ভানুলাল দাস
কর্ম ছাড়া জীবন অর্থহীন। আবার কর্মের আসক্তি নিজের ও অন্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর জন্য চাই- গোল্ডেন লাইন, মধ্যপন্থা।
বলা হয়, কর্ম করে ফলাশা করো না। ফলের আশা মানুষকে ভীত করে, কিংবা অতি উচ্ছ্বসিত করে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে। অথচ ফলের উপর মানুষের কোন হাত নেই, কারণ এটি ভবিষ্যতের বিষয়। ভবিষ্যতের ঘটনায় মানুষের হাত নেই, কারণ ভবিষ্যৎ অনাগত। তেমনি অতীত থাকে স্মৃতিতে, সেখানেও মানুষের হাত নাই। অতীত বদল করা যায় না। তাই অতীত নিয়ে শোক বা আনন্দ করার খুব বেশি মানে নেই। তেমনি ভবিষ্যতে কি ফলাপল ঘটবে তা নিয়ে শোকতাপ বা অতি আশাবাদ বুকে পোষণ করে উদ্বেলিত হওয়াও নিরর্থক। এতে ভবিষ্যৎ বদলাবে না একটুকুও।
আমরা শুধু পারি বর্তমানকে কাজে লাগাতে পারি, বর্তমানের কর্মটি যথাযথ যত্ন ও মনোযোগ দিয়ে সুচারুভাবে সম্পন্ন করাই প্রধান কর্তব্য। যে রকম কর্ম করবেন সেই কর্ম আপনি আপনি তার ফলোৎপাদন করবে এবং এই ফল কর্মীকে ভোগ করতে হবে। কর্ম সুখ, দুঃখ ও মিশ্র- তিন রকমের ফলাফল আনতে সক্ষম। প্রকৃতির অমোঘ বিধান- যেমন কর্ম তেমন ফল। আপনি আমি চাই বা না চাই কর্ম তার ফল দেবেই। শুভ কর্ম নিজের জন্য ভাল এবং অন্যের জন্যও কল্যাণপ্রদ ফলাফল সৃষ্টি করে। খারাপ কর্ম নিজের জন্য মন্দ এবং অন্যের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে। তাই শুভ কর্ম করা সব মানুষের কর্তব্য। কর্ম সর্বদা শ্রেয়োবোধ বিবেচনা করতে হবে। যে শুভ কর্ম নিজের তো বটেই অন্যের জন্য শুভ হয় তাই শ্রেয়োবোধ কর্ম।
কিন্তু ভবিষ্যতের কামনা কি আমরা সহজে বিসর্জন দিতে পারি? কামনা বা কর্মের ফলের আশা ত্যাগ করা খুবই কঠিন। তাই এটি যোগ বা সাধনার বিষয়। কর্মযোগে সিদ্ধিলাভের জন্য দরকার কঠোরতর সাধনা। আমরা সবাই তা পুরোপুরি পারি না, সবাই পারলে ওটা সাধনার ধন থাকত না। হয়তো কেউ পুরো পারে, কেউ একটু কম, কেউ সামান্য, অধিকাংশ মানুষই কর্মেই লিপ্ত হয়ে পড়ে থাকে। তারা কর্মের এক আসক্তি থেকে আরেক আসক্তিতে অনবরত ঘুরতে থাকে। এই রকম কর্মচক্রে জগতের মানুষ বন্দী।
কর্মযোগ বা কর্মমার্গ কঠিন পথ, তবে এটি অধিকতর বাস্তব ও আমাদের চোখে দৃশ্যমান । জীবনের কোনো কোনো সময় আমরা বিপন্ন হয়ে কিংবা নিরুপায় হয়ে কর্মফলের আশা ত্যাগ করতে বাধ্য হই, অথবা বিরূপ কিছুর আশংকায় কর্মফল নিয়ে ভাবা বন্ধ করতে বাধ্য হই। কিন্তু কর্ম তার ফলোদয় কখনও বন্ধ করে না। যেমন কর্ম তেমন ফল ফলবেই। একদা আমরা দেখতে পাই, কৃতকর্ম তার বিস্ময়কর ফলাফল নিয়ে হাজির হয়েছে।। ভাল বা মন্দ দুই রূপেই সেটা আসতে পারে। এই রকম কিছু না কিছু অভাবনীয় অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে কোনো না কোনো সময় ঘটে।
এখন পাশ্চাত্যেও এই কর্মবাদ তত্ব মানা হয়। আমেরিকা, বৃটেনের শিল্পসাহিত্য জগতে অনেক আগে কর্মবাদের স্পষ্ট প্রভাব পড়েছে। ‘He humilated her in public place, and then Karma hits him immedialately’- এই জাতীয় ডায়ালগ বা ঘটনা ইংরেজি নাটক, সিনেমা, তথ্যচিত্রে অহরহ দেখা যায়।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ