এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়۔
কবি হেলাল হাফিজের কাল জয়ী কবিতার দুটো লাইন ۔
কোন পরিবার ,সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের যে কোন পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকে তরুণ দের ۔ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন ,মুক্তিযুদ্ধ, নব্বই এর গণ অভ্যুথান কিংবা শাহবাগ এর গণ জাগরণ মঞ্চ সব জায়গায় তরুণরাই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ۔তবে প্রত্যেকটা আন্দোলনেই পথ প্রদর্শক হয়ে আলো দেখিয়েছে প্রবীণ রা ۔তাদের অভিজ্ঞতা, চিন্তা,সাহস,সঠিক দিক নির্দেশনা তরুণদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে , জয়ী হতে সাহায্য করেছে ۔
বর্তমান হিন্দু সমাজ ব্যবস্থায় যে বৈষম্যগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসতেছে বিশেষত নারীদের প্রতি অবিচার,অধিকারহীনতা, সে সমস্যাগুলো সমাধান এর জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়ে যেমন কেউ এগিয়ে আসেনি তেমনি তরুণ কোন নেতৃত্বও ওভাবে সামনে এসে ভূমিকা রাখতে পারেনি ۔বর্তমানে ডক্টর ময়না তালুকদার ম্যাডাম ও সাংবাদিক পুলক ঘটক দাদার নেতৃত্বে এই বৈষম্য দূরীকরণে যেমন অনেক তরুণ/তরুণী একসাথে হয়ে সরাসরি বা নীরবে এই বৈষম্য নিরসন চাচ্ছে তেমনি অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গুণী ,সমাজের প্রতিষ্টিত প্রবীণ রা সেই তরুণদের দিক নির্দেশনা সাহস দিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে এই বৈষম্য দূরীকরণে ۔তাই আমার মনে হয় এখন ই শ্রেষ্ট সময় এই যুদ্ধে জয়ী হবার ,নারীদের কে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেবার ۔ একজন ছেলে হিসাবে একজন ভাই হিসাবে হিন্দু সমাজের সকল ভাইদের বলি এখনি সময় নিজের মা কে ,বোন কে ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দিয়ে দেবীর আসনে সম্মানিত করার ۔
তরুণ ছেলেদের পাশাপাশি এই লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পরিবারের অভিবাবক হিসাবে একজন পিতা۔কারণ ছেলে মেয়ে দুজন ই উনার রক্তে তৈরী ۔
আর প্রত্যেক টা পিতার কাছেই তার সন্তান হিসাবে ছেলে এবং মেয়ে একই গুরুত্ব পায় এটা তে কোন সন্দেহ নাই ۔সন্তান হিসাবে কোন বাবার পক্ষেই কাউকে আলাদা করে বেছে নেয়া সম্ভব না ۔তবুও ধর্মীয় বিধান ,সামাজিক রীতির জালে আটকা পড়ে সেই বাবাকেই আবার একজন কে বেঁচে নিতে হয় যার বলি হয় কন্যা রা ۔আমার মনে হয় না কোন বাবা কে সুযোগ দেয়া হলে উনি যে কোন একজন কে আলাদা করতে পারবে ? কারণ দুজন ই যে তার রক্তেই তৈরী !তবুও এতো দিন ধরে সেই কাজটাই করে আসছে ধর্মীয় কিছু বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে ۔যে সব বাবারা এতদিন সুযোগ খুঁজে ও অসহায় এর মতো ছিলেন ,মেয়েকে বঞ্চিত করে অজানা এক দ্বীর্ঘস্বাশ নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন সেই সব বাবাদের বলি এবার শেষ সময়ে এসে অন্তত আপনারা একটু নিরপেক্ষ হন ۔ছেলে মেয়ে কে একচোখে না দেখে সমান ভাবে দেখুন ۔আপনাদের কারণে আমাদের প্রজন্ম পর্যন্ত যে অবিচার করেছি কন্যা মা বোনদের সাথে ,সে দ্বায় কিছুটা হলে ও ঘুচান নারীর অধিকার আদায় এর প্রতি সমর্থন দিয়ে ۔ পরিবারের প্রধান আপনি ,আপনারা পিতারা চাইলে একটা পরিবারের ,একটা সমাজের অনেক কিছুই বদলে যেতে বাধ্য ۔ আপনারা পিতারা চলে যাবার(মৃত্যুর ) পর ও সেই পরিবার এর মা আরো অনেক বছর বেঁচে থাকে সাধারণ নিয়মে ,আপনি কি কখনো ভেবেছেন আপনি যাবার পর আপনার স্ত্রী কতটুকু অসহায় হয়ে যাবে ? একটা প্যারাসিটামল কিনতে গেলেও তখন অসহায় হয়ে চেয়ে থাকতে হবে ছেলে বা ছেলের বউ এর দিকে ,(আমি সব ছেলে বা ছেলের বউ কে খারাপ অর্থে বুঝাই নি,শুধু এরকম যে ঘটে ওই অর্থে বুঝানো ) হয়তো অনেক সময় সংকোচে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস ও চাইতে পারবে না۔কারণ স্ত্রীরা জানে আপনারা উনাদের কে ভরণ পোষণ এর নাম করে শুধু দীর্ঘশ্বাস ই উপহার দিয়ে গেছেন ۔ কিন্তু যদি পূর্ণ অধিকার টা দিতেন তাহলে উনাদের মনোবল অনেক শক্ত থাকতো ,মনে সাহস পেতো যে আমার স্বামীর খেয়েই আমি বেঁচে আছি ,কেউ অসহায় দুর্বল ভেবে আমাকে বঞ্চিত করতে পারবে না ۔আপনি হয়তো তখন দেখবেন না আপনার স্ত্রীর ,কন্যার দীর্ঘশ্বাস ,নিজের অজান্তেই মনে মনে বের হয়ে আসা আপনার প্রতি উনাদের অনিচ্ছাকৃত অভিশাপ !!!
স্ত্রী , কন্যার অসহায়ত্ব,দীর্ঘশ্বাস এর বিপরীতে শুধু ছেলের দেয়া বছরে একটা পিন্ড নিয়ে আপনি কতটুকু ভালো থাকবেন ঐপারে ?
তাই আমাদের প্রজন্ম কে একটু সহযোগিতা করুন আপনাদের সমর্থন দিয়ে ۔ আমরা আমাদের মা কে বোন কে বঞ্চিত হতে দেখে মনে মনে দ্বীর্ঘস্বাস ফেলতে দেখলেও যাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা তাদের মা ,বাবা কে অভিশাপ দিতে না পারে ,ওরা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকার টা পায় এই কাজটুকু অন্তত করে যেতে চাই ۔হয়তো ইচ্ছা কিংবা সামাজিক ধর্মীয় রক্তচোখ আপনাকে একটু দ্বিধান্বিত করবে তারপর ও কবির আরো দুইটা লাইন (অবশ্য আসতে হয় মাঝে মাঝে ,অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে ) এর মতোই বলি বিবেকের তাড়নায় হলে ও আপনারা তরুণদের কে সঠিক দিক নির্দেশনা ,অনুপ্রেরণা ,সাহস দিয়ে পাশে থাকুন আপনাদের ই স্ত্রীর কন্যার ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দেয়ার আন্দোলনে ۔
জয় হোক মানবতার ,হিন্দু নারীর সমঅধিকার নিশ্চিতে পাশে থাকুন হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ এর ۔