রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরে শ্রীধাম শ্রী অঙ্গনে জগৎবন্ধু সুন্দরের ১৫৪ তম শুভ আবির্ভাব উৎসব চলছে। উৎসবটি ১৬ মে শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ মে শেষ হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীর মহানাম সম্প্রদায়ের ৯ দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠান চলাকালীন মঙ্গলবার রাতে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রী অঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক ড. নিকুঞ্জবন্ধু ব্রহ্মচারী বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের এই তীর্থ স্থান, ফরিদপুরের শ্রীধাম শ্রী অঙ্গনে জগদ্ববন্ধু’র আট শিষ্য (ব্রহ্মচারী) জীবন দিয়েছেন’।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ফরিদপুরের শ্রীধাম শ্রী অঙ্গন হিন্দু মহানাম সম্প্রদায়ের একটি আশ্রম। জগদ্বন্ধু সুন্দর ১৮৯৯ সালে এই শ্রীধাম শ্রী অঙ্গন প্রতিষ্ঠা করেন। এই আশ্রমটি বাংলাদেশের হিন্দু মহানাম সম্প্রদায়ের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
২১ এপ্রিল ১৯৭১ সালে ফরিদপুরের শ্রীধাম শ্রী অঙ্গন আশ্রমে ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের জঘন্যতম নারকীয় গণহত্যার একটি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৮ জন ব্রহ্মচারীকে ধর্মীয় প্রার্থনা করার সময় হত্যা করে এবং ওই সময় আশ্রমটিতে ব্যাপক ধ্বংস লীলা চালায়।
ফরিদপুর শহরের শ্রীধাম শ্রী অঙ্গনে সেদিন (২১ এপ্রিল ১৯৭১) পাকিস্তানি সেনারা ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছিলেন- কীর্তনব্রত ব্রহ্মচারী, নিদানবন্ধু ব্রহ্মচারী, কানাইবন্ধু ব্রহ্মচারী, বন্ধুদাস ব্রহ্মচারী, ক্ষিতিবন্ধু ব্রহ্মচারী, গৌরবন্ধু ব্রহ্মচারী, চিরবন্ধু ব্রহ্মচারী ও রবিবন্ধু ব্রহ্মচারী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহানাম সম্প্রদায় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রী অঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক ড. নিকুঞ্জবন্ধু ব্রহ্মচারী জানান, ফরিদপুরের শ্রীধাম শ্রী অঙ্গন বিশ্ববাসীর কাছে একটি নন্দিত তীর্থ স্থান হিসেবে সুপরিচিত। এই ফরিদপুর শ্রী অঙ্গনে ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল একাদশী তিথিতে ৭ই বৈশাখ সন্ধ্যায় পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালিয়ে ৮ জন ব্রহ্মচারীকে হত্যা করে। যারা হরিরাম কীর্তনরত অবস্থায় ছিলেন, যারা সংসার ত্যাগ করে এসেছিলেন। তাদের হয়তো অপরাধ একটাই ছিল যে, তারা কীর্তন করছিল ‘হরি হরি জগদ্বন্ধু’ বলে, আর পাক বাহিনী ভেবে নিয়েছিল ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলছে। যার কারণে, তাদের ব্রাশ ফায়ার করে অতি নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তান বাহিনী’।
ড. নিকুঞ্জবন্ধু ব্রহ্মচারী আরও জানান, ‘২০০১ সাথে ৬ ই এপ্রিল তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান বরাবর বাংলাদেশ মহানাম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয় এই মর্মে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালে ধর্ম পালনরত অবস্থায় আটজন ধার্মিক (মহানাম সম্প্রদায়ের ব্রহ্মচারী) কে পাকিস্তান বাহিনী হত্যা করে। বিশ্বে ধর্ম পালন অবস্থায় কোন যুদ্ধে এমন হত্যার নজির নেই দাবী করে ‘২১ এপ্রিল’ তারিখ টিকে ‘আন্তর্জাতিক ধর্ম দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। কিন্তু ওই চিঠির উত্তরে জাতি সংঘ জানায়, আগে এই সম্পর্কে নিজের দেশের স্বীকৃতি প্রয়োজন’। কিন্তু তৎ কালীন বিএনপি-জামাত সরকার এই স্বীকৃতি দেয়নি দাবি করে নিকুঞ্জবন্ধু ব্রহ্মচারী আরও বলেন, ”বর্তমান সরকার স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার। স্বাধীনতা যুদ্ধে শ্রী অঙ্গনের আট সাধু’র রক্তস্নাত ‘২১ এপ্রিল’কে যেন ‘আন্তর্জাতিক ধর্ম দিবস’ হিসেবে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়, এবং এই স্বীকৃতি আনতে বর্তমান সরকার যেন রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেই দাবি জানাচ্ছি’।
এদিকে, জগৎবন্ধু সুন্দরের ১৫৪তম শুভ আবির্ভাব উৎসবের লোক সমাগমের কথা মাথায় রেখে ও অনুষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রী অঙ্গনে প্রয়োজনীয় সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এছাড়া, উৎসবটিতে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সেবায় ফরিদপুরের শ্রীধাম শ্রী অঙ্গনে বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন ও কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যাদেরকে দর্শনার্থীদের মাঝে মিষ্টি, বিশুদ্ধ পানি ও সরবত বিতরণ করতে দেখা গেছে। তাছাড়া, উৎসবটিতে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ঘিরে ফরিদপুর শ্রী অঙ্গনের ভিতর বাহির ও শ্রীঅঙ্গের বিপরীতে (মহিম ইনস্টিটিউটের মাঠে) বসেছে বিভিন্ন রকমারি পণ্য ও বিনোদন সামগ্রী নিয়ে বসেছে মেলা। মটর সাইকেল ও গাড়ী পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উৎসবটির শেষ সময় হওয়ায় শ্রীধাম শ্রী অঙ্গনে জগদ্বন্ধু’র ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।