দেবপ্রসাদ বিশ্বাস
অনেককেই “সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন” নিয়ে ইদানিং বলতে শুনছি ও দেখছি। এর আগে এটা নিয়ে বলতে শুনিনি। এমন কি এই যারা এটা নিয়ে এখন মন্তব্য করছে তাও নিজের দেওয়ালে নয়। আমি “হিন্দু আইন সংস্কার” এর পক্ষে কাজ করতে এসেই এই আইন নিয়ে জানতে পারছি। এমনকি ধর্মান্তর যে বাংলাদেশে একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে সেটাও যেন নতুন । অথচ আগে এই ভূখণ্ডে কেবল হিন্দুরাই ছিল। তাহলে সেই হিন্দুরা কোথায় গেল? প্রশ্নের উত্তর তারাই দিক।
আমার প্রশ্ন এক শ্রেনী “হিন্দু আইন সংস্কার” এর আন্দোলন শুরুর পরে বা কেন এই ইস্যু নিয়ে কথা বলছে? এত কাল সমস্যা ছিল না?
কিছুদিন আগে কথিত হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব সুবিধাবাদী গোবিন্দ প্রামাণিক তার সদলবলে ঝাঁটা নিয়ে রাস্তায় নামে এই “হিন্দু আইন সংস্কার” আটকানোর জন্য। তবে কি ধর্মান্তর ও হিন্দু সম্পত্তি তথা অর্পিত সম্পত্তি আইন নতুন ইস্যু? নাকি এত দিন পরে কানে জল ঢুকেছে? তারাই জানে। উত্তর তারাই দিক। তবে ভাল লাগছে দেখে যে, অন্তত তারা দেরীতে হলেও ইস্যু খুঁজে পেয়েছে। এবার অন্তত এটা নিয়ে রাস্তায় নামবে। নিজের ধর্ম রক্ষায়।
একটা বিষয় দেখে বেশ ভাল লাগছে যে, কিছু মানুষ রাস্তায় নামতে শিখছে। আজ দেখলাম উল্টো রথের দিনে কিছু মানুষ প্ল্যাকার্ডে কিছু দাবী তুলে ধরেছেন। অত্যন্ত আশার কথা। অন্তত আমার কাছে। প্রতিবাদের কোন বিকল্প নেই, এটা যে এরা বুঝতে পারছে সেটা একটা ভাল লক্ষণ। এভাবে প্রতিবাদ করতে করতে একদিন নিজেদের দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমে দাবী আদায় করতে সচেষ্ট হলে মন্দ কি? এভাবেই না হয় একটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হোক।
গত ১৫ দিনে আমার কাছে কিছু ধর্মান্তরের তথ্য আছে। সেখানে কিন্তু মাত্র একজন মেয়ের এমনি খবর পেয়েছি। কিন্তু পেয়েছি তিন জন ছেলেকে বা তার পরিবারকে। হিন্দু আইন সংস্কারের বিরোধিতা যারা করছেন তারা তথ্য রাখুন। নিজেরাই বুঝতে পারবেন।
১৯৯০ থেকে দেখে আসছি এদেশে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা। এর আগে আমি বুঝতাম না এসব। গ্রামে থাকতাম বলে জানতে পারতাম না। কিন্তু ঢাকাতে যাবার পর ধীরে ধীরে বুঝতে পারি। বাবরী মসজিদ ভাঙার পর ঢাকা শহর, মুন্সিগঞ্জ, খুলনার বড়বাজারের কালিবাড়ি আক্রান্ত হতে দেখেছি নিজের চোখে। তা নিয়ে কিন্তু কাউকে রাস্তায় নামতে দেখি না। দেখি হিন্দু আইন সংস্কারের দাবী যখন সারা দেশে তথা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যায়ে উত্থাপিত হচ্ছে তখন এক শ্রেনী সেটা বিরোধিতা করতে রাস্তায় নেমেছে তাও ঝাঁটা হাতে। কাদের ঝাঁটা পেটা করতে? অবাক লাগে।
এই শ্রেণীর বিজ্ঞদের দেখছি আরও একটা দাবী তুলতে। সেটা হল- বাবার সম্পত্তির ভাগ নিলে বাবা মায়ের দেখার ভার নিতে হবে। কত বড় হিনমন্যতায় আক্রান্ত এরা। এখনও পর্যন্ত এই মেয়েরাই কিন্তু বাবা মায়ের দেখাশুনা বেশী করে চলেছে, জমির ভাগ না নিয়েই। আবার শুনছি মেয়েদের বিয়েতে নাকি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। ভাবখানা এমন যেন ছেলেদের বিয়েতে কোন খরচ হয় না।
বাবার সম্পত্তিতে সন্তানের সম অধিকারের দাবীর সাথে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন যুক্ত করে সম্মিলিতভাবে আন্দোলনে নামা হোক। নারীর অধিকার ও আত্ম উন্নয়নের দাবীর বিরোধিতা বন্ধ করে মানুষ হবার চেষ্টা করুন বিরোধীরা। হিন্দু মেয়েরা বাবার সম্পত্তির অধিকার পেলে ধর্মান্তরিত হবে এই যুক্তি সঠিক নয়।
একজন ছেলে যখন ধর্মান্তরিত হয় তখন জমি জমা নিয়েই হয় আর একটা মেয়ে কিন্তু এক কাপড়ে। তবে এর কোনটাই কাম্য নয়। কেন এই ধর্মান্তর সেটার আসল কারণ খুঁজে সচেষ্ট হউন সেটা রোধে।
নিজের নিজের অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে, অর্পিত আইনের বিরুদ্ধে। পাশে দাঁড়ান হিন্দু মেয়েদের। তারাও বাবার সন্তান। তাদের বঞ্চিত করার বাসনা ত্যাগ করুন।
আবারও বলছি- ভাল লাগছে দেরীতে হলেও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন নিয়ে কথা উঠছে। আমিও সেটা চাই। আসুন সবাই মিলে “হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কার” এর পক্ষে কাজ করি, যেমনটা আমরা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন নিয়ে সরব।
দেবপ্রসাদ বিশ্বাস
২৮.০৬.২০২৩