ঠাকুরগাঁওয়ে ঋষি সম্প্রদায়ের এক নারীকে হত্যা, গ্রেফতার ১

সারাবাংলা, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের জেলা পরিষদের উত্তর পাড়ার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের দায়ন ঋষি নামক এক নারীকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উৎপল নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২৪ মে) ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এ বি এম ফিরোজ ওয়াহিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতার হওয়া উৎপল (২২) পৌর শহরের পরিষদ পাড়ার গণেশের ছেলে।

অভিযোগে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২১ মে) পরিষদ পাড়ার পশ্চিম এলাকার (ইএসডিওর অফিসের পেছনে) আমজাত হোসেন লিটনের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। লিটন দাবি করে তার ৩ লাখ টাকা ও সোনার অলঙ্কার চুরি হয়েছে।

এ ঘটনায় আমজাত হোসেন চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একই এলাকার রাজেন (১২) কে বাড়ি থেকে ডেকে আনে এবং তাকে বেধড়ক মারপিট করে। এরপর তার বাবা বিষুকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাকেও মারপিট করে।

রাজেন মারপিটের একপর্যায়ে বলে, এলাকার সঞ্জিত কজুর নামে এক ছেলে সে চুরি করেছে। এরপর সঞ্জিত (১৩) কে খুঁজে বের করে। পরে চুরিকৃত অর্থ ও স্বর্ণ অলংকার উদ্ধার করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে দুজনকে এক লাখ টাকা চুক্তিতে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবকের হাতে তুলে দেয় লিটন।

পরে ওই যুবকেরা রাজেন ও সঞ্জিতকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আরও মারপিট করে নির্যাতন চালায়। সঞ্জিত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বলে রাজেনের মাকে চুরির টাকা গয়নাপাতি রাখতে দিয়েছি। এরপর রাজেনের মাকে রাতের বেলা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।

থানা থেকে ফেরার পথে রাজেনকে ছেড়ে দিলেও মা দায়ন ঋষিকে নিয়ে যায় আমজাতের লোকেরা। কিন্তু সারারাত দায়ন আর ঘরে ফেরেনি। পরদিন সকালে তার ঝুলন্ত মরদেহ বাড়ির পাশে লিচু বাগান থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

রাজেন ও সঞ্জিত কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে, ‘রকি, জনি পায়েলসহ ২০-২৫ জন আমাদের শহরের গোবিন্দ নগর বড়বাড়ি এলাকায় নিয়ে গিয়ে লোহার রড, গাছের ডাল দিয়ে অনবরত পেটাতে থাকে আর বলে ‘বল’ আমরা টাকা চুরি করছি। শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল তাও মারছিল। এর এক পর্যায়ে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে আমাদের খেতে দেয়। এরপর ওষুধ খাইয়ে দিয়ে দফায় মারপিট করে।’

বিষুর বড় ছেলে সাজেন চোখ মুছে বলে তাকেও খুঁজছিল সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যওয়ার জন্য। তাদের ভয়ে আমি বাড়ি যায়নি। বুধবার সকালে বাড়ি ফিরে দেখি আমার মা নেই। গাছের ডালে ঝুলছে।

যুব মহিলা লীগের নেত্রী খতেজা বেগম বলেন, ‘আমরা শুনছি কিছু ছেলে লিটনের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা ও সোনা বের করে দিতে পারলে তাদের কে এক লাখ টাকা দেবেন। এই চুক্তিতে সংঘবদ্ধ ছেলেরা রাজেন ও সঞ্জিত কে মারপিট করে। রাজেনের মা ও বাবার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।’

তিনি মন্তব্য করে বলেন, ‘নির্যাতন ও চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে রাজেনের মা দায়ন আত্মহত্যা করতে পারেন।’

এ বিষয়ে আমজাত হোসেন লিটনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ওর্য়াড কাউন্সিলর দোলন কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমজাত হোসেন ও কয়েকজন ছেলে নিয়ে আমার কাছে আসে এবং বলে বাসায় চুরি হয়েছে। সে চুরি বিষুর ছেলে করেছে। সন্দেহমূলকভাবে বিষুর ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। আমি তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেই। কিন্তু তারা আমার কথাতে কর্ণপাত না করে সন্ধ্যায় স্থানীয় কিছু ছেলেকে দায়িত্ব দেয় টাকা উদ্ধারের জন্য। পরে তার মা-বাবা ও ছেলেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরের দিন পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় দায়নের মরদেহ উদ্ধার করে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য অ্যাডভোকেট ইন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘চুরি করলেও তাদের ওপর এভাবে নির্যাতন চালানো যাবে না। দায়নের মৃত্যুর বিষয়টি একটি হত্যাকাণ্ড।’

ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এ বি এম ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, ‘এ ঘটনায় অজ্ঞাতসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে নিহতের স্বামী মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’

।।স্বয়ংক্রিয় পোস্ট।।সোর্স লিংক।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_img
spot_img

বাছাইকৃত

বিশেষ নিবন্ধ