গোত্রান্তরের অজুহাতে কন্যাকে বঞ্চিত করা ,কতটুকু যৌক্তিক ?

হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কার আন্দোলন মাঠে আসার পর বিরোধীদের কাছ থেকে খুব বেশি করে শুনি যে শব্দগুলো তার মধ্যে অন্যতম একটি শব্দ গোত্র ,গোত্রান্তর বা গোত্র পরিবর্তন ۔মেয়েদের যখন বিয়ে হয়ে যায় তখন তার গোত্র ও পরিবর্তন হয়ে যায় ۔মেয়েরা যখন এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি চলে যায় ,সাথে সাথে তার নিজের গোত্র বাপের বাড়িতে খুলে রেখে যায় ۔তার গোত্র মিনিটেই পরিবর্তন হয়ে যায় ۔আসলেই কি এটা সম্ভব ? গোত্র কি কাপড়ের মতো পরিবর্তনযোগ্য কোন বস্তু ? হিন্দু ধর্মের অলৌকিক ক্ষমতা মতে হয়তো বা সম্ভব(যদিও পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছুই নাই )কিন্তু বাস্তবে তা কখনো সম্ভব না ۔কেন না তার জন্য জানা প্রয়োজন গোত্র আসলে কি বা কি হিসাবে গোত্র নির্ধারণ হয় ۔

পূর্বকালের ঋষিগণ দেবকার্য, পিতৃকার্য, অতিথি সৎকার স্বরূপ দক্ষিণা হিসেবে গাভী প্রাপ্ত হতেন। এই সকল গাভীদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার শিষ্য ও সন্তানদের প্রতি অর্পিত হতো। বন্যপশুর আক্রমণ থেকে রক্ষা/ত্রাণ করার জন্য ঋষিগণ স্ব স্ব আশ্রমের নিকট একটি ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে নিয়ে তাতে গোচারণ করতেন।সেই গোচারণ ক্ষেত্রকেই গোত্র বলে। কালক্রমে বিভিন্ন ঋষির জন্য গোচারণ ক্ষেত্র নির্দিষ্ট হওয়ায় সেই সমস্ত ঋষিদের নাম অনুসারে সেই গোচারণ ক্ষেত্র বা গোত্রের নামকরণ করা হয়। ঐ ঋষির সন্তান ও শিষ্যরা তাদের পরিচয় হিসেবে আমরা অমুক গোত্রভুক্ত বলে পরিচয় প্রকাশ করত। সুতরাং গোত্র হচ্ছে কোন ঋষি বংশ। বৃহদারণ্যক উপনিষদ অনুসারে পূর্বকালের সাতজন ঋষি হতে বংশ বিস্তার হতে থাকে। তাঁরা হলেন গৌতম, ভরদ্বাজ, বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি, বশিষ্ঠ, কাশ্যপ, সান্ডিল্য। কাউকে তার গোত্র কী এই প্রশ্ন করলে সে যদি উত্তর দেয় আমরা কাশ্যপ গোত্র, এর অর্থ হচ্ছে, সে কাশ্যপ ঋষির বংশ পরম্পরায় জন্মগ্রহণ করেছে। অর্থাৎ তার পিতৃপুরুষরা কাশ্যপ ঋষির বংশজাত।যদিও এতো হাজার বছর পরে আমরা কে কোন মুনি ঋষির বংশের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেছি তা সম্পূর্ণই কাল্পনিক ও অনুমান নির্ভর۔
এখন বংশ যেহেতু গোত্রের সাথে খুব ক্লোজলি জড়িত তারমানে বুঝা দরকার এখানে রক্তের সম্পর্ক জড়িত মানে DNA,ক্রোমোজম,সোজা বাংলায় আমরা সহজে বুঝার জন্য যাকে বলি রক্ত সম্পর্কিত ۔
আমরা জানি বংশগতির প্রধান উপাদান হলো ক্রোমোসোম ۔এর কাজ হলো মাতাপিতা থেকে জীন সন্তান সন্ততিতে বহন করা ۔যে ৪৬ টি ক্রোমোজোম আমরা বহন করি এর মধ্যে 2 টি সেক্স ক্রোমোজোম যা আমাদের বংশ টিকিয়ে রাখে ,ছেলেদের XY আর মেয়েদের XX. অর্থাৎ ছেলে হোক বা মেয়ে হোক বাবা মায়ের শরীর এর রক্ত মেয়ের শরীরে থাকবেই ওটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই ۔তাই যদি হয় মেয়ের গোত্র কখনো বাবার গোত্রের বাইরে হতে পারে না ,কারণ বাবার শরীরের একটা X ক্রোমোজোম পেয়েছে বলেই সে আজ মেয়ে হতে পেরেছে ۔যতক্ষন ওই মেয়ে মরে যাবে না বাবার শরীরের রক্ত ওই মেয়ের শরীরে বহমান থাকবেই ۔রক্ত ,বংশের চিহ্ন পাল্টাবে কিভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গেলে ,এক পদবি ছেড়ে অন্য পদবি লিখলে ?
তাহলে গোত্রান্তরের কারণে মেয়েরা অন্য গোত্রে চলে যাওয়ায় সে আর বাবার সম্পত্তি পাবে না বলে মুখে ফেনা তুলেন যারা আপনারা কি পারবেন ওই মেয়ের DNA পরিবর্তন করতে ,বাবার চিহ্ন শরীর থেকে নিয়ে ফেলতে ?
সব আসলে ধর্মের নামে নারীদের অধীনস্ত রাখার ,ওদেরকে ঠকানোর কৌশল ,আর কিছু না ۔

ধরেই নিলাম গোত্র পরিবর্তন হলে সে আর বাবার দিকের কিছু পাবে না ,কিন্তু প্রতিনিয়ত দেখছি একই গোত্র জাত বিবাহ ,যেমন۔۔ আমাদের দেশে প্রচুর পরিমানে কাশ্যপ গোত্র বিদ্যমান ۔এমন প্রায়ই হয় ছেলে মেয়ের দুজনের গোত্রই কাশ্যপ গোত্র ,এক্ষেত্রে যেহেতো গোত্র পরিবর্তন হচ্ছে না তাহলে কি সে মেয়ে বাবার দিকের সম্পত্তি পাবে ?
আসলে সব ধরণের ছুতো খুজার একটাই কারণ মেয়েদের কে কিছু না দেয়া যা ধর্মই ওদের শিখিয়ে দিচ্ছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ۔সেই দিন এর অবসান হোক ,নারীরা তাদের ন্যায্য টা ফিরে পাক ,হিন্দু আইন সংস্কার হোক ۔
হিন্দু আইন সংস্কার চাই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_img
spot_img

বাছাইকৃত

বিশেষ নিবন্ধ