বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের ফেসবুক গ্রুপে মুক্তি চক্রবর্তী নামে এক নারী লিখেছেন,
“বিয়ের ৯ মাস পর লতার স্বামী এক বিধবার ঘরে ধরা পরে। গ্রামবাসী তাদের মালাবদল করিয়ে দেয়। লতা ৬ বছর একা। পাড়ার দেবররা তাকে ‘হাই’ বলে।”
মুক্তির এই এক স্ট্যাটাসের মধ্যে বিষয় অনেক। তবে বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু আইন অনুয়ায়ী এর মধ্যে বেআইনী কিছু নেই।
১. বিয়ে: লতার সাথে তার স্বামীর বিয়ে আইনত বৈধ।
২. পরকীয়া: বিয়ের ৯ মাস পর লতার স্বামী অন্য এক রমনীর ঘরে গেলেও হিন্দু আইন অনুযায়ী পুরুষকে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। পুরুষের জন্য সতীত্ব রক্ষার কোনও বিধান হিন্দু আইনে নেই। সুতরাং পরনারী গমন তার জন্য বৈধ।
৩. ধর্ষণ: যেহেতু দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীর পারস্পরিক সন্মতিতে ব্যাপারটা হয়েছে, তাই ঐ বিধবার ঘরে সময় কাটানোর জন্য তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হবে না। অবৈধ কিছু ঘটেনি।
৪. ব্যভিচার: এখানে এডাল্টারি অ্যাক্টও (ব্যভিচার আইন) প্রযোজ্য নয়। কারণ পেনাল কোড অনুযায়ী এডাল্টারির জন্য নারীর বিরুদ্ধে মামলা হয় না। পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তবে তা করতে পারে স্বামী। একজনের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে অন্যকেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হলে ব্যাভিচারকারীর বিরুদ্ধে মহিলার স্বামী মামলা করতে পারবে। পেনাল কোডের ৪৯৭ ধারায় এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সাজার বিধান আছে। কিন্তু মহিলা যেহেতু বিধবা, তাই তার স্বামী নেই এবং তার পরকীয়া প্রেমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করারও কেউ নেই। স্বামী ছাড়া অন্য কেউ এই মামলা করতে পারে না। তাই ব্যভিচার আইন এখানে প্রযোজ্য হচ্ছে না।
৫. বিধবা বিবাহ: যেহেতু ১৮৫৬ সালের হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন (Hindu Widow’s Re-marriage Act, 1856) বাংলাদেশে বলবৎ আছে তাই ঐ বিধবার সাথে লতার স্বামীর মালাবদল করিয়ে দেয়া বেআইনি হয়নি। বিধবা বিবাহ বৈধ।
৬. বহুবিবাহ: বাংলাদেশের হিন্দু আইনে পুরুষের বহুবিবাহ বৈধ এবং তাতে কোনো লিমিট নেই। হিন্দু পুরুষরা স্ত্রী বর্তমান থাকতে যতগুলো ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে। তাই ঘরে স্ত্রী থাকতে ঐ বিধবাকে বিয়ে করার মাধ্যমে লতার স্বামী বেআইনী কিছু করেননি।
৭. নারীর সতীত্ব: লতা ৬ বছর একা থাকাটা হিন্দু আইন অনুযায়ী স্বাভাবিক এবং এভাবে সারাজীবন কাটলেও সেটাই আইনগতভাবে সঠিক। কারণ হিন্দু আইনে নারীর জন্য সতীত্ব গুরুত্বপূর্ণ। লতা সতীত্ব হারালে ১৯৪৬ সালের Hindu Married Women’s Right to Separate Residence and Maintenance Act, 1946 অনুযায়ী তিনি ভরণপোষন পাওয়ার অধিকার হারাবেন। সামাজিকভাবেও নিগৃহিত হবেন।
৮. বিবাহ বিচ্ছেদ: বাংলাদেশের হিন্দু আইন অনুযায়ী লতার ডিভোর্স নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই লতার পুনরায় বিয়ে করার সুযোগ নেই। সুতরাং তিনি যেভাবে আছেন সেভাবে থাকাই বৈধ।
৯. পুনরায় বিয়ে: বাংলাদেশের হিন্দু আইনে ডিভোর্স না থাকায় নারীর পুনরায় বিয়ের সুযোগ নেই। তাই লতা পুনরায় বিয়ে করলে তা আইনগতভাবে অবৈধ হবে। অবৈধভাবে পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে গর্ভোৎপাদন হলে সে সন্তান অবৈধ হবে। অবৈধ পুত্রের সম্পত্তিতেও উত্তরাধিকার নেই। সুতরাং লতা যেভাবে আছেন সেভাবে বেঁচে থাকাই বৈধ।
১০. ছেলেদের (সু)দৃষ্টি: পাড়ার ছেলেরা লতাকে ‘হাই’ বললে তাতেও আপাতত আইনের ব্যত্যয় ঘটছে না। তবে লতা সতীত্ব হারালে আইনগত সমস্যা আছে।
১১. বেশ্যাবৃত্তি: তবে লতা যদি ঘোষণা দিয়ে বেশ্যাবৃত্তি বেছে নেয়, সেটা আইনগতভাবে অবৈধ হবে না। হিন্দু আইনে তাতে বাধা নেই এবং সে রকম ঘোষণা দেওয়ার আইন ও নজির দেশে আছে। বেশ্যাবৃত্তির বৈধতা হাইকোর্টের রায়েও স্বীকৃত।
১২. ধর্মান্তর: লতা যদি ধর্মান্তরিত হয়, তাতেও হিন্দু আইনে বাধা নেই। সে অধিকার তার আছে। শুধু অধিকার নেই স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে পুনরায় অন্য কাউকে বিয়ে করার মাধ্যমে হিন্দু সমাজের একজন হিসেবে সুন্দর জীবন যাপনের।