পুলক ঘটক: সনাতন ধর্মকে লোকসমাজে রক্ষার ক্ষেত্রে যেসব মহাপুরুষের অবদান আছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অবদানটি যিনি রেখে গেছেন তিনি রাজা রামমোহন রায়।
তিনি যদি হিন্দু নারীদের রক্ষায় তাঁর হৃদয়োৎসারিত আন্দোলনকে সফল সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে না পারতেন, যদি ইংরেজরা সতীদাহ নিষিদ্ধ না করত, তাহলে হিন্দু সমাজ আজকের দিনে চরমভাবেই বিপন্ন হতো।
আজকের যুগে ঘরে ঘরে সতীদাহ হয়তো হতো না। কিন্তু গোবিন্দ প্রামাণিক এবং কুশল বরণদের ফতোয়ার কারণে মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানে কিছু নারীকে পুড়িয়ে মারা হতো। ফলে সারা পৃথিবীর সভ্য মানুষ বলতো, “ভারত উপমহাদেশে একটি বর্বর ধর্মীয় সম্প্রদায় আছে, যারা মেয়েদের স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারে।”
আত্মরক্ষার প্রয়োজনে হিন্দু নারীদের আজ দলে দলে ধর্মত্যাগ করতে হতো। বিবেকবান হিন্দু পুরুষরাও অনেকে লজ্জা থেকে রক্ষা পেতে ধর্মত্যাগ করতো। আর আমাদের মতো কিছু মানুষকে সতীদাহের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইনে নামতে হতো।
অন্যদিকে সতীদাহ বজায় রাখার জন্য ধর্মের বিধান দেখিয়ে আরেকদল বর্বরকে সংগঠিত করত এই গোবিন্দ-কুশল গং। আজ হিন্দু মেয়েদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আমরা যে অবস্থার মুখোমুখী হচ্ছি তার চেয়ে করুণ অবস্থা দেখতে হতো রাজা রামমোহন পৃথিবিতে না এলে। তাঁর প্রতি হিন্দু সমাজের বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। মহাপুরুষ রাজা রামমোহনের মহৎকীর্তি শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। আভূমি নত হয়ে তাঁকে প্রণতি জানাই।
লেখক: সাংবাদিক; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ।