শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ, মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদের মতে এটি একটি ডাহা মিথ্যা গল্প। এমনকি দুর্বল হাদিস হিসাবেও এ ঘটনার কোন উল্লেখ নাই। হাদীস অনুসারে যেটা জানা যায় সেটা হলো ইদের দিনে সাহাবীরা একটি খেলা খেলতেন সেটা হলো পরস্পরের প্রতি তরমুজের খোসা নিক্ষেপ।
বর্তমানে ফেইসবুকে, ইউটিউবে ইদের দিনে সহবাসের ফজিলতের কথা বলছেন আলেমরা। মদীনা জীবনে সাহাবীরা গনিমতের ভাগ পেয়ে স্বচ্ছল হয়ে ওঠেন এবং তাদের থাকতো একাধিক স্ত্রী। তা ছাড়া তারা গনিমতের মাল হিসেবে অনেক দাসীর অধিকারী ছিলেন, এছাড়া অনেক যুবতী দাসীদের উপহার হিসাবে পেতেন এবং বাজার থেকে কেনাও যেতো। ইসলামে দাসীদের সাথে সহবাস করা বৈধ হওয়ায় ইদের দিনে তারা হয়তো এ বিনোদনে অংশ নিতেন। ইসলামে মদ্যপান, খেলাধুলা, গান বাজনা, নৃত্য, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়ায় অন্য ধর্মের উৎসব বা নিধর্মী উৎসবগুলোর মতো ইদকে ঠিক উৎসব বলা যায় বলে মনে হয় না। হিন্দুদের দুর্গোৎসবে গান বাজনা, এমনকি যাত্রাপালা, কবির লড়াইও হয়ে থাকে। মেরি ক্রিস্টমাস, ইস্টার ডের উৎসব আর ইদের মধ্যে অনেক তফাৎ। ইসলাম বাদে অন্য সব ধর্মে এমন কি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ধর্মের উৎসবে মদ একটা অপরিহার্য পানীয়। ইসলামেও প্রথম দিকে মদ বৈধ ছিল। মদ আরবদের একটি সাধারণ পানীয় হিসেবেই গন্য ছিল। ইসলামের বীর খালেদ বিন অলিদ মদ্যপান প্রতিযোগিতায় বরাবরই ফার্স্ট হতেন। ইসলামে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও মুসলিম সমাজে এটা বন্ধ হয় নি। দুএকজন বাদে উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফারা হেরেম মেন্টেইন করার পাশাপাশি মদ পান করতেন।
এখন মুসলিম দেশগুলোর রেডিও টেলিভিশনে যে অনুষ্ঠান মালা দিয়ে ইদ উদযাপন করা হয় এটা ধর্মস্বীকৃত নয় বরং এটকে বেদাত বলা যেতে পারে।
ছোট বেলায় আমরা ইদের দিন মার্বেল খেলতাম যেটা একধরনের জুয়া। ইদের দিন বলে বড়রা এতে বাধা দিতেন না। বড়রা নইমির নামক একধরনের জুয়া খেলতো। ৮০ দশক থেকে ইদের দিনে গ্রামে কৃষক শ্রেণির লোকদের তাস দিয়ে মোটা দানের জুয়া খেলতে দেখেছি। একসময় সংবাদপত্রে কাজ করার সুবাদে এক কলিগের কাছে শুনেছি ইদ উপলক্ষে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের নিমন্ত্রণে যায় একগ্রুপ সাংবাদিক। সেখানে তাদের দামী ব্র্যান্ডের মদ দিয়েও আপ্যায়ন করা হয়। এখন এই যে সংযোজনগুলো ইদ উৎসবে যুক্ত হয়েছে এটা শ্রেফ বেদাত হিসাবে। শিল্পোন্নত মুসলিম দেশ মালয়েশিয়ায় শুনেছি ইদের দিনেও কলকারখানা অফিস আদালত খোলা থাকে। সেখানে ইদের আলাদা কোনো রঙ চোখে পড়ে না।
আমাদের দেশে বাঙালি মুসলমানের জন্য নিধর্মী উৎসব হিসেবে নববর্ষকেই উৎসব বলা যায়। এ ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানেই প্রকৃত উৎসবের আমেজ থাকে।
[লেখক: কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক]
⇒হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপ