দেবপ্রসাদ বিশ্বাস
একজন শ্রদ্ধেয় ও সিনিয়র উকিল বাবু লিখেছেন – “হিন্দু কন্যার বিবাহের পর তার পিতার গোত্র প্রবর থেকে স্বামীর গোত্র প্রবরে প্রবেশ করে বিধায় পুত্রের সাথে সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিবাহিতা কন্যার উপর বর্তানো ধর্ম ও শাস্ত্র বিরুদ্ধ।”
জনৈক দাস বাবু লিখেছেন- “সনাতনী হিন্দুদের পারিবারিক জীবন এমন কি সনাতনীদের নিজেদের মধ্যে সামাজিক জীবন ও সনাতনী সমাজ ব্যবস্থা হাজার হাজার বৎসর ধরে প্রচলিত শাস্ত্রের অনুশাসন ও বিধিবিধান অনুসারে চলে। মানব সভ্যতার প্রাগ ঐতিহাসিক যুগ থেকে সনাতনীদের শাস্ত্রীয় বিধান হচ্ছে সনাতনীদের দলিল। এখানে কাহারও আবেগ, অনুরাগ, বিরাগ, মনোবাঞ্ছা, অভিলাষ, অনুভুতির কোন স্থান নেই। সনাতন ধর্ম কোন সাধু সন্যাসী, গুরুদেব, আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ, সাধক, ঈশ্বরের ভজনাকারী, সিদ্ধিলাভ করা কাহারও কথায়/ মতামতের ভিত্তিতে চলার উপায় নেই। শাস্ত্রের বিধানানুসারে সনাতনীদের পরিবার পরিচালিত হওয়া বাঞ্চনীয়। কেহ শাস্ত্রীয় বিধান মানতে পারেন, ইচ্ছা করে না মানতেও পারেন। কর্ম অনুসারে ফল পাবেন। জয় হোক সনাতনের।”
আচ্ছা আপনারা আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন- আপনারা এই যে লিখলেন মেয়েদের শাস্ত্র মতে কোন সম্পত্তি দেওয়া যাবে না। অথচ আপনার নিজের দ্বারা সম্প্রদানকরা কন্যার কাছেই যখন আপনার ঠিকানা হয় তখন এই শাস্ত্র কোথায় থাকে? না কি সেখানে সেই কর্ম অনুসারে ফল ভোগের শাস্তির বিধান কার্যকর হবে? তাও করবেন সেই ঈশ্বর। কিন্তু আপনার জন্য তখন এই সমাজে কথা বলতে আর কেউ আসবেই না। ঠিকানা তখন ঐ মেয়ে। একটু কেমন না?
অনেকেই বলেন- মেয়েরা ভিন্নধর্মী বিয়ে করে চলে যায়। তাই জমিও চলে যায়। দারুন কথা। আমি বিগত এক বছরে দেখেছি- যত হিন্দু মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে তার থেকে বেশী সদস্য নিয়ে হিন্দু ছেলেরা ধর্মান্তরিত হয়েছে। আর সম্পত্তিও বহুগুণ নিয়ে গিয়েছে সাথে। আসলে এটা একটা জুজু। নৈতিক শিক্ষা দেবার কথা বললে হিন্দু পিতামাতা রা কিন্তু দূরে সরে যায়। তাঁদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার দরকার নেই বলে। তাঁদের পারিবারিক শিক্ষা দেওয়া আছে। কয়েকদিন পরে যখন তার কন্যা ধর্মান্তরিত হয়ে যায় তখন তাঁদের কানে জল যায়।
আমার আগের লেখায় লিখেছিলাম অন্য ধর্মের কিছু ভাল দিক। তা নিয়ে আমাকে আক্রমণ করে কয়েকজন। সেটা তাঁদের কাজ তারা করেছেন। আমার কাজ আমি করি। আমাদের সনাতন ধর্ম বাদে আমি ইউরোপেও দেখেছি মেয়েদের সম্পত্তির ভাগ দেওয়া হয়। আমরা শাস্ত্র মানি, শাস্ত্র দেখাই, অথচ শাস্ত্র অবলম্বন করে মেয়েদের বঞ্চিত করি। এর থেকে বেরিয়ে আসার দরকার।
মেয়েদেরকে আমরা দেবী হিসেবে গণ্য করি। ভাল কথা। কিন্তু সেই দেবীদের বঞ্চিত করে এই সমাজকে কি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব? আমি হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কার চাই।
দেবপ্রসাদ বিশ্বাস
২২.০৫.২০২৩